মিলিয়ন ডলারের অঙ্ক

“লটারি !লটারি !মাত্র দশ টাকায় তিরিশ লক্ষ টাকা, যদি লাইগা যায় !”-ঢাকার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এমন কথা শোনেনি খুব কম লোকই পাওয়া যাবে । শর্ট-কার্টে বড়লোক হওয়ার ধান্দায় স্কুলে পড়ার সময় আমিও দু-একবার কিনেছি, কিছুই পাই নাই। উলটো লটারির ফলাফল কিনতে গিয়ে দুই টাকা লস হইসে । লটারি জিতে লাখপতি হয়েছে এমন কাউকে আমি চিনিও না । এখন বিশ্ববিদ্যালয়য়ে পড়ি, কিন্তু মাথায় শর্ট-কার্টের ধান্দা এখনও রয়ে গেছে , রাস্তাও পেয়েছি একটা । রাস্তাটার নাম “মিলেনিয়াম প্রাইজ প্রবলেম”।
যেহেতু আমি গনিতের ছাত্র নামের কলঙ্ক, তাই আগে এক্সামপল পরে থিওরি। ধরুন আপনি পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখলেন একটা মাত্র অঙ্কের উত্তর দিতে হবে। আর উত্তর দিতে পারলেই পুরস্কার এক মিলিয়ন ডলার(৮০*১০,০০,০০০=৮০,০০,০০,০০০ টাকা)! জীবনে প্রথম বার গনিতের ছাত্র হয়ে ভাল লাগছে?
তাহলে আসল কথায় আসি- ২০০০ সালের ২৪ মে আমেরিকার ক্লে ম্যাথেম্যাটিক্স ইন্সটিটিউট(কেমব্রিজ,ম্যাচুসেটস) ঘোষণা করে,তাদের দেওয়া সাতটি গানিতিক সমস্যা যদি কেউ সমাধান করতে পারে তাহলে প্রতিটির সমাধানের জন্য এক মিলিয়ন ডলার করে দেওয়া হবে । এই সমস্যাগুলি হল গনিতের সবচাইতে কঠিন সমস্যা, কারন বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত কেউই এদের সমাধান বের করতে পারেনি। তার চাইতে মজার কথা যিনি এই সমস্যাগুলি বের করেছিলেন তিনি নিজের এদের সমাধান দিতে পারেননি। মানে প্রশ্নকর্তা নিজেই উত্তর জানতেন না।
এই মহান প্রশ্নকর্তার নাম ডেভিড হিলবার্ট (১৮৬২-১৯৪৩), নিবাস জার্মানি । ‘প্রুফ থিউরি’ আর ‘ম্যাথেমাটিকাল লজিক’য়ের জনক এই গনিতবিদকে উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ গনিতবিদদের একজন বলে মনে করা হয়। হিলবার্ট ১৯০০ সালের ৮ অগাস্ট প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত সম্মেলনে ২৩টি গানিতিক সমস্যা উপস্থাপন করেন। এই সমস্যাগুলোর প্রায় সবগুলোর সমাধান করা হয়ে গেলেও বিংশ শতাব্দীর শেষে এসে দেখা গেল, সাতটি সমস্যা এখনও অমিমাংসিত! ততদিনে হিলবার্টের ৪৭ তম মৃত্যূবার্ষিকী চলে এসেছে। এর পরেই ক্লে ম্যাথেম্যাটিক্স ইন্সটিটিউট এই সাতটি সমস্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে।
সমস্যাগুলো হচ্ছে-
P versus NP
The Hodge conjecture
The Poincaré conjecture
The Riemann hypothesis
Yang–Mills existence and mass gap
Navier–Stokes existence and smoothness
The Birch and Swinnerton-Dyer conjecture
যদিও পুরস্কারের অঙ্ক বিশাল,কিন্তু আজ পর্যন্ত মাত্র একটি সমস্যার সমাধান করা গেছে। ২০১০ সালে রাশিয়ান গনিতবিদ গ্রিগরি পেরিলম্যান ‘The Poincaré conjecture’ সমস্যার সমাধান করায় মিলেনিয়াম পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। এখানেও একটু ছোট্ট গল্প আছে- অতিমাত্রায় জ্ঞানী লোকদের কাজের কোন ঠিক-ঠিকানা থাকে না, পেরিলম্যানের ক্ষেত্রেও ঘটনা সত্য।Grigori-Perelman-007

তাই মিলিয়ন ডলার প্রাইজ পেয়েও বাছা পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে দিব্যি দিন কাটাচ্ছে । ঘটনা এখানেই শেষ নয়,পেরিলম্যান ‘ফিল্ডস’ মেডেলের জন্যও মনোনয়ন পেয়েছিলেন । কিন্তু এই দুই পুরস্কার মিলিয়ে প্রায় ২২,০০০,০০০ ডলারের পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেন ! লোকটার মনে হয় পুরস্কার নেওয়ায় অ্যালার্জি আছে।
ইসস, যদি একটা সমস্যার সমাধান করতে পারতাম ! চেষ্টা করে দেখতে পারেন-”বলা তো যায় না,যদি লাইগা যায়

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/fahim/228/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

7 comments

Skip to comment form

  1. হুম ভালো

  2. টাকা কি আসলেই দিব? নাকি ধাপ্পা মারব? ধর যে আমি সব কাজ বাদ দিয়া সমাধান করা শুরু করলাম ,
    সমাধানও করলাম , তারপর দেখা গেল টাকা দিল না! আমি ত মাঠে মারা যামু !!

    1. টাকা না দিলে হরতাল

  3. দাদা টাকা না দিলে আপনিও পেরিলম্যানের মত ভাব নিবেন,”আমি গণিত ভালবাসি,টাকা নয়।”

    1. চল তাইলে শুরু করি। কি কস?

  4. যেহেতু আমি গনিতের ছাত্র নামের কলঙ্ক, তাই আগে এক্সামপল পরে থিওরি।
    কথাটা খুব বেশী ভালো লাগলো 😀
    সহজ সাবলীল ভাষায় অসাধারণ একটি লিখা।
    এবং গণিতবিদ গ্রিগরি পেরিলম্যান দুই পুরস্কার মিলিয়ে প্রায় ২২,০০০,০০০ ডলারের পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
    বুঝাই যাচ্ছে খুবই রহস্যময় চরিত্রের অধিকারী তিনি… চিন্তায় পরে গেলাম !

  5. ভাইয়া তো লোভ লাগায় দিলেন !! 🙂

মন্তব্য করুন