বসন্তের সেদিনঃ ২য় পর্ব (ফ্ল্যাশ ব্যাক)

পড়ন্ত বিকেলে বৃদ্ধ লাল রঙ্গা সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে । হালকা কুয়াশা গোধুলির আগমনী বার্তা পৌছে দিচ্ছে । দিগন্ত জোড়া লাল রঙের আভায় পশ্চিম আকাশ ছেয়ে গেছে ।শীতের ঝিরি ঝিরি উত্তরে বাতাসে রক্তিম একা ছাদে হাটা হাটি করছে । তাদের বিল্ডিং এর সামনে স্টাফ কোয়ার্টারের ছাদেও কেউ নেই । গরমের দিনে ঢাকা শহরে অনেকেই বিকেল বেলা ছাদে সময় কাটায় ।বড়লোকের মেয়েরা কানে হেডফোন আর কোলে  পান্ডা পুতুল নিয়ে ছাদে দোলনাতে দোল খায় ।বিনামূল্যে এরকম মনোরম দৃশ্য দেখার লোভে পাশের বিল্ডিংএ ছেলে ছোকরারা ভীর জমায় । কিন্তু শীতকালে ঐ মেয়েগুলো দোল খেতে খুব একটা পছন্দ করে না । তাই বোধয় বিল্ডিংএর ছাদ গুলো ফাকা থাকে । আর কেউ থাকুক আর নাই থাকুক রক্তিমের একা একা ছাদে হাটতে ভিষন ভালো লাগছে । মনে মনে আনন্দের সীমা নেই । বিষন্ন বিকেলেও তার ফুরফুরে মেজাজ । ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরেছে দেড়টার দিকে ।প্রতিদিনের অভ্যাসমত দুপুরে খাবার পর ঘুমোতে চেষ্টাও করেছিল কিন্তু পারেনি । চোখ বন্ধ করলেই শিমুর কথা মনে হচ্ছিল । কিছুক্ষন পরপরই অকারণে হাসি পাচ্ছিল । রুমের ভিতরটা বদ্ধ মনে হওয়ায় এই শীতের মধ্যে ছাদে হাটাহটি । আনমনে হাটছে আর শিমুর কথা ভাবছে । শিমুকে প্রথম দেখেছিল, ইউসিসি কোচিং সেন্টার ফার্মগেটে । আর সবার মত, সে নিজেও ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রশিক্ষনে ব্যাস্ত ।ইউসিসির ৭ তলা ভবনের ৩য় তলা থেকে ৭ম তলা পর্যন্ত কোচিং ক্লাস। তৃতীয় তলা থেকে বিশাল সিঁড়ি বিল্ডিং এর বাইরে দিয়ে নিচ পর্যন্ত নামিয়ে দেওয়া । এক ব্যাচের ক্লাস চলাকালীন সময়ে অন্য ব্যাচের ছেলে মেয়েরা নিচে অপেক্ষা করে ।কোন একদিন কোচিং ক্লাস শেষ করে রক্তিম সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছে । এসময় নিচের দিকে চোখ পড়তেই হঠাৎ চলন গতি স্লথ হয়ে যায় । সাদা সালোয়ার কামিজ পরিহিত এক ললনা । এলোমেলো বাতাস ক্ষনিক পর পরই কালো রেশমি চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে ।মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরাতেই চোখে চোখ পড়ে । সেকি রুপ ! টানা টানা চোখ তাতে কাজল দেওয়া । সাদা শুভ্র বরফের মত তার গায়ের রঙ । মুখ খানা যেন সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে বানিয়েছেন । এক কথায় অপরুপ । সদ্য প্রস্ফুটিত ফুল বললেও ভুল হবে না । আবার মনে হলো ডানা কাটা পরী । পাখা বিহীন হয়ে মানুষরুপে তার সামনে এসেছে । এমন সুন্দর মেয়ে যে জন্মের পর এই প্রথম দেখলো ব্যাপার টা তা নয় । চলতে ফিরতে এরকম অনেক সুন্দরী মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে । সবচেয়ে অদ্ভুত হলো মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে । এখানেই খটকা লাগে রক্তিমের । এতদিন জানত, কেবল ছেলেরাই মেয়েদের দিকে তাকায় । মেয়েরা তাকালেও ঘটনাক্রমে চোখ পড়ে অথবা ভূল করে তাকায় । সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাশ একটা ছেলে কতটুকুনই বা জানে । সে জানে না, মেয়েরাও ছেলেদের দেখে। প্রকৃতিগত ভাবেই পুরুষ নারীর প্রতি আর নারী পুরুষের প্রতি দূর্বল । ছেলেদের প্রকাশভঙ্গি এক রকম মেয়েদের অন্যরকম। লজ্জা নামক এক অদৃশ্য অনুভুতি তীব্রতা মেয়েদের মাঝে একটু বেশিই থাকে । কোন এক দুষ্ট বন্ধুর কাছে শুনেছিল, যদি কোন মেয়ে তোর দিকে তাকিয়ে হাসে তাহলে বুঝবি তোর জামার বোতাম উলটা পালটা লাগানো অথবা প্যান্টের চেইন খোলা । রক্তিমের গায়ে লাল টি-শার্ট । সুতরাং বোতাম খোলা থাকার কোন প্রশ্নই আসে না । টেকনিক্যালি দ্বিতীয় কারণটিও যাচাই করে নিল । সেটাও তো ঠিক আছে । তবে হাসছে কেন ? বোকার মত আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসে । রক্তিমের এই নাজেহাল অবস্থা দেখে মেয়েটির হাসি আরো বেড়ে যায় । মেয়েটিও এগিয়ে আসে । এবার নিশ্চয়ই সে কথা বলবে । কিন্তু না, পাশ কাটিয়ে মেয়েটি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায় । মন মাতানো খুশবোর এক ঝাপটা এসে লাগে তার নাকে । মস্তিষ্কে তার অনুভুতি বেশ কিছুক্ষন ঘুরপাক করে । কলেজের বন্ধু শাফায়েতের ধাক্কায় সম্ভিত ফিরে আসে ।শাফায়েত এখানেও তার ক্লাসমেট । একই ব্যাচে তারা । এ সেই শাফায়েত, কলেজে যাকে নিয়ে বন্ধুরা হাসাহাসি করত । মাথায় চুল কম থাকলে কি হবে, জেল দিতে সে কখনোই ভূল করত না । প্যান্ট পরত একদম নিচে যার আর কোন সীমা নাই ।শার্ট ঝুলানোর হ্যাঙ্গারের ন্যায় কোমরের দুই পাশে পেলভিস নামে যে দুটি হাড় আছে, তাতেই তার প্যান্ট আটকে থাকত । বাংলার খাদিজা ম্যাডাম কয়েকবার তাকে টয়লেটে পাঠিয়েছে শুধু মাত্র প্যান্ট ঠিক করে পড়ে আসার জন্য ।যথেষ্ট রিস্কের মধ্যে সে কলেজ পার করেছে । কখন ম্যাডামের চোখে পড়ে যায় ।  শাফায়েত বলল

