বর্গমূল পরিবারের প্রথম আড্ডা, একটি স্মৃতিময় সন্ধ্যা

20131101_201638

কথা হবে প্রাণখুলে, আমরা বর্গাচাষীরা মিলে।

এই শ্লোগানকে সামনে নিয়ে আজ প্রথমবারের মত হয়ে গেল বর্গমূল পরিবারের মাসিক সাধারন সভা। আজ প্রথম সভাতেই সকলে একমত একটি বিষয়ে যে প্রতিমাসে অন্তত একটি দিন আমরা সকলে একত্রিত হব। বড়ভাই, ছোটভাই মিলে এরকম একটি প্রাণবন্ত আড্ডা আসলে প্রতিমাসে একটি নাহলেই নয়। মনে রাখার মত একটি সন্ধ্যা কাটিয়ে, রাতের খাওয়া কোনমতে শেষ করে বসে গেলাম সব লিখে ফেলার জন্য, ভুলে গেলে তো সব হাপুস… প্রথম এই সন্ধ্যার কথা যে না বললেই নয়। গালিব ভাই এর গল্পের ঝুরি, ধীমানদার প্রাঞ্জল রসিকতা, শাওন ভাইয়ের পিতৃপরায়ন শাসন, উদীয়মান বিজ্ঞানী কাওসার, জুনায়েদ, রাফি, রিয়াজ এবং ইমরান এর হেফাজতে গণিত। আরও কত কি? কথার মাঝে কখন যেন সময় একদম গায়েবই হয়ে গেল। আড্ডার ছলে, রসিকতার ফাঁকে ফাঁকে অনেক গুরুগম্ভীর আলাপও হয়ে গেল। উঠে আসলো, বর্গমূল এর নানা বিষয়, শুরুর কথা, ফেলে আসা সময়, নানান মজার অভিজ্ঞতা এবং বর্গমূল এর সামনের দিনগুলি।

বেশ কিছু সমস্যার উল্লেখের সাথে সাথে উঠে আসলো নতুন নতুন পরিকল্পনা এবং সমস্যার সমাধান ( হাজার হোক গণিতবিদ বলে কথা! )

মজার দুই একটি ঘটনাও ঘটল বটে,

কয়েকটি বিষয় নিয়ে আজ আলোচনা করা হয়েছে, চেষ্টা করছি যতটুকু পারি তা তুলে ধরতে।

  • ১/ বর্গমূল এর অনেকদিনের দাবি বিভিন্ন গণিত বিষয়ক ই-বই নিয়ে একটি অনলাইন গ্রন্থাগার তৈরি করার। শুধু বই নয়, সাথে সাথে থাকবে দুই একটি বই এর রিভিও। কিন্তু কাজটি মোটেও সহজ নয়। এই করা হয়, ওই করা হয় করতে করতে কাজটি করাই হচ্ছিল না, অবশেষে কান্ডারী রুপ ধারন করে ধীমানদা হাজির হলেন। জোর গলায় সবাইকে থামিয়ে দিয়ে সকল দায়-দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে দিলেন। কিন্তু হাজার হোক, আমরাও তো মানুষ। এত বিশাল কাজ তার হাতে তুলে দিয়ে নাকে তেল দিয়ে বসে থাকব তা কি হয়? উহু, মোটেও না। অবশেষে তিনি গালিব ভাই, ইমরান এবং চন্দ্রের সহযোগিতা নিতে রাজি হলেন। সিদ্ধান্ত হল, ই-বুক সেকশন এর কাজ নিয়ে চন্দ্র এবং ইমরান উঠে পড়ে জান কুরবান করে ফেলবে এবং ধীমানদা গ্যালারীতে বসে দুই-এক খান রিভিও লিখে ধন্য করবেন। একাজে গালিব ভাইকে স্বল্প বেতনে সহযোগী হিসেবে নিতে সকলের পীড়াপীড়ি অনেকটা অনিচ্ছাতেই মেনে নিলেন। বিভিন্ন বই এর রিভিও লিখাটা মোটেও সহজ কাজ নয়, কিন্তু শুরুতে ধীমানদার অসামান্য জ্ঞানভান্ডার সকলকে পথ দেখাবে এবং সকলেই উৎসাহিত হবে এই উপসংহারে এসে আমরা ক্ষান্ত দিলাম। আশা করা যাচ্ছে বিভিন্ন গানিতিক ই-বই লাইব্রেরী এবং বিভিন্ন বই এর উপর রিভিও এবং আলোচনার একটি সুন্দর অংশ বর্গমূলে গড়ে উঠবে।
  • ২/ সবাই মিলে একসাথে মাসে অন্তত একদিন সবাই একত্রিত হব, এই ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার আমরা একত্রিত হব। ( সাধারন সভার নামে আড্ডাবাজী এবং খাওয়াদাওয়ার নতুন বাহানা আরকি! )
  • ৩/ এরই মাঝে রবিন অত্যন্ত চমৎকার একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করল, প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক বিভিন্ন গাণিতিক প্রতিযোগিতার কথা উল্লেখ করে এবং সেসকল আয়োজনে গত কয়েক বছরে  আমাদের গণিত বিভাগের দুর্বল ভূমিকার কথা উল্লেখ করে, একটি ছোট্ট দল গঠন করার প্রস্তাব রাখল। এধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনে ইচ্ছুক সবাইকে নিয়ে যদি একটি দল গঠন করা যায়, এবছর যেকোনো আসরের জন্য এখনো আমাদের হাতে অনেক সময় আছে। নিয়মিত সময় করে একসাথে বসলে এবং চর্চা করলে আশা করা যায় সামনের আসরে আমরা ভালো একটি ফলাফল নিয়ে আসতে পারব।
    সকলে অত্যন্ত উৎসাহের সাথে প্রস্তাবটি গ্রহন করল এবং সিদ্ধান্ত হল রবিন আর সবাইকে সাথে নিয়ে চেষ্টা করবে বিভাগ থেকে উৎসাহী গণিতবিদদের খুজে বের করবে এবং সবাইকে এক করে যথাসম্ভব ভালো একটি প্রস্তুতি নিতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহন করবে।
  • ৪/ সামনেই প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছে, এবং এরই সাথে সাথে সকল বর্ষের সকলেরই পরীক্ষা সন্নিকটে। প্রত্যেক বছর পরীক্ষার আগমুহূর্তে প্রস্তুতির জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল বিগত বছরের প্রশ্নসমূহ। এবং, এইসকল প্রশ্ন হাত থেকে হাতে ঘুরে বেড়ালেও সবসময় সহজলভ্য নয়। একারনেই যদি এগুলো একসাথে পিডিএফ আকারে সাজিয়ে ফেলা যায় তাহলে অতি সহজেই সকলের হাতে পৌঁছে যাবে। যেহেতু প্রথম বর্ষের পরীক্ষা সবার আগে তাই চিন্তা করা হল, প্রথম বর্ষের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নগুলো আগে এক করা হবে এবং পিডিএফ প্রস্তুত করা হবে। ফাহিম এবং প্রথম বর্ষের সোহান এর উপর দায়িত্ব পড়ল এসবকিছুর।
  • ৫/ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মজার আইডিয়াটা আসলো রেজা ভাইয়ের কাছ থেকে।
    আচ্ছা আমরা যদি সকলে মিলে এমন একটি কম্পিওটার গেম তৈরি করতে পারি যেখানে খেলার ছলে গ্রাফীক্যালি গণিত এর বিভিন্ন বিষয় উঠে আসবে, বিভিন্ন কনসেপ্ট আরও সহজে অনুধাবন করা যাবে। এখানে বর্গমূলে প্রকাশিত গালিব ভাইয়ের গণিত বিষয়ক শেষ কিছু আর্টিকেল এর কথা না বললেই নয়, ভিডিও প্রেজেন্টেসন এর মাধ্যমে গাণিতিক অনেক কঠিন বিষয় ও সহজ হয়ে যায়। যদিও এরকম একটি কম্পিওটার গেম তৈরি করা অনেক কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ কাজ, বর্গাচাষীরা সবাই এক হলে চিন্তা কিসের? সিদ্ধান্ত হল, আগামী সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এবং এরই মাঝে নিজ নিজ বুদ্ধি খাটিয়ে সবাই চেষ্টা করবে কম্পিওটার গেমটির আইডিয়া ডেভেলপ করার জন্য।

