The Super Mario Effect

কয়েকদিন আগে ড. গৌতম চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন বাংলাদেশের খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নন-প্রফিট প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রামের একটি লাইভ অনুষ্ঠানে, এই অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিলো, ‘Roadmap to NASA: Guideline Towards A Dream’। ড. গৌতম চট্টোপাধ্যায় NASA এর জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি, ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিউট অফ টেকনোলজি’ র একজন সিনিয়র সায়েন্টিস্ট। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি’ র পদার্থ বিজ্ঞান, গণিত এবং এস্ট্রোনমি ডিভিশনের একজন ভিজিটিং প্রফেসর। তাছাড়া তিনি ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স, ব্যাঙ্গালোর এর একজন BEL ডিস্টিংগুইশড ভিজিটিং চেয়ার প্রফেসর এবং ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি, খড়গপুরের একজন এডজাঙ্কট প্রফেসর। স্যারের পরিচয় লিখতে লিখতে হাঁপিয়ে গেলাম।

ড. গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন তাঁর বেড়ে ওঠার কথা, তাঁর জীবন সংগ্রামের কথা। তাঁর দাদা দাদী ছিলেন বাংলাদেশের, তিনি তাঁর পাঁচ ভাইবোন ও বাবা মা সহ কলকাতাতে চলে যান ছোটবেলায়। মোটামুটি উদ্বাস্তু অবস্থায় তারা কলকাতা যান। কলকাতার একটি ছোট গ্রামে, ১২ বাই ১৪ ফুটের একটি বাসায় ছিলো তাদের বসবাস। দুইবেলা ঠিকমতো খাবার জোটেনি তাদের। কিন্তু এতো কষ্টে থেকেও তিনি একটা জিনিস করেছেন। তা হলো NASA  তে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা। জীবনে যতোই কষ্টের সম্মুখীন হন না কেন তিনি কখনো এই স্বপ্ন দেখা ছাড়েন নি এবং এই স্বপ্ন পূরণের জন্য চেষ্টা করে গেছেন এবং আজ তাঁর অবস্থান আমরা সকলেই জানি।

এতো কথা ড. গৌতম চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন বললাম, আর শিরোনামের সাথে এর সম্পর্ক কি? সে কথাতেই আসছি। ‘Super Mario’ ভিডিও গেইমের কথা আশা করি সকলেরই মনে আছে, যেখানে Mario, প্রিন্সেস Peach কে উদ্ধার করতে বিভিন্ন বাঁধা বিপত্তিকে এড়িয়ে প্রিন্সেস এর কাছে পৌঁছায়। মনে হচ্ছে, কোন বাংলা সিনেমার কাহিনী বলছি। যাইহোক, এই গেইম খেলার সময় বেশ বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়, এবং উপরের লেভেলগুলোতে যাওয়ার সাথে  সাথে জটিলতাও বাড়তে থাকে। এখন এই গেইমটি জেতার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে যদি আপনি এই গেইমের বাঁধাগুলোর কথা চিন্তা না করে শুধুমাত্র প্রিন্সেসকে বাঁচানোর চিন্তা করেন। অনেকে বলবেন যে, এই গেইম এ তো প্রিন্সেসকে বাঁচানোই টার্গেট, তাহলে আমি আবার কি বলছি এসব। হ্যা ঠিক, প্রিন্সেস কে বাঁচানোই টার্গেট, কিন্তু আমরা বেশিরভাগ সময়ে যেটা করি তা হলো, প্রিন্সেস কে বাঁচানোর পথে যে বাঁধাগুলো আসে সেগুলোর উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলি এবং ফলাফল হিসেবে ব্যাপারগুলো খুব জটিল মনে হয় ও সফলতা পাবার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়। একেই সুপার মারিও ইফেক্ট বলে।

আরেকটু ভালোভাবে বলি- ধরুন আপনি একটা কিছু করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। খুব ছোট একটা কাজের কথাই বলি, ধরুন আপনি আজকে ভাবলেন মুরগি রান্না করবেন। খুব সহজ ব্যাপার, আর এই করোনার সময়ে আমার মনে হয় সকলেই কম বেশি রাঁধতে শিখেও গেছেন। আচ্ছা, মুরগি রান্নার জন্য প্রথমত মুরগি দরকার, মুরগি ধরে নিলাম বাসায় আছে। কিন্তু রান্না করার আগে দেখলেন বাসায় পেঁয়াজ শেষ, মরিচ শেষ, আদাবাটা, রসুনবাটাও নেই। এখন কি করবেন? মুরগি রান্না করবেনই না একটা উপায় হতে পারে, করোনাকালীন সময়ে এমন চিন্তা ভাবনা অস্বাভাবিক কিছু না। অথবা আপনি চিন্তা করতে পারেন যে, আপনি আজকে মুরগি রাঁধবেনই, আর যাই হোক না কেন। সেজন্য আপনি বাজার থেকে পেঁয়াজ, মরিচ কিনে আনবেন, আদা ও রসুন বেটে নিবেন এবং শেষমেশ মুরগিটা রান্না করে ফেলবেন। এই যে, আপনি একটা টার্গেট সেট করে নিলেন এবং এর মাঝের সকল বাঁধাগুলো একরকম অতিক্রম করে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে গেলেন- একেই আমরা সুপার মারিও ইফেক্ট বলতে পারি।

এখন বুঝতে পারছেন তো কেন ড. গৌতম চট্টোপাধ্যায় এর কথা বললাম? জীবনের সকল বাঁধাকে অতিক্রম করে তাঁর লক্ষ্যে তিনি পৌঁছে গেছেন, শুধুমাত্র তাঁর লক্ষ্য স্থির ছিলো তাই। তিনি অবশ্যই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আমাদের প্রত্যেকেরই জীবনে একটা লক্ষ্য থাকে, এই লক্ষ্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমরা চেষ্টা করি। এই চেষ্টা করতে করতে অনেক সময় আমরা খুব হতাশ হয়ে যাই, হাঁপিয়ে উঠি, কারণ হয়ত আমরা এই বাঁধাগুলোকে খুব বড় করে দেখি। হয়ত লক্ষ্যের চেয়ে এই বাঁধাগুলোই আমাদের কাছে বড় হয়ে ওঠে, যেই কারণে আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে পরি। আর হয়ত এই করোনাকালীন সময়ে জীবন আরেকটু কঠিন হয়ে গেল। কিন্তু তারপরও আমাদের উচিত আমাদের লক্ষ্য ঠিক রাখা, আমাদের স্বপ্নের জন্য এগিয়ে যাওয়া। তাই ড. গৌতম চট্টোপাধ্যায় এর একটি কথা দিয়ে শেষ করব-

‘It doesn’t cost anything to dream.’

নাফিসা রায়হানা
Author: নাফিসা রায়হানা

Be less curious about people and more curious about ideas-- Marie Curie.

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/nafisa-raihana/5094/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

মন্তব্য করুন