-দোস্ত এই মাত্র যে মেয়েটি উপরে উঠলো ওকে চিনিস?

-না তো । কে সে?

-আমার গার্লফ্রেন্ড ।

-তোর গার্লফ্রেন্ড মানে ?

-গার্লফ্রেন্ড মানে আমি তাকে পছন্দ করি । তবে তাকে সব খুলে বলা হয়নি ।

-বলা নেই কওয়া নেই তোর গার্লফ্রেন্ড হয়ে গেলো?

-আরে হয়নি তাতে কি। হয়ে যাবে । তুই একটু হেল্প কর না । আমাকে ওর সাথে কথা বলিয়ে দে।

-আমি!! কিভাবে সম্ভব?? না সে আমাকে চেনে না আমি তাকে চিনি ।অন্য কিছু পারলেও এই লেডিস ডিপার্টমেন্টে আমাকে ডাকিস না । আমি চললাম ।

বাসায় এসে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবে কি এমন কারণ আছে যে মেয়েটা আমাকে দেখে হাসতে পারে । তারপর আবার শাফায়েতের কথাও মনে হয়। মেয়েটিকে সে পছন্দ করে না কিন্তু তারপরো শাফায়েতের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায় । বারবার নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে আমি কেন মন খারাপ করছি । কিন্তু তার উত্তর খুজে পায় না । পরের দিন কোচিং এ শাফায়েতের মুখে শোনে সে নাকি ঐ মেয়ের পিছে পিছে প্রায় বাসা পর্যন্ত গিয়েছিল কিন্তু কথা বলার চান্স পায়নি ।  তবে আজ সে আবার চেষ্টা করে দেখবে । আজ আবার পিছু নেবে । শাফায়েতের কথা সে কানে নেয় না।পক্ষকাল ব্যাপী শাফায়েতের অক্লান্ত পরিশ্রম সাধনা সফল হতে হতে ব্যার্থ । আগে তো শুধু ফলোই করত কিন্তু কথা বলতে পারত না । কিন্তু এবার কথা হয়েছে ।দুঃখের বিষয় ফলাফল ব্যাক টু দ্যা প্যাভেলিয়ান। সে মেয়ে নাকি, তাকে ফলো করতে না করে দিয়েছে, এখন প্রেম-প্রীতি এসব নিয়ে কোন কিছুই ভাবছে না ইত্যাদি ইত্যাদি ।একথা শুনে রক্তিমের মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে । বেচারা শাফায়েতের প্রেম পূর্ণতা পেল না। বন্ধুর জন্য কিঞ্চিৎ খারাপ লাগলেও অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। রক্তিম যথারিতি ক্লাস করে বাসায় চলে আসে। পড়াশোনা করে, খায়-দায় ঘুমায় আর অজান্তে ঐ হাস্যোজ্জল মেয়ের কথা মনে পড়ে। এর মাঝে বেশ কয়েকবারই ঐ মানুষরুপী পরীর সাথে তার দেখা হয়েছে । আশ্চর্য হলেও সত্যি  প্রতিবারই সে পাগল করা হাসি দিয়ে হৃদয়ে ঝড় তুলে দিয়েছে ।যে হাসির রহস্য ভেদ করা রক্তিমের নিজের সাধ্য তো নেই-ই তার দাদারও নেই ।দাদার সাধ্য নেই কারণ তার দাদা বেচে নেই, আর রক্তিমের নেই কারণ নিজের সম্পর্কে তার যে ধারনা তাতে অতি সুন্দরী কোন মেয়ে পছন্দ করার কথা না ।