দূরে থাকা কাছের মানুষ

রাত সাড়ে চারটা, ইন্দ্রাণী  বারান্দায় বসে বসে সারাদিনের ঘটনা গুলো ভাবছে। প্রতিটি মুহূর্ত নেড়েচেড়ে দেখছে। আজ ছিল ১৩ই ফেব্রুয়ারী, পহেলা ফাল্গুন। বন্ধুদের সাথে হয়তো এটাই তার শেষ পহেলা ফাল্গুন উদযাপন। সামনেই মাস্টার্স ফাইনাল,এরপর সবাই নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরবে। গত পাঁচ বছর ধরে তাদের সাতজনের এই গ্রুপটা ভেঙ্গে যাবে,ভাঙ্গা বলা হয়তো ঠিক হবে না একটা মধুর স্মৃতির আবরণে থেকে যাবে আজীবন। সব বন্ধুদের কথাই মনে পড়ছে তার সেই সাথে শুভাশিসের কথা আবশ্যিকভাবেই।

শুভাশিস ইন্দ্রাণীরই গ্রুপ ফ্রেন্ড, বন্ধুত্ব থেকে কখন যে সে শুভকে ভালোবেসে ফেলেছে সেই দিনটার হিসেব নেই ইন্দ্রাণীর কাছে। মনে পরে যায় শুভাশিসের সাথে দেখা হওয়ার প্রথম দিনটার কথা। ইউনিভার্সিটি লাইফের প্রথম দিনের প্রথম দেখাতেই শুভ তাকে তুই বলে সম্বোধন করেছিল। প্রথমে বিরক্ত হলেও পরে ইন্দ্রাণী জানতে পারে শুভ তার রুপা ছাড়া কখনও কোন মেয়েকে নাকি তুমি বলবে না! হিমুর বই পড়তে পড়তে শুভ তার কল্পিত রুপাকে ভালোবেসে ফেলেছে। রুপার অপেক্ষায় সে সারাজীবন নাকি কাটিয়ে দিবে। রুপাকে শুভাশিস যেদিন প্রপোজ করবে সেদিন তাকে আপাদমস্তক নীল পরী সেজে আসতে হবে।রুপাকে পেলে এটা করবে, সেটা করবে- রুপার বর্ণনা শুনতে শুনতে কখন মনের অজান্তেই ইন্দ্রাণী নিজেকে রুপা বানিয়ে ফেলেছে, তা সে নিজেও জানে না।

কিন্তু শুভটা একদম বোকা,পাঁচটি বছর একসাথে থাকার পরেও বুঝতে পারলো না ইন্দ্রাণীর ভালোবাসা, নাকি বুঝেও না বোঝার ভাণ করে থাকা। সে শুভকে নিয়ে জাল বুনেছে সে, স্বপ্নের কিংবা মাকড়সার! শুভ তার সেই রুপাকে নাকি ভ্যালেনটাইনস ডে তে প্রপোজ করবে। গত পাঁচটি বছরের প্রতিটা  ভ্যালেনটাইনস ডে তে ইন্দ্রাণী অপেক্ষা করে আছে সেই ডাকের। আজকেও একটি ভ্যালেনটাইনস ডের শুরু, হয়তো আজকেই তার শেষ অপেক্ষা করা। বাসার বিয়ের চাপে হয়তো এই বছরই তাকে এমন কাউকে বিয়ে করতে হবে,যাকে সে কখনই শুভাশিসের জায়গা দিতে পারবে না।

এইসব সাতপাঁচ ভাবছে ইন্দ্রাণী,এই সময় রাতের স্তব্ধতাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে বেজে উঠলো মুঠো ফোনটি। স্ক্রিনে শুভ কলিং লেখাটা দেখেও বিশ্বাস করতে পারছিলো না ইন্দ্রাণী। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলো সে

-হ্যালো

-ওপাশ থেকে নীরবতা

-হ্যালো শুভ

-এবারো নীরবতা

কি হতে পারে এই চুপ করে থাকার পেছনের কথা। আমি তোমাকে ভালোবাসি? তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে?  অথবা তোমাকে মিস করছি?? কি? কি বলতে চাইছে শুভ?

সাতান্ন সেকেন্ড পরে কেটে গেল কল। আনন্দ, উত্তেজিত ইন্দ্রাণীর হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। কম্পিত হাতে ফোন দেয় শুভাশিসকে

রিঙ হচ্ছে শুভ ফোন ধরছে না, আবার ফোন দিলো ইন্দ্রাণী এইবার ফোনটা ধরলো শুভ

-(ঘুম জড়িত কণ্ঠে) হ্যালো

-তুই ফোন দিয়েছিলি কেন?

-আমি? কখন?

– এই এইমাত্র

– ও চাপ লেগে চলে গেছে হয়তো

– ও আচ্ছা, তাহলে তুই ঘুমা। কাল দেখা হবে

-বাই

 

কান্নাটাকে গিলতে পারছে না ইন্দ্রাণী। এক অদ্ভুত রাগ-অপমানে তার গা পুড়ে যাচ্ছে। কি নেই তার মধ্যে!! হাজার হাজার ছেলে তার জন্য পাগল আর সে কি না এই গাধাটাকে মনে গেঁথে আছে!! কান্নার দমকে কেঁপে কেঁপে উঠছে ইন্দ্রাণীর শরীর। একটা মেসেজ এলো মনে হচ্ছে,নিশ্চয়ই কোন ফালতু কথা লিখেছে তাকে খ্যাপানোর জন্য।শুভর মেসেজটা ওপেন করলো ইন্দ্রাণী, তাতে লেখা

“ রাণী কালকে নীল শাড়িটা পরে এসোতো, দেখি আমার রুপাকে নীল পরীর মত লাগে নাকি”

আবারও কান্নায়  চোখ ভিজে যাচ্ছে ইন্দ্রাণীর…………..

Omar Faruk Rehan
Author: Omar Faruk Rehan

নিজের সম্পর্কে কি লিখবো? পরিচিত হলে নিজেই বুঝে নিবেন

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/omar-faruk-rehan/1683/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

1 comment

  1. onek valo likhechis, chaliye jaa, ami porbo regular

মন্তব্য করুন