গণিতে নারী- ১ : মেরি সোফি জারমেইন

tumblr_inline_mzq95yOV4X1riz1wu

 

মেরি সোফি জারমেইন ১৭৭৬ সালের ১লা এপ্রিল প্যারেসি জন্মগ্রহণ করেন। পরিবার এবং সমাজের প্রতিকূলতা পেরিয়ে গণিতের জগতে তার যাত্রা  ছিল বেশ কঠিন এবং নিষঙ্গ ।

১৭৮৯ সালে প্যারিস বিপ্লবের সময় ১৩ বছর বয়সী সোফি তখন ঘরে বন্ধি, অবসর কাটতো বাবার লাইব্রেরিতে। সেখানে গণিতের বইগুলো তাকে বেশ আকৃষ্ট করে, তার মনে কৌতূহল জাগায়,বিশেষ করে আরকেেমেডিসের কাজগুলো তাকে মুগ্ধ করে। আইজাক নিয়টন এবং লিওনার্ড অয়েলার এর গাণিতিক সূত্রগুলো বুঝার জন্য নিজে নিজেই লেটিন এবং গ্রিক শিখে ফেলে । মেয়ের গনিতের প্রতি এই আগ্রহ পরিবারের কাছে মোটেও গ্রহনযোগ্য ছিল না, রাতের বেলা যেন পড়তে না পারে সেজন্য ঘরের সব মোমবাতি তার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হত। কিন্তু সোফি ছিল নাছরবান্দা, ঠিকই সে রাতের আধারে মোমবাতিগুলো চুরি করে, কম্বলের নিচে গণিতের রহস্যময় জগতে হারিয়ে যেত ! মেয়ের গণিতের প্রতি এই নিষ্ঠাড় কাছে পরিবার হার মানে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে নিজের মত কাজ করতে ছেড়ে দেয় ।

বিপ্লব শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আবার প্রাণ ফিরে পায়, কিন্তু সেখানে মেয়েদের স্থান ছিল না। সোফি জারমেইন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ না পেলেও সেখানে অধ্যয়নরত ছাত্রদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন এবং তাদের কাছ থেকে ক্লাসের নোটগুলো নিয়ে নিজে নিজেই পড়তে শুরু করেন। একটি সময় তার কাজগুলো একজন পুরুষের ছদ্মনামে ইকোল পলিটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বি জে.এল. লেঙ্গরেন এর কাছে পাঠান। সোফির কাজ তাকে বিস্মিত করে এবং পরে যখন তিনি জানতে পারেন সোফি পরুষ নয় নারী, তিনি সত্যিই অবাক হন এবং পরবর্তীতে সোফিকে নানাভাবে সাহায্য করেন।

সোফি জারমেইনের পছন্দের বিষয় ছিল সংখ্যাতত্ত্ব(Number Theory) এবং স্থিতিস্থাপকতা(Elasticity)। প্যারিস একাডেমি অব সায়েন্স আয়োজিত প্রতিযোগিতায় পর পর দুবার তার স্থিতিস্থাপকতার উপর একটি গবেষণা পত্র বাতিল করা হয়, কিন্তু তিনি হাল ছেড়ে দেননি, তৃতীয়বার তিনি আবার চেষ্টা করেন এবং সফল হন এবং প্রথমবারের মত কোন নারীকে প্যারিস একাডেমি অব সায়েন্স পুরষ্কার প্রদান করে । ক্ষনিক সময়ের জন্য সোফি জনসাধারনে খ্যাতি পান কিন্তু নারী বলে গণিতের গন্ডিতে তাকে গ্রহন করা হয়নি, তাই বলে তিনি গণিত থেকে সরে আসেননি। একাকি এই পথে নিজেকে সারা জীবন উজাড় করে দিয়েছেন।

সংখাতত্ত্বে ছিল তার দারুন আগ্রহ, ‘ফার্মেটস লাস্ট থেওরম’ নিয়ে বেশ কিছু সময় কাজ করেছেন এবং এর একংশ এর প্রমানও তিনি দিয়েছেন যা ‘জারমেইন্স থেওরম’ নামে পরিচিত। কার্ল ফ্রেডরিশ গাউসের কাছে নিজের কাজ নিয়ে নানা পরামর্শ চেয়ে প্রায়ই চিঠি আদান-প্রদান হত, সেখনেও তিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন, যদিও পরে গাউস জানতে পারে সোফির আসল পরিচয় এবং তিনিও অবাক না হয়ে পারেন না ।

সোফির ভালবাসা ছিল গণিত, বিয়ে-সংসারের মত বিষয় তার কোন আগ্রহ ছিল না। ১৮২৯ সালে তার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে, কিন্তু শারিরীক অসুস্থতা তাকে দমে রাখতে পারেনি, ১৮৩১ সালে তিনি তার শেষ গবেষনা পত্র প্রকাশ করেন যা পরবর্তীতে স্থিতিস্থাপকতার উপর নতুন অনেক গাণিতিক সূত্র আবিষ্কার করতে সাহায্য করে। একই সালের ২৭শে জুন মেরি সোফি জারমেইন মত্যুবরণ করেন।

sophie-germain-s-theorem-n

life-and-mathematics-of-sophie-germain-musielak-13-638

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/riya/3670/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

মন্তব্য করুন