রক্তিমের বর্ণনা দেওয়ার কিছু নেই, এক কথায় সুপুরষ । অনেকে ইংরেজী সিনেমা টাইটানিকের নায়ক লিওনার্দোর সাথেও মাঝে মাঝে তুলনা করে তৈল মর্দন করে ।৫ ফিট ৮ ইঞ্চি লম্বা । সুঠাম দেহ। চোখের রঙ কালো কিন্তু চুল জন্মগত ভাবেই মেহেদী রঙ্গা । গায়ের রঙ অত্যাধিক ফর্সাও না আবার কালোও না, প্রায় তামাটে বলা চলে। তবে জন্মের পর আতুর ঘরে সে নাকি দেখতে কার্পাস তুলার টুকরোর মত ছিল ।ঠোট দুটো ছিল জবা ফুলের মত টকটকে লাল । তাই নাহিদ মামা নাম দিয়েছিল রক্তিম। তবে এখন আর ঠোট অতটা লাল নেই। দুই একটা সিগারেট ফুকার কারণে স্বাভাবিক রঙ্গে ফিরে এসেছে । জন্মের পর তাকে দেখে কোলে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছে হয়নি এমন মানুষ নেই বললেও চলে । পুরুষ মানুষ এত সুন্দর হলেও ঝামেলা । অপেক্ষাকৃত কম সুন্দর বন্ধু-বান্ধবের অত্যাচারে অতিষ্ট থাকতে হয়। অনেকে আবার তর্কে জেতার জন্য মেয়ে মানুষ বলেও টিটকারি করে। হুমায়ুন আজাদ তার নারী প্রবন্ধে লিখেছেন, একজন পুরুষ মানুষ কে জানোয়ার, অমানুষ, চোর, লুইচ্চা, বদমাইশ, হারামি ইত্যাদি যত প্রকার খারাপ গালিই দাও না কেন তাতে যে দুঃখ পাবে, তাকে যদি মেয়ে মানুষ বলে গালি দাও তার থেকে বেশি দুঃখ পাবে। সব অপমান সহ্য করলেও পৌরুষ নিয়ে খোঁটা, সেটা তো মেনে নেওয়া যায় না। সৃষ্টিকর্তা নাকি সব কিছুতেই ভারসাম্য রাখেন। তাই সুন্দর ছেলেদের সাথে একটু কম সুন্দর মেয়েদের জোড়া তৈরী করেন আর বেশি সুন্দর মেয়েদের সাথে কম সুন্দর ছেলেদের জোড়া তৈরী করেন।  প্রথম কথাটা মানতে না পাড়লেও দ্বিতীয়টি কিছুটা মানে। অনেক সময় দেখা যায়, অতি সুন্দরী মেয়ের সাথে রোগা পটকা কালো ছেলে টাংকি মারছে। এ নিয়ে অনেকেরই ভিতরে ভিতরে জ্বলে। প্রেম-ভালোবাসা-সম্পর্ক এই বিষয় গুলোর সাথে চেহারার থেকে বড় ভূমিকা থাকা উচিত মনের। তবে চেহারার ভুমিকা প্রথমে আসে। কারণ প্রথমেই তো হৃদয় দেখা যায় না, দেখা যায় চেহারা । হৃদয় চিনত সময় লাগে ।যারা বাইরের রুপের চাকচিক্যে এই সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী তারাই চেহারায় অসামঞ্জস্য কোন জুটি দেখলে জ্বলে পুড়ে মরে।রক্তিমের ধারনা, সুন্দরী কোন মেয়ে তাকে পছন্দ করতে পারে না। বন্ধু বান্ধবের প্রভাবই হোক আর পারিপার্শ্বের প্রক্ষিতেই হোক, সে ধরেই নিয়েছে তার সাথে যার জুড়ি লিখা আছে সে হবে একটু কম সুন্দর। তাই তার এত গবেষনা কেন ঐ মেয়ে হাসলো।

