কোলাযের অনুমান বা কোলাযের কনযেকচার ( ৩N+১ কনযেকচার): পর্ব ১

সংখ্যা নিয়ে খেলা করাটা সবসময় মজার । একটা প্রাকৃতিক সংখ্যা N নিয়ে একটু খেলা করা যাক। এখন যদি N  সংখ্যাটি জোড় হয় তবে ২ দিয়ে ভাগ করে ফেলি , অথবা যদি N সংখ্যাটি বিজোড় হয় তবে N কে ৩ দিয়ে গুণ করে তার সাথে ১ যোগ করি অর্থাৎ ৩N+১ তৈরি করি । এভাবে পুনরাবৃত্তি করতে থাকি অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত ।

ধরা যাক ৬ নিয়ে শুরু হল। যেহেতু ৬ একটি জোড় সংখ্যা তাই আমরা ৬ কে ২ দিয়ে ভাগ করে ফেলি, তাহলে আমরা পাচ্ছি ৩ । এখন যেহেতু ৩ একটি বিজোড় সংখ্যা তাই আমরা ৩ কে ৩ দিয়ে গুণ করে তার সাথে ১ যোগ করি, তাহলে আমরা পাচ্ছি ১০ । ১০ একটি জোড় সংখ্যা তাই আমরা ১০ কে ২ দিয়ে ভাগ করে ফেলি, তাহলে আমরা পাচ্ছি ৫ ।

আবার যেহেতু ৫ একটি বিজোড় সংখ্যা তাই আমরা ৫ কে ৩ দিয়ে গুণ করে তার সাথে ১ যোগ করি, তাহলে আমরা পাচ্ছি ১৬ । এবার ১৬ হল জোড় , তাহলে আমরা পাচ্ছি ৮ ; এখন ৮ হল জোড়, তাহলে আমরা পাচ্ছি ৪ ; ৪ হল জোড় , তাহলে আমরা পাচ্ছি ২ ; ২ হল জোড় , তাহলে আমরা পাচ্ছি ১ ! এখানে আকস্মিকভাবে থেমে যাই ! থেমে যাওয়ার কারণটা কিছুক্ষণ পর আমরা বুঝতে পারব ।

 

এপর্যন্ত আমরা একটা সিকোয়েন্স পেলাম ৬, ৩, ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২, ১ ।

এবার ১১ সংখ্যাটি নিয়ে শুরু করা যাক, তাহলে আমরা আরেকটা সিকোয়েন্স পেয়ে যাব ১১, ৩৪, ১৭, ৫২, ২৬, ১৩, ৪০, ২০, ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২, ১ ।

ইতমধ্যে খেয়াল করলে দেখা যাবে , আমরা যদি ৩ দিয়ে শুরু করি তাহলে আমরা পাব ৩, ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২, ১ । ৬ দিয়ে শুরু করেছিলাম , তখন পরের ধাপ এ আমরা পাই ৩, তারপর ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২, ১ ।

তার মানে হল সিকোয়েন্স এর মধ্যেকার কোন সংখ্যা নিয়ে শুরু করলে ঐ সিকোয়েন্স অনুযায়ী আমরা পরের সংখ্যাগুলো পেয়ে যাব ।

এখন কথা হল আমরা যদি ১ নিয়ে শুরু করি তাহলে কী হবে । স্বাভাবিকভাবেই সিকোয়েন্সটা হবে ১, ২, ১ ! তার মানে আবার ঘুরে ১ ই আসবে ! আসলে আমরা প্রথমবার আকস্মিকভাবে থেমে গেলাম এই কারণেই !

এতক্ষণ যেভাবে খেলা হল তাতে বোঝা গেল প্রাকৃতিক সংখ্যার এই খেলাটা ১ এ এসেই ঘুরপাক খায়।

জার্মান গণিতবিদ লোথার কোলায সর্বপ্রথম ১৯৩৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব ও অনুমান করেন যে সব প্রাকৃতিক সংখ্যার জন্যই এটা সত্য হবে । তাঁর নামানুসারে এই অনুমান কে বলা হয় কোলাযের অনুমান/ কোলাযের কনযেকচার । এই সমস্যাটি ৩N+১ অনুমান বা উলামের অনুমান (পোল্যাণ্ডের গণিতবিদ স্ট্যানিস্ল উলাম এর নামানুসারে) বা কাকুতানি’র সমস্যা (জাপানী গণিতবিদ সিঝুও কাকুতানি’র নামানুসারে) বা থোয়াইটেস এর অনুমান ( স্যার ব্রায়ান থোয়াইটেস এর নামানুসারে) বা হ্যাসে এর এলগরিদম (জার্মান গণিতবিদ হেলমুট হ্যাসে এর নামানুসারে) বা সাইরাকিউস সমস্যা নামেও পরিচিত ।

মজার বেপার হল এই অনুমান এর প্রত্যক্ষ গাণিতিক প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি । হাংগেরীয়ান গণিতবিদ পল আর্ডস এই সমস্যা সম্পর্কে বলেছিলেন,

এরকম সমস্যা সমাধানের জন্য গণিত এখনো অপরিপক্ক রয়ে গেছে ।”

তিনি এই সমস্যা সমাধানের জন্য ৫০০ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করেছিলেন ।

 

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

https://en.wikipedia.org/wiki/Collatz_conjecture  

Dhiman Nath
Author: Dhiman Nath

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/dhiman/268/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

6 comments

Skip to comment form

  1. wonderful

    Tariqul Dipu

  2. ধন্যবাদ Tariqul Dipu ভাইয়া।

  3. দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
    ভালো লেগেছে দাদা

  4. ধন্যবাদ জুলফিকার হায়দার। সময় বের করে লিখে ফেলব।

  5. জেনে ভালো লাগল। 🙂

  6. অসাধারণ লিখেছেন ভাইয়া।
    পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
    একটা প্রশ্ন ছিল? কোলাযের কনজেকচার একসাথে এতগুলো নাম দ্বারা পরিচিত কেন?

Comments have been disabled.