না বলা ভালোবাসা…

ইউনিভার্সিটি লাইফের প্রথমদিনেই নীলাঞ্জনা আর রুদ্রর দেখা হয়। প্রথমে পরিচয় এবং সময়ের স্রোতে তাদের বন্ধুত্ব এবং সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্ব হয়। ক্লাস, আড্ডা, ঘোরাফেরা সবকিছুতেই দুজন দুজনার ছায়াসঙ্গি। একসময় রুদ্র বুঝতে পারে সে নীলাঞ্জনাকে ভালোবেসে ফেলেছে

২য় বর্ষে পড়ছে এখন তারা।পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে রুদ্র আর নীলাঞ্জনা এসেছে চারুকলায়। রুদ্র একটু পর পর নীলাঞ্জনার দিকে তাকাচ্ছে মুগ্ধ চোখে। বাসন্তী রঙের শাড়ি আর হলুদ টিপে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। টিপটা কপালের ঠিক মাঝে বসেনি, গান শোনায় বিভোর নীলাঞ্জনাকে আস্তে করে ডেকে বলল টিপ ঠিক জায়গায় বসাতে। তার খুব ইচ্ছে করছিলো নিজের হাত দিয়ে টিপ সরিয়ে দেয়,কিন্তু ও যদি অন্য কিছু মনে করে? আমাদের বন্ধুত্ব যদি নষ্ট হয়ে যায়। থাক না যেমনটা চলছে।

আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তৃতীয় বর্ষে উঠেছে রুদ্র।শাহবাগ মোড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় লাল গোলাপ রুদ্রের নজর কারে। “ভেবেছি তাই এবার যা কিছু হবে হবার, হোক তবু করি স্বীকার” তপুর গানটা শুনতে শুনতে ঠিক করে ফেলে লাল গোলাপ দিয়ে বলেই ফেলবে আজ। লাল গোলাপ কিনি কিনি করেও শেষ পর্যন্ত একটা সাদা গোলাপ কিনে রুদ্র। ক্লাস শেষে নীলাঞ্জনাকে সাদা গোলাপ দিয়ে ভালোবাসা দিবসের উইশ করে,মনে মনে ভাবে- “আজ যদি তোমায় লাল গোলাপ দিতে পারতাম,আমার চাইতে সুখি আর কেউ হত না আজ”।

ডিপার্টমেন্ট থেকে চতুর্থ বর্ষের স্টাডি ট্যুরে এসেছে রুদ্রদের ডিপার্টমেন্টের সবাই। কুয়াকাটা বিচে সবাই গোল হয়ে বসে খেলা খেলছে। লটারির মাধ্যমে কাগজে যার ভাগ্যে যা উঠছে,সেটাই করতে হবে তাকে। নীলাঞ্জনার ভাগ্যে উঠলো গান গাওয়া। একটু ইতস্তত করে সে গান ধরল, “আমারও পরাণ যাহা চায়, তুমি তাই, তুমি তাই গো”, রুদ্র মনে মনে ভাবছে, “ইস, তুমি যদি এটা আমার জন্য গেতে!” গান শেষ হতেই নিজেকে ধিক্কার দিল সে, কি আজে বাজে ভাবছে সে! নীলাঞ্জনা তাকে বিশ্বাস করে, না এটাকে সে ভাঙতে পারবে না। নিজেকে শক্ত করতে হবে।

রুদ্র দাড়িয়ে আছে টিএসসি তে, হাতে নীলাঞ্জনার বিয়ের কার্ড।সামনের মাসে সে বিয়ে করছে তারই এক বন্ধুকে।নীলাঞ্জনা চলে যাচ্ছে, রুদ্র ভাবছে, “একবার শুধু, একবার পিছন ফিরে তাকাও, আমি সব বাঁধা ফেলে আজ তোমাকে বলব ভালোবাসি।প্লিজ একবার তাকাও, আমি ভালোবাসি তোমায়”। কিন্তু না, নীলাঞ্জনা তাকালো না,চলে গেল…

নীলাঞ্জনার বিয়ের সাত মাস পরে রুদ্র স্কলারশিপ নিয়ে জাপানে চলে গেলো। প্রথমে প্রথমে ফোনে যোগাযোগ হলেও এক সময় অনিয়মিত হয়ে যায় সেটা। রুদ্রও বিরক্ত করতে চায়না নীলাঞ্জনাকে। থাক,ভালো থাকুক সে।
…চল্লিশ বছর পরে নীলাঞ্জনার মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরে নীলাঞ্জনার বড় ছেলের কাছ থেকে একটি ডায়েরি পায় রুদ্র। সেখানে লেখা…………

আজ পহেলা ফাল্গুন,আমরা এসেছি চারুকলায়। আমি একটু পর পর রুদ্রের দিকে তাকাচ্ছি। লাল রঙের পাঞ্জাবিতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে।আজকে টিপটা কপালের মাঝে ইচ্ছে করেই বসাইনি, খুব ইচ্ছে করছিলো ওকে বলি নিজের হাত দিয়ে ঠিক করে দেয়। কিন্তু তারপর মনে হল,ও যদি অন্য কিছু মনে করে? আমাদের বন্ধুত্ব যদি নষ্ট হয়ে যায়। থাক না যেমনটা চলছে।

আজ ভালোবাসা দিবস। আজ রুদ্র আমায় একটি সাদা গোলাপ দিয়েছে।এই প্রথম ও আমাকে ফুল দিলো। “আজ যদি ও আমায় লাল গোলাপ দিত,আমার চাইতে সুখি আর কেউ হত না আজ”।

ডিপার্টমেন্ট থেকে স্টাডি ট্যুরে এসেছি গতকাল ডিপার্টমেন্টের সবাই। লটারির মাধ্যমে আমার ভাগ্যে উঠলো গান গাওয়া। রুদ্রের জন্য গেলাম “আমারও পরাণ যাহা চায়, তুমি তাই, তুমি তাই গো”। ইস, গাধাটা যদি বুঝত গানটা ওর জন্যই গাইছি! গান শেষ হতেই নিজেকে ধিক্কার দিলাম, কি আজে বাজে ভাবছি আমি! রুদ্র আমাকে বিশ্বাস করে,না এটাকে আমি ভাঙতে পারব না। নিজেকে শক্ত করতে হবে।

আজকে রুদ্রকে গিয়েছিলাম বিয়ের কার্ড দিতে। মনটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছিলো। কার্ড দিয়ে ফেরার সময় কান্না ধরে রাখতে পারছিলাম না। কিন্তু রুদ্র যদি চোখের পানি দেখে ফেলে এই ভয়ে পেছনে তাকাতে পারছিলাম না। খুব আশা করছিলাম একবার ,শুধু একবার ও হাত বাড়াক; পেছন থেকে ডাকুক, আমি সব বাঁধা ফেলে আজ তোমাকে বলব ভালোবাসি ।প্লিজ একবার ডাকো, আমি ভালোবাসি তোমায়। কিন্তু না রুদ্র ডাকল না। থাক, রুদ্র সুখি হোক…………

 

 

Omar Faruk Rehan
Author: Omar Faruk Rehan

নিজের সম্পর্কে কি লিখবো? পরিচিত হলে নিজেই বুঝে নিবেন

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/omar-faruk-rehan/1413/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

মন্তব্য করুন