 

অনেক দিন হলো শাফায়েতের কোন দেখা সাক্ষাত নেই । ফোনে জানতে পারল, ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার মত মন মানসিকতা এখন আর নাই। অলরেডি ইষ্ট ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে ।রঙ্গমঞ্চ থেকে এখানেই শাফায়েতের প্রস্থান। এরপর আর শাফায়েতের সাথে যোগাযোগ হয়নি। ভর্তি পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এসেছে । রক্তিমের দুশ্চিন্তাও বেড়ে গেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফর্ম সংগ্রহ করে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রথম পছন্দ । তবে মনে মনে একটা প্রার্থনা সে প্রতিদিনই করে, হে প্রভু আমাকে যেখানেই ভর্তি হওয়ার সুযোগ দাও না কেন, তাতে আমার সমস্যা নাই ঐ সুহাসিনীও যেন সেখানে থাকে । রেজাল্টের দিনে রক্তিমের মনে উৎকন্ঠার শেষ নেই। চান্স পাবে তো? সুহাসিনীও থাকবে তো? বিকাল থেকে কার্জনে ঘোরাঘুরি করছে। যদি তার দেখা পাওয়া যায়। দেখা হলে প্রথম যে প্রশ্নটি করবে তা হলো, তুমি আমাকে দেখলেই হাসো কেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন থাকবে চান্স পেয়েছো কি?মনের প্রশ্ন মনেই থাকলো। রেজাল্ট জানতে আসে নি সে। আসার দরকারই বা কি? অনলাইনের মাধ্যমে রেজাল্ট জানতে পারলে কেউ কি আর স্ব-শরীরে নোটীশ বোর্ডের সামনে দাঁড়ায় ।সন্ধার দিকে ফলাফল জানতে পারে। মন টা ভিষন খারাপ হয়ে যায়। আশানুরুপ ফল হয়নি। সিরিয়াল ১৫০১ ।

