অজানা

বিরিশিরির অপূর্বের সৌন্দর্যের টানে এবং শিক্ষাজীবনের জ্ঞানের পরিসীমা বাড়ানোর নিমিত্তে ঘর থেকে বের হই অক্টোবারের প্রথম দিকে। যাত্রার মাঝপথে রাত কাটাই ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরদিন ভোরে ব্রম্ভপুত্র নদীর নৌকাবাইচ এবং দুপুরে তার তালেই রওনা দিলাম দুর্গাপুরের বিরিশিরির উদ্দেশ্যে। এখানকার রাস্তা অনেকটাই দেশি স্টাইলের রোলার কোস্টার। নৌকাবাইচের তালে তালেই পৌছালাম দূর্গাপুরে, প্রায় পড়ন্ত বিকেলে। গাড়ি থেকে নেমেই সবাই সবাইকে ভৌতিক অবস্থায় আবিষ্কার করলাম। ঝাকুনির প্রচন্ড বেথায় আর ধুলোর মাখামাখিতে সবার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

 

এবার শুরু হল হোটেল খোজার পালা। দূর্গাপুর শহরে হোটেল খোজার ব্যর্থ চেস্টা করে শেষমেষ খোঁজ পেলাম YWCA-র। ততক্ষণে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সিট না পাওয়ার আশংকায় রওনা দিলাম এবং পেয়েও গেলাম।

 

ফ্রেশ হয়ে যখন আশপাশটা দেখতে বের হলাম তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হয়ে এসেছে। চারিদিকে মানুষের বসতি তেমন নাই বললেই চলে। ঘন গাছপালার রাস্তায় এবং বাঁশবাগানে চাঁদ মামার উঁকিঝুঁকিতে মেইন রাস্তার দিকে যেতেই মনে হল আমাদের কে যেন ফলো করছে। চাপা ভয় এবং উত্তেজনার মধ্যেই রওনা দিলাম বাজারের দিকে। জলযোগ করেই গেলাম সোমেশ্বরী নদীর তীরে। চাঁদ মামার সোনালী আলোয় সারাদিনের চরম ক্লান্তি ভুলে উপভোগ করলে লাগলাম অক্টোবর মাসের পড়ন্ত যৌবনের সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য এবং হিমেল হাওয়া। কোকিল আঙ্কেলের কন্ঠে গানও গাইলাম অনেক্ষণ। যখন ফিরলাম তখন প্রায় রাত সাড়ে এগারটা।

 

ডর্মিটরী রুমে আমরা পাঁচজন, আড্ডা দিলাম, হৈ-হুল্লোড় করলাম, অতীতের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কথা প্রসঙ্গেই আসল ভৌতিক গল্প। একে একে ভূত প্রেত নিয়ে ভাদ্র মাসে আষাঢ়ে গল্প বলতে লাগলাম। গল্পের মাঝখানে আমার এক চরম ভীতু বন্ধু ভয়ে গল্প বন্ধ করে সবাইকে ঘুমাতে যাওয়ার অনুরোধ করতে লাগল। তখন আমরা পেয়ে বসলাম , চিল্লাচিল্লি আর বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখিয়ে সবাই বীরের বেশে গেলাম ঘুমাতে। তখন কি জানতাম এর জন্য কঠোর শাস্তি পেতে হবে……………………।

 

বন্ধুকে ব্যাপক ভুতের ভয় দেখিয়ে বীরের ন্যায় আমরা চারজন ঘুমাতে গেলাম। চারিদিকে ঝি-ঝি পোকার বিরামহীগ ডাক আর চারপাশের নিস্তব্ধতায় লাইট বন্ধ করার সাথে সাথে গা কেমন জানি ছম ছম করতে লাগল। জানালার বাইরে চাঁদের আলোয় আবছা অন্ধকারে একটু ভয়ই লাগছিল। কিন্তু অপমানিত হবার ভয়ে জানালা না লাগিয়েই কাথামুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

 

তখন রাত প্রায় ৩.৩০ মিনিট। ওরা দুপাশে চারজন চারটা বেডে আর আমি একটু দূরে, একেবারেই কর্ণারে ঘুমিয়েছিলাম। হঠাত মৃদু গোঙানির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে ঘুরে দেখি চারজন একসাথে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ‘হাউ’ বলে চেচিয়ে উঠল এবং বসে পড়ল।

 

কাহিনী কি? কিছু না বুঝেই গেলাম তাদের কাছে। জিজ্ঞেস করে সদুত্তর পেলাম না। কিন্তু হঠাত একসাথে বসে পড়েছে। তখনই গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠল। ভয় পেলাম সবাই। কারো চেহারার দিকে তাকান যাচ্ছে না। জানালার বাইরে তাকানোর সাহস হচ্ছে না। প্রচন্ড ভয়ে সবাই বিমূর্ত আকার ধারণ করলাম। ভয়ে ভয়ে জানালা-দরজা লাগিয়ে কাথামুড়ি দিয়ে ঘুমালাম একসাথে।

 

টয়লেটের প্রচন্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও যাওয়ার সাহস পেলাম না। ঘুম ভেঙ্গে দেখি রোদ্র ঝলমলে সকাল। শান্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হোক আজকেই ফিরে যাবো ঢাকায়।

 

ভূত প্রেতে বিশ্বাস করিনা কখনই। কিন্তু সেই রাতের আসল  কাহিনী এখনও আমাদের অজানা। কারো কাছেই সদুত্তর পাইনি। তবে, অজানাই থাকনা এমন কাহিনী। ক্ষতি কি? এমন না হলে কি ট্যুর জমে???

দোলন
Author: দোলন

একরাশ স্বপ্ন নিয়ে গণিত বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু তা ভেঙ্গে চুরমার হতে ১ সপ্তাহ সময়ও লাগে নি। এখন মনে হয় কোন মতে পাশ করে বের হতে পারলে বাঁচি।

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/emtiazmth/1596/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

1 comments

  1. কখন গেলি ? আমি তো জানলামই না 😛
    যাই হোক, ভৌতিক গল্প গুলোর অপেক্ষায় রইলাম 😀

মন্তব্য করুন