সাংখ্যিক পদচিহ্ন

এই লেখার শিরোনাম দিতে চেয়েছিলাম Digital Footprint, কিন্তু যেহেতু বর্গমুল একটা বাংলা ব্লগ এবং আমিও লিখছি বাংলায় তাই এমন উদ্ভট একটা শিরোনাম দিলাম । যদিও ইংরেজিতেই আমি যা বোঝাতে চাচ্ছি তা ভালোভাবে প্রকাশ পেত !

 

Digital Footprint কী?

Digital footprint হচ্ছে digital জগতে রেখে যাওয়া আমাদের অবদানসমুহ, যেমন এই যে আমি একটা ব্লগ লিখছি বর্গমুলে, এই লেখাটাই আমার একটা Digital Footprint। ভবিষ্যতে কেউ যদি Digital Footprint নিয়ে কোন বাংলা কনটেন্ট খুঁজে তখন হয়তো তার গুগল সার্চে আমার এই লেখাটাও উঠে আসবে। আমার এই লেখাটা তার ভালো লাগলে কিংবা অলস সময় কাটাতে থাকলে আমার প্রোফাইলেও একসময় ঘুরে আসবে। আমার সম্পর্কে তার একটা মোটামুটি ধারণা হয়ে যাবে। ব্যাপারটা অনেকটা tracking এর মত। আমার বর্গমুল প্রোফাইল থেকে আমার ফেসবুক প্রোফাইল, লিংকেডইন প্রোফাইল – এসব জায়গায় যখন সে পৌছে যাবে, তখন আসলে আমার সম্পর্কে তার অনেক কিছুই জানা হয়ে যাবে। আর প্রযুক্তি যেভাবে এগুচ্ছে, তাতে সামনে হয়তো আমি এই মুহুর্তে কোথায় আছই তাও আমার একজন পাঠক জেনে যাবে । এই digital tracking এর ভালো কিংবা মন্দ দিক নিয়ে আমি এখানে আলাপ করব না। এটা সমাজবিজ্ঞানী কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কাজ। আমি আমার লেখায় আলাপ করার চেষ্টা করব – প্রফেশনাল জগতে digital footprint কতটুকু কাজে লাগে এবং ঠিক কোন কোন প্রফেশনে কাজে লাগে?

 

Better digital footprint, better job

আমাদের দেশে সাধারণত তরুণ-তরুণীরা হয় একাডেমিয়াতে যায় কিংবা সরকারী-বেসরকারী ডেস্ক জবের পিছনে ছুটে। আমি এখানে এসব সাধারণ কেসের ব্যাপারেই কথা বলব। একাডেমিয়াতে Digital Footprint এর অবদান খুব একটা বেশি না। কারণ একাডেমিয়াতে যার যার ক্ষেত্র অনুসারে সবাই একটা কমুনিটির মাঝে থাকে । এখানে পেপার পাবলিশ, পরীক্ষার ফলাফল -এসবের গুরুত্ব বেশি, তাই অনলাইনে Footprint থাকা না থাকাটা এখানে কোন গুরুত্ব বহন করে না। থাকলে অবশ্যই ভালো। সরকারী চাকরীর ক্ষেত্রে – there is absolutely no need of digital footprint. বেসরকারি চাকরীর ক্ষেত্রে শুরুতে Digital প্রোফাইল তৈরি করা ওত গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। তবে ধাপে ধাপে নিজেকে উপরে তুলতে চাইলে Digital footprint এর প্রয়োজন হয়ে মাঝে মাঝে। Digital profile এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি আইটি সেক্টরে। প্রোগ্রামার, ডিজাইনার, কনটেন্ট লেখক – সবার জন্যই একটা ভালো ডিজিটাল Footprint থাকা দরকার। শুধুমাত্র ভালো Digital footprint দিয়ে, একাডেমিক বা কাজ সংশ্লিষ্ট ডিগ্রী না থাকলেও ভালো চাকরী পাওয়া সম্ভব। এছাড়া ফটোগ্রাফারদেরও ভালো মানের ডিজিটাল প্রোফাইল থাকা দরকার।

 