এত পড়াশোনা এত সংগ্রাম তার এই ফলাফল । আমাদের চলতি ধারার বাংলা সিনেমার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো নায়ক নায়িকা প্রেমে পড়ুক আর বিরহে কাঁদুক দুই ক্ষেত্রেই আবেগ ইমোশন ঢালে বিছানায়। উপুর হয়ে শুয়ে বালিশ জড়িয়ে রাখে । রক্তিমও তার ব্যাতিক্রম করেনি । বাসায় ফিরে বালিশ জড়িয়ে রীতিমত ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে চোখ লাল করে ফেলে । ছেলের দুঃখে সবচেয়ে ব্যাথিত হয় মা । মা নিজেও কাঁদো কাঁদো গলায় ছেলেকে শান্তনা দেয় । কাদিস না বাবা, এখানে  হয়নি তো কি হয়েছে । যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে না তারা কি মেধাবী না? তুই অন্য কোথাও চেষ্টা কর। সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই তোর জন্য ভালো কিছু রেখেছে । ধৈর্য ধর। ছেলের এই কাপুরুষসুলভ ভূমিকায় আর স্থির থাকতে পারে না নজরুল সাহেব।

-মেয়েদের মত এভাবে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিস কেন? সিরিয়াল ১৫০১ তাতে কি হয়েছে?

-না মানে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল প্রথম দিকের কোন সাবজেক্টে পড়ব ।

-স্বপ্ন কি শেষ হয়ে গেছে?

-ফলিত সাবজেক্ট পাব না। মনে হয় পিওর সাইন্সে পড়তে হবে ।

-মেধাবীরা কখনো থেমে থাকে না। তোর ভিতরে যদি কিছু থাকে তবে ত্যু যেখানেই হাত দিস সেখানেই সোনা ফলবে । তুই কি মাটি কাটার শ্রমিক সর্দার সম্পর্কে জানিস?

-না জানি না ।

-মাটি কাটার কাজে সবাই কে কাজ করতে হয়। কেউ কোদাল দিয়ে মাটি কাটে আবার কেউ মাথায় করে তা বহন করে। কিন্তু যে সর্দার তার কিন্তু এই শারিরীক কষ্টের কাজ করতে হয় না। বসে বসে ডিরেকশন দেয় আর ঠিকাদারী করে। অথচ পারিশ্রমিক ঐ শ্রমিকদের থেকে কম না।

– তাতে কি দাড়ালো?

-যেটা বোঝাতে চেয়েছি, তুমি যাই করো না কেন, তার সর্দার হতে চেষ্টা কর। তোমার সাফল্য আসবেই । মন খারাপ না করে নিয়তি মেনে নাও ।

