সাইকেল-২

গতপর্বের ধারাবাহিকতায় আজ আবার বিরক্তি কর বক বকানি শুরু করলাম । গত পোস্টে আলোচনা করেছিলাম সাইকেলের ফ্রেম, ফর্ক এবং ব্রেক নিয়ে। আজ আলোচনা করব সাইকেলের বাকি পার্টস গুলো নিয়ে।
# ডেরা (গিয়ার)-
অনেকেই গিয়ার বললেও আসলে এটি গিয়ার না এর নাম ডেরা যা আপনার সাইকেল কত গিয়ারে চলবে বা চালাতে চান তা নিশ্চিত করে। সাইকেলে সাধারণত দুটি ডেরা থাকে । একটি সামনে আরেকটি পিছনে। দুটির গঠন এবং কার্যপ্রনালী আলাদা।সামনের টিকে ফ্রন্ট ডেরা এবং পিছনেরটিকে রিয়ার ডেরা বলা হয়।

১. রিয়ার ডেরাঃ ফিক্সি, বিএমেক্স (দুই প্রকারের সাইকেল, পরবর্তী পোস্টে আলোচনা করব) এই দুই প্রকার সাইকেলে কোন ডেরা থাকে না। বাকি সব সাইকেলেই রিয়ার ডেরা থাকে। এই ডেরার সায়হে চেইন যুক্ত থাকে। এই ডেরা বিভিন্ন স্পিডের ক্যাসেটের(পরবর্তীতে আছে বিস্তারিত) জন্য বিভিন্ন হয়। রিয়ার ডেরা সাধারনত ৬-১০ স্পিডের জন্য হয়ে থাকে। সাধারনত বাম শিফটারের সাথে এর ক্যাবলের এক প্রান্ত ডেরার সাথে যুক্ত থাকে। ফলে শিফটার দিয়ে গিয়ার কমানো বাড়ানো হয়।
Shimano_xt_rear_derailleur
২. ফ্রন্ট ডেরাঃ এই ডেরা কোন কোন সাইকেলে থাকে কোন কোন সাইকেলে থাকে না। এই ডেরার সাথে চেইন যুক্ত থাকে না। গিয়ার শিফটের সময় এয় শিফটার শুধু মাত্র চেইন কে ধাক্কা মেরে পরবর্তী কিংবা আগের প্লেটে ফেলে দেয়। ডান শিফটারের সাথে এর ক্যাবল যুক্ত থাকে। এটি ৩ টি গিয়ার নিয়ন্ত্রন করে।
এই ডেরা গুলো এক- তিন মাস পর পর টিউনিং করাতে হয়।
SRAM_Force_front_derailleur
# শিফটারঃ সহজে চেনার জন্য এক বাক্যে বলা যায় মানুষ সাইকেল দেখলেই যা নিয়ে টিপাটীপি করে সেটাই শিফটার।শিফটারের কাজ গিয়ার কততে থাকবে তা নিয়ন্ত্রন করা। দুটি ডেরা থাকলে শিফটার থাকে ২ টি , ১ টি ডেরা থাকলে শিফটার থাকে ১ টি। দুটি শিফটার যেহেতু দুই ধরনের ডেরা নিয়ন্ত্রন করে তাই দুটি শিফটার একটু আলাদা হয়। একটি ফ্রন্ট ডেরা নিয়ন্ত্রনকারী শিফটার সাধারনত ২-৩ স্পীডের হয়। আর রিয়ার ডেরা নিয়ন্ত্রনকারী শিফটার ৬-১০ স্পিডের হয়। V ব্রেক এবং মেকানিক্যাল ডিস্ক ব্রেকে (কিছু ক্ষেত্রে) শিফটার এবং ব্রেক লিভার এক সাথে সংযুক্ত থাকে , কিন্তু হাইড্রোলিক ব্রেকের ক্ষেত্রে সবসময় আলাদা থাকে।
শিফটার দুই ধরনের হয় । ম্যাকানিকাল , যা আমরা সবসময় দেখি , অন্যটি ইলেক্ট্রিকাল (বাংলাদেশে নাই )। ম্যাকানিকালে একটি ক্যাবল থাকে যা ডেরার সাথে যুক্ত থাকে। ফলে কয়েক মাস ব্যবহার করার পর এটি টিউনিং করানোর প্রয়োজন পড়ে। অন্য দিকে ইলেক্ট্রিকাল শিফটারে খুবই নিখুত ভাবে শিফটিং হয় এবং একবার ঠিকভাবে সেট করলে আর টিউনিং এর দকার পড়ে না। ম্যাকানিকাল শিফটারের দাম ৭০০ থেকে শুরু করে ৬০০০ টাকা ও আছে। ইলেক্ট্রিকালের দাম বলা যাবে না , পাবলিক দৌড়ানি দিবে 😛
