সাইকেল -১

ভয় পাওয়ার কোন কারণ নাই । গনিত নিয়ে কিছু লিখতে যাচ্ছি না (আসলে লিখতে পারি না) । সাইকেল নিয়ে সবারই এখন কম বেশি উৎসাহ। কিন্তু প্রায়ই একটা কথা শোনা যায়, বিশেষ করে মুরব্বীদের কাছে থেকে, – ‘ আমরা তো ৩-৪ হাজার টাকায় সাইকেল কিনে চালিযেছি , তবে এগুলোর এত দাম কেন ?’ যুক্তি সঙ্গত প্রশ্ন। প্রশ্নটা করতে ২০ সেকেন্ড লাগলেও আপনি তাকে ব্যাপারটি ২০ মিনিটেও বুঝাতে পারবেন না। আজকে আমি সেই ব্যাপারটি ই আলোচনা করব ।সাইকেলের প্রত্যকটি খুটি নাটি ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করব ।
10891782_780994218653663_3915561971360544391_n
#ফ্রেমঃ
প্রথমেই যেই ব্যাপারটি আসে তা হলো ফ্রেম। যার সাথে সাইকেলের বাকি অংশ গুলো সংযুক্ত থাকে। ফ্রেম প্রধানত ৩ ধরনের হয়ে থাকে।
১. আয়রন ফ্রেম
২. এলয় ফ্রেম
৩. কার্বন ফ্রেম
AIR9_Slate
carbon-fiber-mtb-bike-frame-26-mountain-bicycle
১.আয়রন ফ্রেমঃ নাম শুনেই বুঝতে পারছেন লোহা দিয়ে তৈরী। তাই এর ওজন ও অনেক বেশি। আর লোহার দাম তুলনা মূলক কম হওয়ায় এর দামও কম। মুরব্বিরা এই ফ্রেমের সাইকেলই চালাতেন।
২. এলয় ফ্রেমঃ এই ফ্রেম আয়লুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি। তাই ওজনে মোটামোটি আয়রন ফ্রেমের অর্ধেক। আর এই ফ্রেম আয়রন ফ্রেম থেকে অনেক মজবুত হয়। এই ফ্রেমের মধ্যে আবার কিছু ফ্রেম সিঙ্গেল বাটেড(একটি লেয়ার থাকে) কিছু ডাবল বাটেড (দুটি লেয়ার থাকে)। বর্তমানে ১৫ হাজারে উপরে যত সাইকেল দেখছেন বেশির ভাগের ফ্রেমই এলয় ফ্রেম। তার মানে এই নয় যে সব একই মানের ।
৩. কার্বন ফ্রেমঃ কার্বন ফাইবার দিয়ে এই ফ্রেম তৈরী । সবচেয়ে মজবুত ফ্রেম। এই ফ্রেমে কোন জোড়া থাকে না। এর দাম ও অনেক বেশি। বাংলাদেশে থাকলে দুই একটা থাকতে পারে । এই ফ্রেমে খুবই হালকা হওয়ায় সাইকেল রেসিং এ ব্যবহার করা হয়। এই ফ্রেম একবার ভেঙ্গে গেলে তা আর ঠিক করা যায় না।
#ফর্কঃ
সাইকেলে সামনের চাকা যেই লম্বা দন্ডের সাথে যুক্ত থাকে সেটাই হল ফর্ক। ফর্ক হিসাব করা হয় তা কত মিমি পর্যন্ত নিচে নামতে পারবে তা দিয়ে। ফর্ক সাধারনত ১০০মিমি, ১২০মিমি, ১৪০ মিমি হয় ।
ফর্ক আবার কয়েক প্রকার আছে । আমি এখানে বহুল ব্যবহৃত দুটি ফর্ক নিয়ে আলোচনা করব।
১. কয়েল ফর্কঃ এই ফর্কের ভিতর স্প্রিং থাকে। ফলে ব্রেক করলে সামনের অংশ নিচে ডেবে দ্রুত সাইকেল থামিয়ে দিয়ে সহায়তা করে। এছাড়া উচু নিচু রাস্তায় নিজের মত করে ফর্ক আপ ডাউন করে আরোহীকে সমতলের মত অনুভুতি নিশ্চিত করে। এই ফর্ক যত মিমি লেখা থাকে তার ৬০-৭০ % ডাউন হয়। এই ফর্কের দাম ১০০০ থেকে শুরু করে ১০০০০।
T1ZvzFXgFhXXbm61wZ_032129
২. এয়ার ফর্কঃ এই ফর্কের ভিতর স্প্রিং থাকলেও বাতাসের চেম্বার উঠা নামা নিশ্চিত করে। এটির কার্যক্ষমতা কয়েল ফর্কের দ্বিগুন। এটিতে যত মিমি লেখা থাকে ঠিক তত মিমি ই ডাউন হয়। আর এটি কয়েল ফর্কের চেয়ে অনেক স্মুথলি কাজ করে। কয়েক মাস পর পর ফর্কে হাওয়া দেয়া লাগে। এই ফর্কের দাম ১৫০০০ থেকে শুরু করে ……… বলা যাবে না , পাবলিক দৌড়ানি দিবে 😛
32599
#ব্রেকঃ
এখনকার সাইকেলে তিন ধরনের ব্রেক দেখা যায়।
১. ভি (V) ব্রেক
২. মেকানিক্যাল ডিস্ক ব্রেক
৩. হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক
আগের দিনের ফনিক্স সাইকেলে বা রিকশাতে আমরা যেই ব্রেক দেখি তা হলো ইউ(U) ব্রেক
১.ভি (V) ব্রেকঃ এন্ট্রি লেভেলের ব্রেক । এই ব্রেকে চাকার দুই পাশে দুটি ব্রেক প্যাড V এর মত থাকে যা রিমকে চাপ দিয়ে সাইকেল থামায়। এই ব্রেকের কার্যকারিতা অন্য দুটি ব্রেক থেকে কম , পানিতে এই ব্রেক কম কাজ করে। এই ব্রেকের দাম ও তুলনা মুলক ভাবে কম।
vbrake-overallsm
২. মেকানিক্যাল ডিস্ক ব্রেকঃ অনেকে ডিস্ক(রোটর) দেখলেই মনে করে হাড্রোলিক ব্রেক। এই ব্রেকে ডিস্ক থাকে। দুটি মেটালের পাত ডিস্কে চাপ দিয়ে সাইকেল থামায়। একটি ক্যাবল থাকে ব্রেক লিভারে। যাতে টান পরলেই পাত দুটো ডিস্ক কে চেপে ধরে। পানিতে এই ব্রেক আরো ভালো কাজ করে। এর দাম ও চি ব্রেক থেকে বেশি । ১ জোড়া ব্রেক ৮০০ থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত আছে।
avid_disc7
৩. হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেকঃ মাদার অফ অল ব্রেক। এই ব্রেকে কোন ব্রেক ক্যাবল নেই। একটি সরু পাইপের ভিতর পুরোটাই তেল থাকে। এই ব্রেকে ব্রেক লিভারে চাপ দিলে একটি পিষ্টন তেলে চাপ দেয়। তেল আবার মেটালের দুটো পাত কে (ব্রেক প্যাড বলে), পাত দুটো ডিস্ক কে চেপে ধরে। এই ব্রেক অন্য সকল ব্রেকের চেয়ে দ্রুত এবং ভালো কাজ করে। এই ব্রেকে আরেকটি সুবিধা হলো এই ব্রেক ধরতে হাতের উপর কোন চাপ পরে না , ১ আঙ্গুল দিয়েই এই ব্রেক ধরা যায়। এই ব্রেকের দাম ও অনান্য ব্রেকের চেয়ে বেশি। দাম ৫৫০০ থেকে ………… বলা যাবে না , পাবলিক দৌড়ানি দিবে 😛
formula-rx-brake