বাবার কথায় কিছুটা মন শক্ত হয় । সপ্তা খানেক পর চয়েজ ফর্ম নেওয়ার দিন আবার ক্যাম্পাসে আসে রক্তিম। ঐদিনও আশে পাশে বভুক্ষের মত চারিদিকে খোজাখুজি করতে থাকে, কোথায় সেই সুহাসিনী? দেখা মিলে না। আশা ছেড়ে দেয় । আর বোধয় তার সাথে দেখাও হবে না তাকে জিজ্ঞেসও করা হবে না। সৃষ্টি কর্তা বোধয় তার কথা ভুলে গেছেন। মানুষের কত আশাই তো থাকে। তার ক’টাই বা পূরণ হয়? চয়েস ফর্ম জমা দেওয়ার দিনেও আশা করে সে আসবে । তার মন বলছিল দেখা আবার হবেই। অপেক্ষার প্রহর শেষ হবেই। বাবার পরামর্শে চয়েজ ফর্ম পূরণ করে সেদিন ক্যাম্পাসে চলে আসলো । কার্জনের গেটে ঢুকতে হাতের বাম পাশে দাঁড়িয়ে রক্তিম। মাঝখান দিয়ে কয়েকটি প্রাইভেট কার বের হয়ে আসছিল। তার অপর পাশেই সেই সুহাসিনী। হতচকিয়ে যায় সে। বুকের বামপাশ টা খুব বেশি পরিমানে কাপতে থাকে । অবস্থা এমন যেন হার্ট এটাক করবে । চৈত্রের ক্ষরতাপে শুষ্ক মাটি ফেটে চৌচির হওয়ার পর বৃষ্টির পানিতে যেমন নরম কাদায় পরিনত হয়, ঠিক তেমনি রক্তিমের হৃদয়ের সমস্ত কঠিন আবরণ গলে নরম হয়ে যায় । তার সাথে আজ অন্য মহিলা। গাড়ির কারণে মেয়েটি তাকে দেখেনি। গাড়ি চলে যাওয়ার পর ভাবে আজ কথা বললে কেমন হয়? আবার ভাবে সাথে কে না কে। দেখে বোঝার উপায় নেই মা নাকি বোন ।কথা বললে যদি কিছু মনে করে। এসব ভেবে আর কথা বলে না। খুশিতে লাফাতে লাফাতে চয়েজ ফর্ম জমা দেয়। কেমন জানি ভালো লাগা কাজ করে রক্তিমের মনে । চয়েজ ফর্ম তো জমা দেওয়া হলো । দুদিন বাদেই ক্লাস শুরু হবে। তাই ভাবলো কিছু কেনা কাটা করা দরকার। ক্যাম্পাস থেকে সোজা ফার্মগেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিল ।যদিও শপিং করার জন্য ফার্মগেট তেমন উপযোগী না কিন্তু সময় আর ধৈর্য্যের কারনে ফার্মগটই তার বর্তমান লক্ষ । সেজান পয়েন্টের দো-তলায় ছেলেদের কিছু কালেকশন আছে । সেখান থেকে কালো দুটি টি-শার্ট আর একটা প্যান্ট কেনে সে। চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে নামছে। হঠাৎ সে। নামার সিঁড়িতে রক্তিম অপর পাশে সুহাসিনী ।একই দিনে আবার দেখা । আবার সেই হৃদয়ে ঝড় তোলা হাসি । সে মেয়েটির দিকে তাকিয়েই থাকে। কখন যে সিঁড়ি নিচে নেমে এসেছে তার খেয়াল নেই । হোচট খেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় । এখানেও কথা বলতে সমস্যা । সাথে সেই কাবাব মে হাড্ডি । যত যাই হোক এখন তো আর হারিয়ে যাচ্ছে না ।একই ইউনিভার্সিটিতে পড়বে । একবার না একবার দেখা হবেই।

 

তাই হলো আজ। এনেক্সের মাঠে আবার দেখা মিলল সেই সুহাসিনীর । নাম তার শিমু। আহা কত সুন্দর নাম। সব কিছুই তার সিনেমাটিক মনে হচ্ছে । পরিচয় পর্ব শেষ । একদিন নিশ্চয়ই জানতে পারব কেন তুমি আমায় দেখলে হাসো?

 

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/rafiq/534/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

19 comments

Skip to comment form

  1. সত্যি কইরা বল রফিক, এটা তোর কাহিনী না!!!!!!!!

    1. বান্ধবী, এটা আমার নিজের কাহিনী না। কল্পনা প্রসূত বানোয়াট গল্প। তবে প্রেক্ষাপটের ০.৫% সত্যি । সেটা না হয় না জানাই থাক । কি বলিস?

  2. রক্তম আর সুহাসিনীর দেখা হল এনেক্সের মাঠে!!! মানে এখানে লেখক বুঝাতে চাচ্ছেন তারা দুই জন খুব সম্ভবত ম্যাথে ভর্তি হবে।তাহলে আমি নিশ্চিত উপন্যাসটা ট্রাজিডির পথে আছে। কারন ফার্স্ট ইয়ারে তাদের প্রেম হবে তারপর ইয়ার ফাইনাল পরিক্ষায় শিমু পাবে 3.51 আর রক্তিম রি_এড খাবে কিংবা 2.51 পাবে। তখন দর্শক দেখবে একটি প্রেমের অপমৃতু। 🙁

    1. বিপরীত ও হতে পারে!
      রক্তম আর সুহাসিনীর দেখা হল এনেক্সের মাঠে কিন্তু সেখানে তারা গণিত হয় বরং পরিসংখ্যান অথবা ভূবিজ্ঞান এর ছাত্র।
      সেখান থেকেই কিন্তু কাহিনী ঘুরে গেল, অপমৃত্যু নামক কোন কিছুর সম্ভাবনাই থাকল না তাদের গল্পে। 😀

