দেয়া না দেয়া ও পাওয়া না পাওয়ার জীবন

জীবনের সংজ্ঞা তো অনেকদিন থেকেই খুঁজে বেড়াচ্ছি, যেদিন থেকে চারিদিকের নানান সমস্যা ও প্রতিকুলতা বুঝতে পেরেছি অন্তত সেদিন থেকেই। তারপর আরও বড় হলাম, বুঝতে পারলাম সবকিছুই আসলে দেনা পাওনা নামের মিথস্ক্রিয়া জাতীয় একটা বলের কারনে হয়। রকমারি দুনিয়ার মতন এই বলের আবার নানান রকম আছে। স্বাভাবিক ভাষায় বললে বলা যায়, এই বল দুই প্রকার। আকর্ষণ ও বিকর্ষণ। কিভাবে? কেন, খুব সোজা তো?

কাউকে কিছু দেয়ার ইচ্ছা – আকর্ষণ

কাউকে কিছু না দেয়ার ইচ্ছা – বিকর্ষণ

কারো কাছে কিছু পাওয়ার ইচ্ছা – আকর্ষণ

কারো কাছ থেকে কিছু না পাওয়ার ইচ্ছা – বিকর্ষণ

অনেক রকমের মানুষই দুনিয়ায় দেখি। কাউকে কিছু দেয়ার ইচ্ছা হলে কারো কথা না শুনেই দিয়ে দেবে। অন্যরা ব্যতিক্রম। তাঁরা চিন্তা করবে, “কিছু কি দেব? কেন দেব? সে আমার জন্যে কি করেছে? করলেই কি দিতে হবে?” এই সব সংকীর্ণ মনের মানুষের জন্যেই আজ দুনিয়ার এই অবস্থা। কিন্তু সবসময় তাদেরও দোষ দেয়া চলে না। কেন জানেন? তাঁরা অনেকেই অনেকের কাছে কিছু আশা করে পান নি, অথবা ভালো কাজ করে কাজের ফল থেকে বঞ্ছিত হয়েছেন, যদিও আমি মানি কাজটাই কাজের পুরস্কার, কিন্তু সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারনে অনেকেই সেটার আসল পুরস্কার থেকে বঞ্ছিত। উদাহারন হিসাবে বলা যায়, এই দেখুন না ত্রিঘাত সমীকরণের ফর্মুলা যার নামে বইতে দেয়া আছে, তিনি সেটা অন্যের কাজ নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। মারকনি আমাদের জগদীশচন্দ্র বসুর কাছ থেকে বিনা তারে বার্তা প্রেরনের খ্যাতি কেড়ে নিয়েছেন। এরকম অনেক আছে। এগুলো তো গুণীজনদের ব্যাপারে বললাম। এই সমাজে এরকম নানান অনর্থ ঘটেই চলেছে। এই জন্যেই কিন্তু অনেক উপকারী উপকারের প্রতিকার পায় না। ইশপের গল্প আজকাল দেখি আর খাটে না, যদিও দুনিয়ায় কেউ আছেন যিনি সবই দেখছেন, হাসছেন আর বলছেন “তোরা আর মানুষ হলি না রে”। ইশপ যদি আজ থাকতেন তিনিও হয়ত তার গল্পে কিছু না কিছু সফটওয়্যার আপডেট করতে বাধ্য হতেন। জিজ্ঞেস করলে হেসে বলতেন, ”আমার শ্যাল পণ্ডিতের পাঠশালার চেয়ে এখনকার কম্পিউটারই ভালো”। দে দে উইন্ডোজ ৭ দুইবার ইনস্টল দে, উইন্ডোজ ১৪ হয়ে যাবে। আর দেখতে হবে না।

কিছু ক্ষেত্রে দেখেছি একশ্রেণীর মানুষ (বিশেষ করে মেয়েরা) ভালোবেসে অনেক ভালভাবেই বঞ্চিত হয়। বেছে নেয় নানান রকমের জীবন ধ্বংসাত্মক কাজ। যার ফলে আসে মৃত্যু। এর মধ্যে আকর্ষণ বিকর্ষণ দুটোই থাকে। সুতরাং হয় উভয় সংকট। মারামারি চুল ছেড়াছেড়ির পর্যায়ে চলে যায়। অনেকেই অনেক জানি, সুতরাং এই বিষয় নিয়ে আর কলম না চালালেও চলবে, থুক্কু কিবোর্ডে টাইপ না করলেও চলবে। এর থেকে ভালো থাকার সবচেয়ে ভালো ওষুধ মনে হয় এই গানটা “এ এক অন্য প্রেমের গান”।

 