display_Bike_Gear_Shifters
# ক্যাসেটঃ এটি পিছনের চাকার সাথে যুক্ত থাকে । যার সাথে চেইন সংযুক্ত থাকে। ফিক্সিতে ক্যাসেটের ১ টি প্লেট থাকে (স্পীড বলা হয়), তাই এটির নাম ফিক্সি। অর্থাৎ সিঙ্গেল স্পীড। কিন্তু যেই সাইকেলে গিয়ার নিয়ন্ত্রন করা যায় তাতে ৬-১০ স্পিডের ক্যাসেট থাকে।
SH-CSM980-NCL-TOP
# চেইনঃ সবারই পরিচিত। নতুন করে কিছু বলার নাই। তবে স্পিডের উপর ভিত্তি করে ৬,৭,৮,৯,১০ স্পিডের জন্য আলাদা আলাদা চেইন রয়েছে।
# ক্রেংকঃ আমরা যাকে প্যাডেল নামে চিনি, আসলে প্যাডেল না, সামনে গোলাকার যেই জিনসটি ঘোরানো হয় তাই ক্রাংক। সিঙ্গেল , ডাবল ও ৩ স্পিডের হয়ে থাকে।
SRAM_X9_Crank_FATBIKE_GXP100_Front_md
# প্যাডেলঃ যেটায় আমরা পা সেট করে চাপ দেই। প্যাডেল প্ল্যাস্টিক, লোহা , এয়ল এর হয়ে থাকে , মানের উপর নির্ভর করে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০০ টাকারও প্যাডেল আছে। 50-3205-NCL-ANGLE
# হাবঃ চাকার কেন্দ্রে যেই জিনিসটি ফ্রেম এবং ফর্কের সাথে সংযুক্ত থাকে তাই হাব।হাব সাধারনত ৩৬ এবং ৩২ ছিদ্রের হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে ৩২ ছিদ্রের টাই বেশি পাওয়া যায়। বর্তমান হাব গুলোর একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু দুঃখিত নিরাপত্তার স্বার্থে তা লিখলাম না। হাব সাধারনত তিন ধরনের হয়।
V ব্রেকের জন্য হাব আলাদা, ডিস্ক ব্রেকের জন্য আলাদা। ডিস্ক ব্রেকে আবার ডিস্ক (রোটর)লাগানোর উপর ভিত্তি করে দুই ধরনের পাওয়া যায়। একটি ৬ বোল্ট হাব অন্যটি সেনট্রাল লক হাব ।kfs901_krs903_road_bike_hub
# রিমঃ রিম সাধারনত লোহা বা এলয় এর হয় থাকে , হাবের সাথে মিল রেখে রিম ৩২ বা ৩৬ ছিদ্রের হয়ে থাকে। এছাড়া রোড বাইক , 29 er , 26 এর রিম আলাদা। 02006b
# টায়ার & টিউবঃ রোড বাইক , 29 er , 26 এর জন্য আলাদা আলাদা টায়ার টিউব। মানের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন দামের হয় থাকে।
এই ছিলো সাইকেলের সব পার্টস। পরবর্তী পর্বে গিয়ার কিভাবে কাজ করে , কিভাবে চালালে কম শক্তি দিয়ে বেস্ট আউট পুট পাওয়া যাবে সেটা নিয়ে আলোচনা করব।
[চলবে]

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/zahidul-islam-sohag/3404/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

3 comments

  1. মাথা ঘুরতাছে। :p

    1. এবার বেশি এলোমেলো অথবা জটিল ভাব লিখে ফেলছি আমারও মনে হচ্ছিলো 😛 😛

  2. অনেক কিছু জানলাম।

মন্তব্য করুন