      যাই হক, অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি।

    2. বিপরীত ও হতে পারে!
      রক্তম আর সুহাসিনীর দেখা হল এনেক্সের মাঠে কিন্তু সেখানে তারা গণিত নয় বরং পরিসংখ্যান অথবা ভূবিজ্ঞান এর ছাত্র।
      সেখান থেকেই কিন্তু কাহিনী ঘুরে গেল, অপমৃত্যু নামক কোন কিছুর সম্ভাবনাই থাকল না তাদের গল্পে। 😀

      যাই হক, অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি।

    3. ইমরান সাহেব, তুমি কি প্রথম পর্ব পড়েছিলে? ওখানে শুরুতেই পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে, শিমু জিওগ্রাফীতে আর রক্তিম পদার্থ বিজ্ঞানে পড়ে। গণিত আসার তো ফ্রশ্নই আসেনা… 🙂

  3. তুমি কি প্রথম পর্ব টা ভালোমত পড়েছিলে ? দুজনের কেউই গণিতে পড়ে না । যেমন টা ভাবছো তেমন নাও হতে পারে । 🙂

  4. যাইহোক একটা কথা বলেন এইটা আপনার জীবনের কাহিনী নাতো ????

    1. তোমাকে তো প্রথম পর্বেই বলেছি, এই গল্প ফিকশাস…
      কারো ব্যাক্তিগত জীবনের কোন অংশের সাথে মিলে গেলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে । উহা ঘটনাক্রম মাত্র ইচ্ছাকৃত নয় 😀

  5. ওরে নারে…

    হচ্চে কি এই গল্পের ৯৯.৫% কাল্পনিক আর ০.৫ % বাস্তব । পাঠক আপনাদের কেন মনে হচ্ছে এই গল্প আমার নিজের জীবনের কাহিনী ?

    @ শারমিন, জয়

  6. ৯৯.৫% কাল্পনিক আর ০.৫ % বাস্তব নাকি, ০.৫ % বাস্তবের উপর ভিত্তি করে ৯৯.৫% ভালোবাসার কল্পনা????

    বাস্তব হোক আর কাল্পনিক পরবর্তী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি।

    1. ধন্যবাদ। পরবর্তী পর্ব আসছে… শিঘ্রই… 😛

  7. eagerly waiting for the next part……….

  8. Thanks. Hasan.

    Next part, coming soon…

  9. যতই কাল্পনিক হোক,পড়ে খুব মজা পাচ্ছি।মনে হচ্ছে গণিত বিভাগে একজন তুখোড় গল্পকারের আবির্ভাব হয়েছে।
    hats off-RAFIQUE

  10. তোর প্রশংসা শুনে মনে হচ্ছে তেলের ড্রাম থেকে ডুব দিয়ে উঠলাম । কিন্তু , প্রশংসা তো প্রশংসাই । ধন্যবাদ বন্ধু ফাহিম । 😀

  11. প্রেমে ডুইবো না মনু, রিএড খাইতে খাইতে বাড়িত যাইবা !! @ রক্তিম। 😛

    গল্প ভালো হচ্ছে।

  12. যে রাধে সে চুলও বাধে । অনেক কিছুই ঘটতে পাড়ে । সুতরাং … 🙂

  13. এহ হেরে নস্টালজিক হয়া গেলাম কোচিং লাইফে দু দু বার দু দু টি সুহাসিনী বুকের ভেতর উথাল পাথাল ঢেঊ তুইল্লা দিসিলো মাগার সাতরাইয়া কুলায়া ঊঠতে পারি নাইক্কা। যদিও আমার কাহিনী কোচিং এই শেষ তাই ভাবতাছি রক্তিম এর কাহিনী যাতে অসাধারণ হয়

    আর রফিক ভাই লেখনী নিয়ে আর কি বলব মনে হচ্ছে বিখ্যাত কোন রাইটারের লিখা পরিতেছি

    আর আপনার আকর্ষণ ধরিয়ে রাখার স্টাইল মাশাল্লাহ পারেন ও বটে

    আইচ্ছা আন্নে কি মানুষ ? ?????? এমনে অধৈর্যের মত ধর্য্য দজরা যায় আপনিই কন?????

মন্তব্য করুন