”আগে পিঠা খাব, তারপর টাইম পাইলে কথাবার্তা বলব”
এই নীতির উপর আস্থা রেখে আমি ও আমার সমমনা-বিরুদ্ধমনা ছেলে-বুড়ো, আন্ডা-বাচ্চারা হাজির হয়েছিলাম সাইন্স লাইব্রেরির বারান্দায়। কিন্তু পিঠা খাওয়ানোর নামে ডেকে এনে আরিফিন ভাই ভাই নিজেই ভেগে যাওয়ায় অগত্যা পিঠা না খেয়েই আমরা আড্ডা শুরু করতে বাধ্য হই। তবে শুরুতেই বলে রাখি এই ফ্রার্স্ট ইয়ারের পোলাপানগুলারে যত দেখতেসি, ততই ভাল লাগতেছে। যেকোনো কাজে এরা প্রচণ্ড ইচ্ছা আর আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসে, পোলাপানগুলারে দেখলে তাই মন থেকে শ্রদ্ধা আসে। আর বড় ভাইরা তো শুরু থেকেই লেগে আছেন। অগণিত বর্গাচাষি বিশেষ করে নারী বর্গাচাষিদের উপস্থিতিতে (পড়ুন কিচির-মিচিরে) লাইব্রেরির বারান্দার ঠাই নাই ঠাই নাই অবস্থা, তবে তা পিঠা খাওয়ার লোভে না আড্ডার লোভে তা কিন্তু গবেষণার ব্যাপার। আড্ডা ছিল প্রাণবন্ত। এর মধ্যেই কিছু ব্যাপারে বিজ্ঞ (!) আলোচকেরা একমত পোষণ করেন-
ব্যাপার ১#
নতুন প্রথম বর্ষের ছোটভাই-আপুরা ডিপার্টমেন্টে এসেই যেন বর্গমূলের কনসেপ্টটা ভাল করে বুঝতে পারে বা তাদেরকে কিভাবে বর্গমূলে স্বাগত জানানো যায়।
দ্বিতীয় বর্ষের ছোট ভাই-আপুরা জানায় তারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে নতুন জুনিয়রদের সাথে কথা বলবে। সিনিয়র হওয়ার এই সুযোগ নাকি তারা হারাতে চায় না! তাছাড়া
- ক্লাস পার্টি
- বর্গমূলের উদ্যোগে অনলাইন কুইজ কম্পিটিশন
- অফ পিরিয়ডে একত্রিত হয়ে কথা বলা
এই চিন্তা- ভাবনা তাদের মাথা থেকেই বের হয়ে আসে। এই উদ্যোগগুলো নিয়ে সোহান, রাফি, বার্লিন আর ধ্রুবর বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। তবে আগ্রহের কারন জানতে চাওয়া হলে তারা মুচকি হাসেন !
ব্যাপার ২#
পূর্বের আড্ডায় বিভিন্ন বর্ষের ফাইনাল, ইন-কোর্স পরীক্ষার বিগত বছরের প্রশ্নব্যাংক তৈরি করা নিয়ে সবাই একমত হয়েছিল। কিন্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়ী ব্যক্তির গাফিলতির কারনে প্রশ্নব্যাংক তৈরির দায়দায়িত্ব ধ্রুব আর সোহানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নতুন প্রথম বর্ষের পোলাপান আসার আগেই প্রশ্নব্যাংক তৈরির কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ব্যাপার ৩#
খালি প্রথম বর্ষ নিয়ে কথাবার্তা বলায় ইয়ারলেস গালিব ভাই (ভাই রাগ কইরেন না) আর চতুর্থ বর্ষের রফিক মহা বিরক্তি বোধ করেন এবং তাদের জ্ঞানগর্ভ কথায় আড্ডার সবাইকে ধুয়ে দেন। আড্ডার এই পর্যায়ে দুটি প্রস্তাব করা হয়-
- রিসার্চ পেপার রিভিউ- রিসার্চ পেপার কি? কেমনে লেখে? কারা লেখে? কে পড়ে? কেন পড়ে? লিখলে কি হয়? এইসব প্রশ্নের উত্তরের সাথে বর্গাচাষিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
- প্রোজেক্ট পেপার রিভিউ- চতুর্থ বর্ষের প্রোজেক্ট পেপারগুলো সবার জন্য পড়া বা দেখার ব্যবস্থা করা।
এর মাঝখানেই আরিফিন ভাইকে পিঠা ওয়ালা সহ অজ্ঞাতস্থান থেকে আটক করে আনা হয়। তারপরই শুরু হয় আসল কাজ, মানে পিঠা খাওয়া। সকলের ভাগ্যে পিঠা ( কেউ দুটি করেও খেয়েছে) জুটলেও লেখকের ভাগ্যে একটি পিঠাও জোটেনি। হাতে কলম নিয়ে দুঃখের সাথে অন্যদের খাওয়া দেখতে হয়েছে।
ব্যাপার ৪#
