গণিতে নোবেল ! কিভাবে সম্ভব ? কবে থেকে গণিতে নোবেল দেয়া শুরু করল ? উত্তর হল ২০০৩ সাল থেকে ! এই নোবেল হল অ্যাবেল পুরষ্কার যা অনেক সময় গণিতের নোবেল বলা হয় । গণিতের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার হচ্ছে অ্যাবেল পুরষ্কার । নরওয়ের রাজা কর্তৃক এই পুরষ্কার দেয়া হয় । নরওয়ের গণিতবিদ নীলস হেনরিক অ্যাবেলের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে ।
অ্যাবেল পুরষ্কার প্রদানের ভাবনা কিন্তু সাম্প্রতিক নয় । ১৯০২ সালে হেনরিক অ্যাবেলের ১০০ তম জন্মবার্ষিকীতে সর্বপ্রথম গণিতবিদ সপাস লী এই পুরষ্কারের প্রস্তাবনা দেন যখন তিনি জানলেন নোবেল পুরষ্কারের তালিকায় গণিত অন্তর্ভুক্ত না । রাজা দ্বিতীয় অস্কার এই প্রকল্পে অনুদান দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং একটি কমিটি গঠন করা হয় । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিভিন্ন কারণে
এই প্রকল্পটি ব্যর্থ হয় এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত এটা বন্ধ ছিল । প্রায় এক শতক পর একটি গ্রুপ গঠন করা হয় এবং নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রস্তাব পেশ করা হয় । এরপর নরওয়ে সরকার কর্তৃক এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে ২০০২ সাল অর্থাৎ অ্যাবেলের ২০০ তম জন্মবার্ষিকীতে এই পুরষ্কার দেয়া হবে । যদিও ২০০৩ সালে প্রথম পুরষ্কারটি দেয়া হয় ।
প্রতি বছর মার্চ মাসে নরওয়ের সাইন্স একাডেমী পুরষ্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে । পাঁচ জন আন্তর্জাতিক গণিতবিদের সমন্বয়ে অ্যাবেল কমিটি গঠন করা হয় । এই কমিটি পরিচালনা করেন নরওয়ের একজন গণিতবিদ রাজনি পিনি । “আন্তর্জাতিক গণিত সংঘ” এবং “ইউরোপীয় গণিত সংঘ” এই কমিটির সদস্যদের নির্বাচন করে । এই কমিটির প্রত্যেকেই নিজেকে ছাড়া একজনকে মনোনয়ন দিতে পারেন তবে মনোনয়ন প্রাপ্ত ব্যক্তি অবশ্যই জীবিত হতে হবে । যদি পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর মারা যান তবে তাকে মরণোত্তর পুরষ্কার দেয়া হয় । এক বা একাধিক ব্যক্তিকে পুরষ্কার দেয়া হয় ।
অ্যাবেল পুরষ্কার প্রদানের জন্য প্রাথমিকভাবে নরওয়ের সরকার কর্তৃক ২৩ মিলিয়ন ডলারের একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে এবং অ্যাবেল পুরষ্কার বিজয়ীকে ১ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের অর্থ প্রদান করা হয় ।
- ২০০৩ সাল থেকে প্রতিবছর অ্যাবেল পুরষ্কার দেয়া হচ্ছে । নীচে এর তালিকা দেয়া হলঃ
- ২০০৩ সালে সর্বপ্রথম অ্যাবেল পুরষ্কার পান জেন পিয়েরে সেরে নামের একজন ফরাসী গণিতবিদ । টপোলজি, অ্যালজেব্রিক জিওমেট্রি , নাম্বার থিওরিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের কারণে তাঁকে ২০০৩ সালে এই পুরষ্কার দেয়া হয় ।