 

বলা যায় এগুলোই ছিল আজকের আড্ডার প্রধান সব কাজের কথা, বিষয়গুলো অনেক গুরুগম্ভীর হলেও পুরো আড্ডা জুরেই ছিল প্রাণের আসর, বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণ এবং প্রাণ খুলে হাসাহাসি। মাঝখানে দুই একজন দুর্বৃত্তের অধিক ওজন সইতে না পেরে একটি টুল ভেঙ্গে পড়ে এবং দুর্বৃত্তরা মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকে, (বলা বাহুল্য আমি নিজেও দুর্বৃত্তদের একজন ছিলাম!!) এছারাও আরও অনেক মজার ঘটনা নিয়ে রঙ্গিন ছিল পুরো সময়টুকু, ক্ষণে ক্ষণে পাশেই মামার দোকান থেকে সবার জন্য চা চলে আসছিলো আর হালকা শীতের আমেজে আড্ডা জমছিল। হুম, সময় করে দুই একটা ছবিও তোলা হয়ে গিয়েছিল।

20131101_20189

 

দেখতে দেখতে বর্গমূল আনন্দময় শৈশব এর মুহূর্তগুলো পাড় করছে, সবাই মিলে বিশাল একটি গাণিতিক পরিবার আমাদের এই বর্গমূল। অনেকগুলো স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা এই পরিবারের বাধন। এই সন্ধ্যায় প্রত্যেকের চোখে সেই স্বপ্নগুলো প্রতিফলিত হচ্ছিল, অনুপ্রেরণা কেমন জানি ছায়ার মত অনেকটা সঙ্গীই হয়ে গেছে এই সন্ধ্যার পর থেকে। এরকম আরও অনেক সন্ধ্যার অপেক্ষায় আছি সকলেই। তরুন গণিতবিদ এবং ছড়াকার জুনায়েদ এর ছোট্ট একটি অনুকাব্ব্য দিয়ে এই সন্ধ্যার স্মৃতিচারণ এর ইতি টানছি।

ঠিক করেছি গণিতকে এবার
চড়াবো ওই মরণ শুলে,
ছড়িয়ে তার গোপন খবর
লেখার ছটায় বর্গমূলে।

 

asd

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/arifin/1515/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

3 comments

  1. দারুণ হইছে লেখা। পোস্টটা “ফিচার পোস্ট” হিসেবে কয়েকদিন নীড় পাতায় পিনআপ করে রাখা উচিত।

    বাই দ্যা ওয়ে, ভাঙ্গা বেঞ্চটার শেষ পর্যন্ত কী অবস্থা হইছিলো তা জাতি জানতে চায় ! 😉

  2. ছড়াটা আমার লিখা 😀 😀

  3. খেলব না। আমি এখানে নাই। এমন দিয়ে আয়োজন করলি!!!

মন্তব্য করুন