সোফি জার্মেইন

সাধারণত আগে  মনে করা হত যে মেয়েরা বিজ্ঞান পড়ার জন্য উপযুক্ত না।তাই মেয়েদের মধ্যে গণিত চর্চাকারীর সংখ্যা ছিলো কম। যে দুই একজন ছিলো তাদেরকেও প্রচারে আসতে দেয়া হত না। এমনই একজন ছিলেন সোফি জার্মেইন।

সোফি জার্মেইনের জন্ম ১৭৭৬ সালের ১ এপ্রিল, ফ্রান্সের প্যারিসে, ফরাসি বিপ্লবের সময়। তার বাবা ছিলেন এম্ব্রোয়েস ফ্র্যাকোইস জার্মেইন এবং মা ছিলেন মেরি জার্মেইন।

sophie

১৩ বছর থেকেই সোফির গণিতের প্রতি আগ্রহ জন্মায়।ওই সময় সারাদিন বাসায় থাকতে হতো তাকে । তখন তার অধিকাংশ সময় কাটত তার বাবার লাইব্রেরিতে। ওই সময় একটি বইয়ে রোমান সৈনিকের হাতে মহাগণিতজ্ঞ আর্কিমিডিসের মৃত্যুর কাহিনী পড়েই এ আগ্রহের সূচনা হয় তার। তার মনে কৌতুহল জন্মেছিলো যে, গাণিতিক সমস্যায় আত্মমগ্ন থাকা একজন গণিতজ্ঞ কোনো সৈন্যের প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তাহলে নিশ্চয়ই ম্যাথেমেটিকস পৃথিবীর সবচেয়ে মনোজ্ঞ বিষয়!!

সোফি কোনো শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই অংকে পারদর্শী হয়ে উঠেন। কিন্তু তার বাবা মা তার গণিত পড়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। তাদের এক বন্ধু লিখেছেন যে, সোফির বাবা কিভাবে সব মোমবাতি নিয়ে যেতেন শুধুমাত্র তাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য। তারপরও বাবা মার নজর এড়িয়ে গভীর রাতে সোফি পড়াশোনা করতেন।

সোফির নাম্বার থীওরিতে অনেক আগ্রহ ছিলো। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান ছিলো ফার্মার শেষ উপপাদ্যে।তিনি অনেক বছর কাজ করেন ফার্মার উপপাদ্য নিয়ে।  সোফি জার্মেইন ১০০-এর ছোট সব মৌলিক সংখ্যার জন্য উপপাদ্যটি প্রমাণ করেছিলেন। সোফি এমন কিছু প্রাইম সংখ্যা এর কথা বলেছেন যার জন্য ফার্মার উপপাদ্য – x^n +y^n =z^n ইকুয়েশনের কোনো সলিউশন থাকবে না।[ এই প্রাইম গুলোকে বলা হয় সোফি জার্মেইন প্রাইম অর্থাৎ যদি কোনো প্রাইম সংখ্যা p ও 2p+1 উভয়ই প্রাইম হয় তাহলে p কে বলা হয় সোফি জার্মেইন প্রাইম । ] কিন্তু এর জন্য তিনি প্রথমে কোনো স্বীকৃতি পান নি।

পরবর্তীতে সামাজিক কারণে ছেলেদের ছদ্মনামে বিখ্যাত গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী : জে.এল.ল্যাগরেঞ্জ, কার্ল ফ্রেডারিক গাউস,লিজেন্ডার-জোসেফ ফুরিয়ারের সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলেন।সোফি ভয়ে ছিলেন যে তার গবেষণার কোনো মূল্যই দেয়া হবে না কারণ সে একটি মেয়ে। এই জন্যে তিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।

ফ্রান্সের  সায়েন্স একাডেমী জার্মান পদার্থবিদদের মধ্যে স্থিতিস্থাপকতুল্যের কম্পাঙ্কের ওপর মৌলিক গাণিতিক সূত্রের ব্যাখ্যার একটি প্রতিযোগিতার ঘোষণা দিয়েছিল ওই সময়। এর জন্য ওই প্রতিষ্ঠানটি মাত্র দুই বছর সময় নির্ধারণ করে দেয়। ১৮১১ সালে ওই প্রতিযোগিতায় সোফিই একমাত্র লিখিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। কিন্তু শিক্ষানীতিবহির্ভূত ছদ্মনাম উপস্থাপন করায় তাকে পুরস্কার দেওয়া হয়নি। বিখ্যাত গণিতবিদ লাগ্রেঞ্জরের পরামর্শক্রমে ১৮১৬ সালে তিনি তৃতীয়বারের মতো ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং স্থিতিস্থাপক তলের কম্পাঙ্কের ওপর তার নিজস্ব গবেষণার ভিত্তিতে জয়লাভ করেন।

তার এই গবেষণার জন্য এবং ফার্মার উপপাদ্যে অবদানের জন্য তাকে ফ্রান্সের সায়েন্স একাডেমী মেডেল প্রদান করে। তিনি ছিলেন ফ্রান্সের প্রথম নারী যে কিনা কোনো সায়েন্স একাডেমীতে শিক্ষা গ্রহণ ছাড়াই সফলতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৮৩১ সালে গণিতিবিদ কার্ল ফ্রেডারিক গাউসের সুপারিশে গেটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয় যখন তাকে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তার আগেই তিনি ২৭ জুন ১৮৩১ সালে মৃত্যুবরণ করেন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে।

নাফিসা রায়হানা
Author: নাফিসা রায়হানা

Be less curious about people and more curious about ideas-- Marie Curie.

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/nafisa-raihana/2418/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

4 comments

Skip to comment form

  1. ভালো লিখছো।

  2. সোফি জার্মেইন আসুক আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকেও।

    1. asteo pare, manush ke underestimate kora thik na 😀

  3. এই সুন্দর লেখাটি আসলেই অস্থির হয়েছে। লেখাটিতে সব কটি বর্ণের সুষম বিন্যাস, দীপ্তিময় আলোকছটা, অন্তর্নিহিত তাৎপর্য এবং ধ্রুপদী সত্ত্বা সুন্দর অবয়বে এক অতিপ্রাকৃত আবহ সৃষ্টি করেছে। তাই লেখাটা দেখেই বিমলানন্দে লাইকালাম! ভাল্লাগছে বিষয়ডা। এরকম আবারও চাই …

মন্তব্য করুন