- ২০০৪ সালে ব্রিটিশ গণিতবিদ মাইকেল আতিয়াহ এবং মার্কিন গণিতবিদ ইসাডোর সিঙ্গার যৌথভাবে এই পুরষ্কার পান । ইনডেক্স থিওরেম আবিস্কার ও প্রমাণ করা; টপোলজি, জিওমেট্রি এবং এনালাইসিসকে একত্রিত করা এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের সাথে গণিতের সম্পর্ক তৈরির অবদান স্বরূপ তাঁরা এই পুরষ্কার পান ।
- ২০০৫ সালে অ্যাবেল পুরষ্কার পান হাঙ্গেরীয় মার্কিন গণিতবিদ পিটার লাক্স । আংশিক ব্যবকলনীয় সমীকরণের ভিত্তি তৈরি করে এর সমাধান বের করার অবদান স্বরূপ তাঁকে এই পুরষ্কার দেয়া হয় ।
- ২০০৬ সালে সুইডিস গণিতবিদ লিনার্ট কার্লসন এই পুরষ্কার পান হার্মোনিক এনালাইসিস এবং ডাইনামিক্যাল সিস্টেমে অবদান রাখার জন্য ।
- ২০০৭ সালে অ্যাবেল পুরষ্কার পান মার্কিন গণিতবিদ এস. আর. শ্রীনিভাসা ভারাধান । প্রোবাবিলিটি থিওরি এবং লার্জ ডেভিয়েশন থিওরিতে অবদানের কারণে তাঁকে এই পুরষ্কার দেয়া হয় ।
- ২০০৮ সালে মার্কিন গণিতবিদ জন জি. থমসন এবং ফরাসী গণিতবিদ জ্যাকেস টিটস যৌথভাবে এই পুরষ্কার পান । অ্যালজেব্রা এবং গ্রুপ থিওরিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তাঁরা পুরষ্কার পান ।
- ২০০৯ সালে পুরষ্কার পান রাশিয়ান গণিতবিদ মিখাইল গ্রমভ । জ্যামিতিতে বৈপ্লবিক অবদানের কারনেই তিনি এই পুরষ্কার পান ।
- ২০১০ সালে পুরস্কার পান মার্কিন গণিতবিদ জন টি. টেট । নাম্বার থিওরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান স্বরূপ তাঁকে এই পুরষ্কার দেয়া হয় ।
- ২০১১ সালে পুরষ্কার পান মার্কিন গণিতবিদ জন মিলনর । টপোলজি, জিওমেট্রি, অ্যালজেব্রাতে তার তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কারের কারণে এই পুরস্কার দেয়া হয় ।
- ২০১২ সালে পুরষ্কার পান মার্কিন গণিতবিদ আন্দ্রে সেমেরেদি । বিচ্ছিন্ন গণিত, সংখ্যাতত্ত্ব এবং তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞানে অবদান স্বরূপ তাঁকে এই পুরষ্কার দেয়া হয় ।
- ২০১৩ সালে অ্যাবেল পুরষ্কার পান বেলজিয়ান গণিতবিদ পিয়েরে ডেলিগ্নে । অ্যালজেব্রিক জিওমেট্রি, নাম্বার থিওরি এবং রিপ্রেজেন্টেশন থিওরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য তিনি এই পুরষ্কার পান ।
অ্যাবেল পুরষ্কারে যে অর্থমূল্য দেয়া হয় তা শুধু আর্থিক কারণে নয় বরং প্রকৃতঅর্থে তা অনুপ্রাণিত করার জন্য, বিস্তৃত ভাবে গবেষণা করার জন্য, গণিতের নতুন দরজা উন্মুক্ত করার জন্য ।
তাই গনিতকে ভালোবাসো । এগিয়ে যাও গণিত নিয়ে । নোবেল না হোক অ্যাবেল আসবেই ।
2 comments
অসাধারণ লিখা। অ্যাবেল পুরস্কার অন্যতম হলেও গণিতে অসামান্য অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার প্রচলিত আছে, কিছু কিছু পুরস্কার আছে গাণিতিক বিষয়ভিত্তিক।
এধরনের পুরস্কার নিয়ে আরও অসাধারণ কিছু লেখার আশায় রইলাম… 🙂
Author
ধন্যবাদ ভাই 🙂