মাঠে নামার আগে আরো কিছু সামাজিক কথা জানিয়ে রাখি। অনেকেরই ধারনা, হিগস বোসন আবিষ্কারের সাথে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ সত্যেন বোস সরাসরি জড়িয়ে আছেন। অনেকেই আফসোস করেন, বোস’কে নোবেল দাওয়া হলনা, অথচ হিগস নোবেল পেয়ে গেলেন – বাঙালীর ভাগ্য কত খারাপ!
ব্যাপারটা আসলে মোটেই এমন না। নিচের লেখাটি পড়ার পর আপনারাই তাদের শুধরে দিতে পারবেন।
ব্যাখ্যা করে বলি। মহাবিশ্বে যত পার্টিকেল আছে, স্পিনের রকমফের অনুযায়ি তাদেরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এক প্রজাতি হল ফার্মিয়ন, আরেক প্রজাতি হল বোসন। প্রকারভেদটা সহজ। যেই পার্টিকেল গুলোর স্পিন গোটা গোটা সংখ্যা, অর্থাৎ 0, 1, 2 ধরনের, তারা বোস-আইন্সটাইন স্ট্যাটিস্টিক্স মেনে চলে। তাই ডির্যাক এদের নাম রেখেছিলেন বোসন। এটা গত শতকের ত্রিশের দশকের ঘটনা। আর যেসব কণার স্পিনের সাথে একটা হাফ লাগানো, অর্থাৎ -এই ধরনের স্পিন যাদের, তারা মেনে চলে ফার্মি-ডির্যাক স্ট্যাটিস্টিক্স। তাই তাদের নাম ফার্মিয়ন। ইলেক্ট্রনের স্পিন ১/২। তাই সে একটি ফার্মিয়ন। আবার ফোটনের স্পিন 1. তাই সে বোসন। তেমনি ভাবে W+, W– , Z, হাবিজাবি এসবের স্পিন ইন্টিজার। তাই তারা বোসন।
হিগসের স্পিন 0. স্বভাবতই এটি একটি বোসন। বোসন শব্দটি হিগস পার্টিকেলের প্রকারভেদ নির্দেশ করে।
এখন, আমাদের যদি সত্যেন বোসের জন্য নোবেল দাবি করতেই হয়, তাহলে তার বিখ্যাত কাজ বোস-আইন্সটাইন কন্ডেন্সেট নিয়ে দাবি করা উচিত। সত্যি কথা বলতে কি, বিশ-এর দশকের ওই কাজটি আসলেই নোবেল পুরষ্কারের দাবিদার ছিল। ২০০১ সালে পদার্থবিদ্যার নোবেল পুরষ্কারটা কী কারনে দেওয়া হয়েছিল সেটা কি আমরা জানি?
না জেনে থাকলে, খানিকটা জানা দরকার। ২০০১ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল প্রাইজ দাওয়া হয় বোস-আইন্সটাইন কন্ডেন্সেটকে এক্সপেরিমেন্টালি প্রমান করার জন্য। সরাসরি কপি-পেস্ট করছি নোবেল সাইট থেকেই –
২০০১-এ আমি দশম শ্রেনীতে পড়তাম। আমি কিছুতেই মনে করতে পারছিনা, আমাদের মিডিয়াগুলো তখন এই কথাটা হৈচৈ করে প্রচার করেছিল কিনা। হিগসের স্পিন একটি ইন্টিজার সংখ্যা – তাই এটি একটি বোসনিক পার্টিকেল – এবং তাই তার নাম হিগস বোসন – এবং তাই হিগস খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে বোসেরও অবদান আছে – এই কথাগুলো শুনলে সত্যেন বোস যার পর নাই লজ্জা পেতেন। আমি যদি কাল একটা নতুন কোন পার্টিকেল আবিষ্কার করি, এবং যদি দেখা যায় সেটা একটা ফার্মিয়ন, তাহলে কি আমরা এনরিকো ফার্মিকে গিয়ে নোবেল প্রাইজ দিয়ে আসব?
উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছি। পরের পোস্ট পর্যন্ত একটু দম নেই।
:-/
1 comments
ভালো লাগল। “বোসন” যে শুধুমাত্র পরিমাপের একটা মাপ/একক মাত্র তা জানতাম না। ধন্যবাদ, এমন আরও লেখা চাই। 🙂