গণিত বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে যেই কথাটি শুনে আসছি তা হল, এই ডিপার্টমেন্ট নাকি ৫০ বছর বর্তমান সময় থেকে পিছিয়ে আছে । দিন যত পার করেছি কিছুটা হলেও সত্যতা পেয়েছি। কিন্তু এরসাথে আরেকটি বিষয়ও খেয়াল করেছি সেটা হল আমরা যারা আছি তারাও কোন উদ্যোগ নিতে চাই না। ব্যাপারটির সাথে আমাদের দেশের তরুণদের রাজনৈতিক চেতনার মিল পাওয়া যায় । আমরা যেমন রাজনিতিকে খারাপ আর নিজেদের ভাল বলে রাজনিতিতে অংশগ্রহণ করি না ,তেমন ডিপার্টমেন্ট থেকে সহযোগিতা পাবোনা বলে কোন কিছুর উদ্যোগ নিতে চাই না। আবার অনেক সময় উদ্যোগ নিয়েও মাঝপথে ছেড়ে দিই । এরকম উদ্যোগহীনতার অনেক কারনের একটি হল , ম্যাথ ডিপার্টমেন্টে যারা আসি দেখা যায় ৯৫% নিজের ইচ্ছায় না । হয়ত ডিপার্টমেন্টকে কম আপন(!) ভাবার এটিও কারন হতে পারে ।
আমরা যারা নতুন দ্বিতীয় বর্ষে(২০১২-২০১৩) উঠেছি তারা একদিন হুট করে প্ল্যান করে ফেললাম । ভাবলাম, আমরা যেমন ডিপার্টমেন্টে এসে অনেক হতাশা পেয়েছি তা কখনই আমাদের অনুজদের মধ্যে সঞ্চালন হতে দিব না। কারন এতদিনে আমরা জেনে গেছি ম্যাথ একটি ভাল রেজাল্ট করে চাকুরী পাওয়ার মত সাবজেক্ট না । এটি আমাদের ভালবাসার অন্য একটি নাম। কিছু একটা করতেই হবে এমন একটা সংকল্প ছিল। হোক সেটা অনেক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা কিন্তু কিছু একটা করতে চেষ্টা করেছি এটি বলেতো নিজেদের বলে সান্ত্বনা দিব । যাই হোক, এরপর চিন্তা করলাম কিভাবে কি করলে অনুজরা উপকৃত হবে । প্রথমে আমরা মোটা দাগে কয়েকটা সমস্যা বের করলাম ।
(১) প্রথম সমস্যা, আমরা বড় ভাইদের ঠিকমত চিনিনা। আর চিনলেও তাদের কাছ থেকে কতটুকু সাহায্য পাব সেটা নিয়ে চিন্তিত থাকি। এর কারন মূলত আমরা প্রথম কয়েক মাস তাদের চিনতেই পারি না। আর নতুন পরিবেশে পরিচিত হতে সবার একটু ভয় থাকেই ।
(২) এরপর যেই সমস্যার সন্মুখীন হই তা হল ইনকোর্স ব্যাবস্থা তথা পরীক্ষা পদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে অনেক ধরনের বিভ্রান্তি থাকে।
(৩) আর সব থেকে বড় চিন্তা করি তা হল , ম্যাথ পড়ে আসলে কি করতে পারব । অর্থাৎ জব সেক্টর নিয়ে আমদের হতাশার অন্ত থাকে না।
প্রথমে আমরা ঠিক করলাম একদিন বসে ওদের সাথে আড্ডা দিয়ে ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করব । ঠিক করলাম নবীনদের কয়েকটা প্রেজেন্টেশন দেখানর মাধ্যমে আমাদের এসব প্রচলিত সমস্যা সমাধানের পথ দেখিয়ে দিব । শুরু করে দিলাম নবীনদের আপন করে নেওয়ার মিশন ।
সবাই মিলে ঠিক করলাম নবীনদের একটা কেক পার্টি দিব । সেরকম বড় কোন আয়োজন না। শুধু কয়েকটুকরো কেক খাওয়াব আর তার সাথে আমাদের বানানো প্রেজেন্টেশন দেখাব । প্রেজেন্টেশনটি আমরা তিন পর্বে ভাগ করে নিলাম।
(১) পরীক্ষা ও গ্রেড পদ্ধতি জিনিসটা কেমন তার উপর প্রেজেন্টেশন
(২) আমরা যারা এখন দ্বিতীয় বর্ষে আছি তারা প্রথম বর্ষে সারা বছর কি করেছি সেগুলোর স্টিল পিকচারগুলোকে নিয়ে একটা প্রেজেন্টেশন
(৩)হতাশা নয়…………… জব সেক্টরে আশার নাম গণিত এটার উপর একটা প্রেজেন্টেশন 😛
শুরু করে দিলাম আমদের কাজ। কিছু বাধার সন্মুখিন অবশ্যই হয়েছি। কিন্তু আমাদের প্রেরণা দেওয়ার মত দুইজন শিক্ষক পেয়েছি । তারা হলেন রাজীব আরেফিন স্যার আর তৌহিদ হোসেন
স্যার। তাদের অসীম প্রেরণা আর সহযোগিতার কারনে আমরা পুরো ব্যাচ ঋণী ।
সকল আয়োজন সম্পন্ন করে আমরা অত্যন্ত সফলতার সাথে পহেলা ফাল্গুন আমরা আমদের অনুজদের ক্ষুদ্র এই কেকপার্টি দিই । অনুষ্ঠানটিতে তিন পর্বের প্রেজেন্টেশন ছাড়াও একটা ছোট-খাটো কুইজের বাবস্থা করি । এতে আমদের রাজীব স্যার এবং তৌহীদ স্যার কিছু মৌখিক প্রশ্ন করেন এবং উত্তরদাতাদের সামান্য পুরস্কৃত করা হয়। আশা করছি আমদের অনুজেরা খুব আনন্দের সাথেই কেকটি উপভোগ করেছে আর সামান্য হলেও উপকৃত হয়েছে ।
ম্যাথ এর ফিল্ড নিয়ে আমরা মাত্র কয়েকটা বিষয় নিয়েই আলোচনা করেছি । সেগুলা হল
(1) actuarial science
(2) applied mathematics
(3) engineering
(4) financial mathematics
(5) biomathematics
(6) biostatistics
(7) music
(8) teaching
(9) research
মজার ব্যাপার হল, সবার অন্তত একটা ভুল ভেঙেছে আমরা ম্যাথমেটিশিয়ানরা শিক্ষক ছাড়াও অনেককিছু হতে পারি। অনুজদের চকচকে স্বপ্নমাখা চোখ দেখে নিজেরাও একধরনের স্বপ্নপূরণ করলাম। আমরাও পারি, ইচ্ছা করলেই পারি । মনের ভেতর শুধু এই কথাই বার বার উচ্চারিত হচ্ছিল ।
3 comments
আহ! আমরা যদি আমাদের সময়ে এমন একটা প্রোগ্রামে উপস্থিত হতে পারতাম !
ভালো লাগলো তোমাদের উদ্যোগ।
(Y)
সব কিছু মিলিয়ে ভালোই হয়েছে তাহলে…।