পরবর্তী পর্বে গিয়ার , শিফটার হাব ,ক্যাসেট, চাকা নিয়ে আলোচনা করব
[চলবে]

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/zahidul-islam-sohag/3357/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

6 comments

Skip to comment form

  1. সাইকেল কিনছিলাম একসময়, কিন্তু পড়ালেখা করতে হয় নাই। ওস্তাদ বন্ধুরে সাথে নিয়ে গেছিলাম, চৌদ্দহাজার টাকা দিয়ে একটা ইলুনয়েস না কি যেন নাম একটা কিনে দিছিল। যাক এবার ওস্তাদ হয়ে দেখে শুনে কেনা যাবে।

    1. 🙂

  2. ভালো জিনিস। বেশ ক’দিন ধরেই সাইকেলের কথা ভাবছিলাম। 😀

  3. খালি লিখে দিলে তো হবে না !
    সাইকেলে হাতে-কলমে চালাইয়া দেখতে দিতে হবে !! :v

    1. আগে যা যা লিখলাম সব মুখস্ত বলতে হবে 😛

    • Masum Hamid on June 5, 2018 at 4:26 pm
    • Reply

    গতকাল সাইকেল কিনে নিয়ে আসলাম মাত্র। কিনার আগে পড়লে অারো বুঝে কিনতে পারতাম।

মন্তব্য করুন