সাইকেল- ৩ (গিয়ার সিস্টেম)

আজকে আলোচনা করব গিয়ার সাইকেলের / Mountain Bike এর সুবিধা এবং গিয়ার কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে।

ক্রাঙ্ক আর ক্যাসেট নিয়ে গত পর্বে আলোচনা করেছিলাম। ক্রাঙ্ক এ সাধারণত ৩ টি প্লেট থাকে আর ক্যাসেটে ৬-১০ টি । আমি এখানে ৮ টি প্লেট (আসলে স্পীড বলে) ক্যাসেট নিয়ে আলোচনা করব।
SRAM_X9_Crank_FATBIKE_GXP100_Front_md
SH-CSM980-NCL-TOP

ক্রাঙ্ক বা ক্যাসেটে প্রতিটি প্লেট কাটা যুক্ত থাকে যাকে কগ (Cog) বলা হয়।

ক্রাঙ্ক এর স্পীড প্লেট হিসাব করা হয় বাইরের দিক থেকে অর্থাৎ সবচেয়ে বাইরের বড় প্লেট টি ৩ স্পীড , এর পর ক্রমশ ভিতরের গুলো ২ এবং ১ স্পীড। বড় ব্যাসের হয়ার ৩ স্পীদে কগের সংখ্যা বেশি থাকে, বাকি গুলো তে ক্রমশ কমতে থাকে।
ক্যাসেটের ক্ষেত্রে হিসাব একই কিন্তু প্লেটের আকার উল্টো ভিতরের দিকের বড় প্লেট ১ স্পীড এভাবে বাইরের দিকে ২,৩,…,৮ স্পীড । বড় ব্যাসের হওয়ায় ১ স্পীডে কগের সঙ্খ্যা বেশি । ২,৩,… আস্তে আস্তে কগের সংখ্যা কমতে থাকে।

যেহেতু ক্রাঙ্ক এবং ক্যাসেট উভয় এর স্পীড ই পরিবর্তন যোগ্য তাই আমি একটি কি বোঝার সুবিধার জন্য স্থির ধরি । এক্ষেত্রে ক্রাঙ্ক এর টা ধরে নিই ২ স্পীডে আছে।
ধরে নেই ক্রাঙ্ক এ ২ স্পীডে বা প্লেটে ৬৪ টি কাটা বা কগ আছে। আর ক্যাসেটে ১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮ নং এ যথাক্রমে ৩২,২৪,২০,১৬,১২,৮,৪ টি কগ আছে।***

এখন ক্যাসেট সম্পুর্ন একবার ঘুরলে পিছনের চাকা একবার ঘুরবে। চেইন যদি ক্যাসেটের ১ নং স্পীডে থাকে তাহলে চেইন কে ৩২ টি কগ অতিক্রম করলে ক্যাসেট একবার ঘুরবে অর্থাৎ চাকা একবার ঘুরবে। তেমনি ২ নং স্পিডের ক্ষেত্রে ২৪, এভাবে ৮ নং এর জন্য ৪ টি কগ অতিক্রম করলে পিছনের চাকা সম্পুর্ন একবার ঘুরবে।

এখন ধরে নিলাম চাকার পরিধি ২ মিটার। তার মানে চাকা ১ বার ঘুরলে ২ মিটার পথ অতিক্রম করবে।
এখন ধরে নেই চেইন ক্যাসেটের ১ নং স্পিডের প্লেটে আছে। তার মানে
চাকা ঘোরার সংখ্যা= ক্রাঙ্ক এর কগ এর সংখ্যা / ক্যাসেটের কগ এর সংখ্যা
তাহলে চাকা ঘোরার সংখ্যা= ৬৪/৩২= ২
তার মানে ক্যাসেটের ১ নং স্পীডের চেইন থাকলে পুরো প্যাডেল একবার ঘুরালে পিছনে চাকা ২ বার ঘুরবে, তার মানে ২*২=৪ মিটার দুরত্ব অতিক্রম করবে।
এভাবে হিসাব করে নিচে একটি টেবিল দেয়া হল –

ক্যাসেটের স্পীড সংখ্যা—-চাকা ঘোরার সংখ্যা—-অতিক্রান্ত দুরত্ব
— ১ —————- ২ ————৪ মিটার
— ২ ————— ২.২৮ ——– ৪.৫৬ মিটার
— ৩ ————— ২.৬৬ ——- ৫.৩২ মিটার
— ৪ —————- ৩.২ ——- ৬.৪ মিটার
— ৫ —————- ৪ ——– ৮ মিটার
— ৬ —————– ৫.৩৩ ——- ১০.৬৬ মিটার
— ৭ —————- ৮ ———- ১৬ মিটার
— ৮ —————– ১৬ ——— ৩২ মিটার