বর্গমূলের ওপেন প্রোজেক্ট ঘুড়ি ওড়ানো গেম নিয়ে আড্ডায় তুমুল আগ্রহ দেখা যায়। এক পর্যায়ে গেমের ব্যাপারে গালিব ভাই, মেহেদি ভাই, জুলফিকার ভাই আর রেজা ভাই ”হিব্রু ভাষা”য় নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন যা সবার (পড়ুন লেখকের) মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। তবে টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো সমন্বয়ের জন্য চারটি দল ঠিক করা হয়-
- ফটোগ্রাফি – ধ্রব, নাফিসা,সোহান
- থ্রিডি মডেলিং- বার্লিন, নাফিসা,রাফি, সোহান, সালাইকা
- ছবি আঁকা-নাফিসা, সালাইকা
- প্রোগ্রামিং- সবাই
এইটা ওপেন প্রোজেক্ট, তাই যে যখন এভাবে সময় পায় এবং যেভাবে ইচ্ছা করে সেভাবেই কাজ করার জন্য আহব্বান জানানো হয়। আর সাহায্য করার জন্য মেহেদি ভাই, জুলফিকার ভাই, গালিব ভাইয়েরা তো আছেই।
(যদি কারও নাম বাদ পড়ে তাহলে কষ্ট করে একটু জানাও)
গেমের ব্যাপারে সুবিধাজনক সময়ে ওয়ার্কশপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গেম সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাপারে সব্যসাচী গালিব ভাই সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করবেন।
মোটামুটি এই ছিল আজকের আড্ডা/সভার বিষয়গুলো। তবে আড্ডার সবচেয়ে মজার সময় ছিল জসিমের দেওয়া সেকেন্ড ইয়ারের পড়ালেখার ব্রিফিং।তারই মুখে শুনুন-
কনভারজেন্স আর ডাইভারজেন্স মিলাইলেই রিয়েল এনালাইসিস। স্যার < দেখলেই খুশি হয়!
লেকচার পড়বা। আগের বছরের প্রশ্ন নিয়ে বেশি গুতাগুতি করবা না।………………………
সেকেন্ড ইয়ারের পড়ালেখার এমন মজাদার বর্ণনা মনে হয় আর কেউ দিতে পারবে না। যাই হোক পিঠাময় সন্ধ্যা আস্তে আস্তে পিঠাময় রাতে রূপ নিলে বিদায় নেওয়ার সময় এসে যায়। বর্গাচাষিদের এই আড্ডার কাছে লাইব্রেরিবাসি ছিল অসহায়। তাদেরই একজন আড্ডায় যোগ দিতে না পেরে ক্ষমা চেয়ে চিঠিও লিখেছেন যা এই মুহূর্তে লেখকের হাতে রয়েছে ! আড্ডায় সাকিব ভাই, রাকিব ভাইদের মত সিনিয়রদের উপস্থিতি,মন দিয়ে সবার মতামত শোনা-সর্বোপরি মজাদার এই আড্ডা ছিল বর্গাচাষিদের মিলনমেলা। সামনের মিলনমেলায় আমন্ত্রিত অগণিত বর্গাচাষিদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি।
পুনশ্চঃ এই আড্ডায় জুনিয়রদের সাথে মজা নেওয়ার জন্য লেখক ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা প্রার্থী।
6 comments
Skip to comment form
আরিফিন ভাই তোর পিঠা মাইরা দিছে। এই লোকটারে মিটিং এর চেয়ে পিঠাওয়ালার কাছাকাছি ঘুরতে দেখা গেছে বেশী।
Author
লোকটা খুব খারাপ
সহমত পোষণ করছি এ ব্যাপারে। সে এত খায় ক্যা? 🙁
পিঠাগুলো (আমার আশেপাশে কেউ খাইতেছিলো না দেখে বাধ্য হয়ে ২টা খাইছি ! 😉 ) ভালোই মজাদার ছিলো!
মিটিংয়ে উপস্থিতি দেখে ভালো লাগছে। আশা করি দিনকে দিন অ্যাকটিভ বর্গাচাষীর সংখ্যা আরও বাড়বে!
আমার আর শ্রদ্ধেয় গালিব ভাইয়ের ব্যাপারে বলা হয়েছে আমরা নাকি বিরক্তিভরা ভাবে সবাইকে ধুয়ে সাফ করে দিয়েছি। ইহা সর্বৈব মিত্যা , বানোয়াট এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত। আমরা ইহার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। অন্তত আমি ১০০% ইঞ্জয় করে পিঠা খাচ্ছিলাম। 😀
পিঠার হিসাব জুনায়েদ ভাল দিতে পারবে 😀