কোথায় ভালো Digital profile তৈরি করা সম্ভব

ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরির সবচেয়ে ভালো সাইট হচ্ছে linkedin । এই সাইটটা অনেকটা ডিজিটাল সিভি এর মত কাজ করে। বাংলাদেশের বাইরে প্রায় সব জায়গাতেই linkedin প্রোফাইলকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে এই প্রাকটিসটা চালু হচ্ছে। এছাড়া Digital footprint রাখার জন্য আছে কিছু স্পেশালাইজড সাইট, যেমন- ফটোগ্রাফারদের জন্য  flickr, প্রোগ্রামাদের জন্য github, stackeoverflow ইত্যাদি। আমি এখানে প্রোগ্রামারদের ভালো digital footprint রাখা নিয়ে কথা বলব।

প্রথমেই আসা যাক Github নিয়ে, Github হচ্ছে ভার্সন কন্ট্রোলিং সাইট। ধরুন আপনি একটা ওয়েবসাইট বানাতে চান, যেটাকে ডেভেলপার/প্রোগ্রামারদের ভাষায় বললে একটা ওয়েবঅ্যাপ বানাতে চান। তাহলে প্রথমেই যে কাজটা আপনি করবেন , তা হচ্ছে সাইটের জন্য প্রথমেই Html এবং Css দিয়ে একটা ডেমো পেজ বানাবেন । এটা হচ্ছে আপনার সাইটের প্রথম ভার্সন। এবার এটাকে যদি আপনি public access দিয়ে github এ আপ করে দেন তবে আপনার সাইটের প্রথম ভার্সনটা github এ লগইন করা সবাই দেখতে পাবে। আপনি ধীরে সাইট বড় করবেন এবং গিটহাবে আপনার সাইট সম্পর্কিত জায়গাটুকু (github এর ভাষায় বললে repository টুকু ) আরও rich হতে থাকবে। এছাড়া আপনি github এ খুঁজলে দেখবেন, আপনার মত আরও অনেকেই তাদের প্রজেক্টগুলো public access দিয়ে github এ আপলোড করে রেখেছে। এ ধরনের প্রজেক্টকে বলা হয় ওপেন সোর্স প্রজেক্ট। ওপেন সোর্স কারণ এধরনের প্রজেক্টে চাইলে যে কেউই অবদান রাখতে পারে। যতবার আপনি কোন ওপেন সোর্স প্রজেক্টে অবদান রাখবেন ততবার আপনার একটি করে github contribution বাড়বে। ভালো প্রজেক্টওয়ালা এবং যথেষ্ট পরিমাণে github contribution ওয়ালা গিটহাব প্রোফাইল থাকলে ডেভেলপার কিংবা প্রোগ্রামার হিসেবে প্রফেশনাল জগতে আপনার এগিয়ে যাওয়াটা কেউ ঠেকাতে পারবে না।

 

এছারা আছে stackoverflow। এটি মূলত একটি প্রশ্ন-উত্তর সম্পর্কিত সাইট। ভালো প্রশ্ন করতে পারলে কিংবা ভালো উত্তর দিলে, সাইটের ভিজিটরদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ভোটে আপনার রেপুটেশন বাড়তে থাকবে। এখানে একটা মজার ব্যাপার কাজ করে, আপনি এমন একটা প্রশ্ন করতে পারেন বা উত্তর দিতে পারেন যেটা মোটামুটি অনেকের কাজে লাগে বা লাগতেই থাকবে তবে, বছরের পর বছর ধরে আপনি সেই প্রশ্ন থেকে রেপুটেশন পেতেই থাকবেন। stackoverflow তে ভালো রেপুটেশন – প্রোগ্রামার/ডেভেলপারদের নিজেদেরকে প্রমাণ করার একটা সুযোগ ।

 

সবচেয়ে ভালো হয় নিজের একটা ব্যক্তিগত ব্লগ থাকলে, যেখানে আপনি চাইলে আপনি এখন যে প্রফেশনে আছেন সেটা নিয়ে লিখতে পারেন। গুগলে সার্চ দিলে আপনার কনটেন্টগুলো যখন সামনে চলে আসবে তখন হয়তো চাকরী দিতে চাচ্ছেন এমন কেউ সেখান থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।

Md. Noor Faizur Reza
Author: Md. Noor Faizur Reza

আমার যে কাজ ভালো লাগে তা নিয়ে সারাদিন পরে থাকি !

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/rezanur/3646/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

মন্তব্য করুন