এই চার্ট থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে , যখন সর্বোচ্চ গিয়ার অর্থাৎ ৮ এ থাকবে তখন ১ টি প্যাডেল মেরেই ৩২ মিটার যাওয়া যাবে। তাহলে বাস্তবে মনে হবে সব সময় ৮ গিয়ারে রেখে চালা লেই তো ভালো বেশি গতিতে যাওয়া যাবে। কিন্তু এর মধ্যে কথা আছে। কেউ চাইলেই ৮ স্পীডে দিয়ে সাইকেল চালানো শুরু করতে পারবে না অথবা সীমাহীন কষ্ট হবে। কারণ সে ক্ষেত্রে আপনার পা দিয়ে এমন শক্তি দিতে হবে যেন তা একটি মাত্র প্যাডেলে ৩২ মিটার যায়। কিন্তু এক সাথে এত শক্তির যোগান দেয়া খুবই কষ্টকর ব্যাপার। তাই প্রথমে ১/২/৩ গিয়ার (নিজের পায়ের শক্তির উপর)দিয়ে শুরু করতে হয়। পরে যখন গতি জড়তা চলে আসে তখন আস্তে আস্তে গিয়ার বাড়ানো হয়। এতে যখন আপনি ৮ গিয়ারে চালাবেন তখন ও মনে হবে ২/৩ গিয়ারেই চালাচ্ছেন। মানে গতি জড়তার কারনে আপনাকে খুব বেশি শক্তি আর দেয়া লাগবে না কিন্তু সাইকেলে গতি বাড়তে থাকবে। তেমনি ভাবে আপনার গতি যখন কমাতে হবে তখন গতি কমিয়ে আপনার সুবিধা মত গিয়ার ১/২ কমিয়ে নিলে আর পায়ের উপর বাড়তি চাপ অনুভুত হবে না।

ক্রাঙ্ক এর শুধু মাত্র ২ নং স্পীড নিয়েই এতক্ষন আলোচনা করলাম। বাকি দুটির ক্ষেত্রেও একই হিসাব। ৩ নং স্পীডে সাইকেল আরও জোরে চলবে। আর ১ নং এ আস্তে। ১ নং ব্যবহার করা হয় সাধারনত উচু যায়গায় উঠতে যেমন কোন ব্রিজে উঠতে ।

মোটর বাইকে ৪/৫/৬ টা গীয়ার থাকলেও সাইকেলে এত গুলো হওয়ার কারণ হল মানুষ হুট করেই বেশি শক্তির যোগান দিতে পারে না। তাই অনেক গুলো গিয়ারের মাধ্যমে আস্তে আস্তে শক্তির যোগান দেয়। গীয়ার সিস্টেম মোটর বাইকেও একই ভাবে কাজ করে , শুধু মাত্র পার্থক্য হলো মোটর বাইকে ইঞ্জিনের কাজ আপনি নিজে করছেন পা দিয়ে আর ফুয়েল হিসেবে খরচ হচ্ছে আপনার ফ্যাট!!

আমাদের দেশটা ক্ষুদ্র হলেও সমস্যায় বেশ খানিকটা এগিয়ে। আমাদের জীবনের প্রায় ১৫-২০ শতাংশ মুল্যবান সময় নষ্ট হয় ট্রাফিক জ্যামে বসে। কি দরকার ট্রাফিক পুলিশকে গালমন্দ করার? কি দরকার বাস ড্রাইভার দের তিক্ত কথা শুনানোর? কি দরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ১৪ গোষ্টি উদ্দার করার আমরা বেশির ভাগই দৈনিক ৫-১০ কিমি এর বেশি যাতায়াত করি না। এত টুকু দুরুত্ব সাইকেল দিয়ে সহজেই যাতায়াত করা যায়। এতে আমাদের সময়ও বাচলো , নিজেদের শরীর ও ভালো থাকলো। বুড়ো বয়সে যখন নাতি নাতনীর সাথে গল্প করে কাটানোর কথা তখন লম্ফ জম্ফ করার কি দরকার? ?? আসুন নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ না দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করি।

#SAFE CYCLING
#HAPPY CYCLING

*** কগের সংখ্যা , চাকার পরিধি, বোঝার সুবিধার জন্য সুবিধা জনক নাম্ববার ধরা হয়েছে ।

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/zahidul-islam-sohag/3416/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

2 comments

  1. চালায় যা বন্ধু

    1. ইহাই শেষ পর্ব ছিলো বন্ধু 😛 😛

Leave a Reply to Zahidul Islam Sohag Cancel reply