যে মেয়েটা প্রতিরাতে বদলায় হাঁতে হাঁতে
তার অভিশাপ নিয়ে চলাই জীবন

এই গানটা আমরা অনেকেই শুনেছি, যারা জানেন না বলে দিচ্ছি। এটা নচিকেতার একটা গানের অংশ। তার সবকটি গানেই জীবন দর্শনের সুন্দর কিছু দিক চলে এসেছে, এসেছে কিছু খারাপ দিকও। যার জন্য অনেকবার তাঁকে আইনের হাঁতে যেতে হয়েছে। ভুল বুঝবেন না, এটাও জীবনের সংজ্ঞার মধ্যেই পড়ে। সব দেশেই অনেক মেয়েরা থাকে যারা একটা সুন্দর স্বাভাবিক জীবন থেকে বঞ্চিত। আমার জানা মতে শুধুমাত্র কতিপয় নিকৃষ্ট মানুষ ছাড়া সবাই জীবিকা নির্বাহের জন্যে নিরুপায় হয়ে এই কাজ করে থাকে। তাদেরকে সম্মান বা সমবেদনা জানানো কোনটাই সম্ভব নয়। সমাজ এর স্বীকৃতি দেয় না। যদি জিজ্ঞেস করি কেন? সমাজ কিন্তু ভয় পেয়ে যাবে। বিরাঙ্গনার সম্মান যদি আমরা দিতে পারি, তাহলে তো এটাও চিন্তা করতে পারি যারা নিরুপায় হয়ে এই কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেরই শুরুটা এই বিরাঙ্গনাদের মতনই যন্ত্রণাদায়ক ছিল। অনেকেই হয়ত আমার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখবেন, আমি কোন পারিপার্শ্বিক দিক থেকে কথাটা বলছি।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে কি হয় তা তো জানি। একদম নিকৃষ্ট মাত্রার পাপ। বলির পাঠা হয় মা-বাবা। তাদেরকে বাসায় রাখতে না পারলে (যে কারনেই হোক, যে কারনই আপনি দেখান, আমি তো দুনিয়া দেখেছি, বুঝতেই পারছেন) অতি সত্তর বৃদ্ধাশ্রমে বদলি করার নোটিশ দেয়া হয়। যে মানুষের হাত ধরে ছোটবেলায় হাটা শিখেছেন, তাঁদের অক্ষমতার বয়সে তাঁদের দিকে একটু ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিলে সেটা আপনার করুনা, ভিক্ষা বা সমবেদনা প্রকাশ করার মাধ্যম হবে না। নিজেকে প্রমান করার অনেক সুযোগ আসে জীবনে, তার মধ্যে একটা সুযোগ এটা। মনে রাখবেন, অনেকের মা-বাবাই নেই, তাঁরা কিন্তু এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এই সুযোগটাকেই সেভাবে দেখুন না। আপনার মা বাবা থাকলেই বুঝবেন আপনি একদিন জীবনে এই সুযোগটা পাবেন। অধীর আগ্রহে বসে থাকুন না সেই সুযোগের অপেক্ষায়। সময়মতন ধরুন না উনাদের হাত একটু। তাঁরা তো অনেকদিন নিজেরা না খেয়ে আপনার উদরপূর্তি করেছে। তার দাম দেয়ার ক্ষমতা তো আপনার নেই।

 

কালের বিবর্তনে তো অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটেছে। ঘটেছে মানব কল্যাণের জন্যেই। কিন্তু আমি এখনও গৌতম বুদ্ধের শিক্ষাগুলোর কথা চিন্তা করি। “মানুষ যখন তার চাওয়া পাওয়া বন্ধ করে দেবে তখনি সে চরম শান্তির স্থিতিতে চলে যাবে”। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, এমন দুনিয়ায় থাকলে তিনি নিঃসন্দেহে তার থিওরিটা পালটাতে বাধ্য হতেন।

আসলেই দেখতে পাচ্ছি গৌতম বুদ্ধের কথাটা ফলেছে। আমরা আজও একের পর এক জিনিস চেয়েই যাচ্ছি। কিন্তু কোনদিনও কি আমাদের চাওয়ার পরিসমাপ্তি ঘটবে? কবে? আর যদি না হয়, তাহলে কি কালের বিবর্তনে যদি কোন ব্ল্যাক হোলের ভিতরে পড়ে যায় পৃথিবী, তার মধ্যেই এই কামড়াকামড়ি চলতে থাকবে? আমার তো মনে হয় তাই।

আমাদের পৃথিবীতে আসবে সেই মানুষ কবে
দেনা পাওনার মধ্যে যে মাপতে সক্ষম হবে

Awnon Bhowmik
Author: Awnon Bhowmik

I know very little to be proud about it. Mathematics enthusiast, possess a lust for mathematical/computational knowledge

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/awnon/2677/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

মন্তব্য করুন