ক্যালকুলাসঃ রাজকন্যা বনাম ডাইনী

আমরা অনেকেই ছোটবেলায় রূপকথা পড়েছি। না পড়লেও খুব ক্ষতি নেই, রাজকন্যা আর ডাইনীর পার্থক্য সবাই-ই জানি আশা করা যায়। ক্যালকুলাসের মত সুন্দর একটা বিষয়ের সাথে এমনই হয়েছে। এই বিষয়টা রাজকন্যার মত সুন্দরী হলেও আমাদের অনেকের কাছেই ডাইনী বুড়ির মত বিভীষিকা। যথারীতি আমি এই সমস্যারও ব্যবচ্ছেদ করতে নামলাম ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে।

একটু পেছন ফিরে কলেজের দিকে তাকাই। ২০১৪ সাল পর্যন্ত এইচএসসিতে গণিত দ্বিতীয় পত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলো ক্যালকুলাস। সেটিতে এ+ তোলা (অন্তত আমি মনে করি) অত্যন্ত সহজ ছিলো, কারণ বলবিদ্যায় দাগানো কিছু অঙ্ক করলেই ৩০ কমন, বিচ্ছিন্ন গণিতেও একই হাল, ব্যবহারিক ২৫ তো আছেই। বাদ থাকে ক্যালকুলাস। সেটিও খুব কঠিন ছিলো বলা যাবে না, কারণ সাজেশনের বদৌলতে অল্প কিছু অঙ্ক করেই পার হই এইচএসসির বৈতরণী। তারপর ঢাবি পরীক্ষায় গণিতে ১৫ পেতেও ক্যালকুলাসে দক্ষ হতে হয় না খুব একটা। চলে এলাম স্বপ্নের ঢাবিতে।

খেলাটা শুরু হয় এখানেই। শিক্ষকেরা ধরে নেন আমরা যেহেতু ভর্তি পরীক্ষায় গণিতে অন্তত ১৫ বা তার বেশি পেয়ে গেছি, ক্যালকুলাসের ন্যূনতম কিছু আমরা জানি। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর এটা মেনে নিতে কষ্ট হয় যে এইচএসসির মত সাজেশনের কিছু অঙ্ক করেই পার পাওয়া যাবে না, অন্তত পাশ করে গেলেও ‘স্বাস্থ্যবান’ জিপিএ তুলতে একইসাথে বেসিক বুঝতে হয় এবং মুখস্ত করতে হয়। কারণ আমাদের ক্যালকুলাস সিলেবাস এতই বড় যে ঝেড়ে মুখস্ত করেও পার পাওয়া অসম্ভব। কোর্স শিক্ষক স্বাভাবিক পরীক্ষা নিলেই ‘শুধু মুখস্ত’ এবং ‘শুধু বেসিক’ উভয়পক্ষেরই খবর আছে।

আমাদের পাঠ্য যে বইটা, অ্যান্টনের ক্যালকুলাস, সেটির মত সুপাঠ্য গণিতের বই খুব কমই আছে আমার মতে। সমস্যা হলো, সেটির সাইজ। আমি নিজেও এই বইয়ের আকারে অনেকখানি ভীত থাকি। তবে সাইজ দেখে আমাদের মনে প্রথমে ভয় থাকে এত বড় বই শেষ করবো কীভাবে। এই ভয়টা তামরা অবশ্য স্কুল জীবন থেকেই নিয়ে আসি। একটা পাঠ্যবইয়ের যে সব চ্যাপ্টার না-ও লাগতে পারে, সে ধারণাটা স্কুলে থাকে না। স্কুলে যদিও পুরো পাঠ্যবইটাই গিলতে হয়, প্রথম বছরেই পুরো অ্যান্টন পড়তে হয় না। তাই বলছিলাম কী, এই বই দেখে ভয় পাবার আগে সিলেবাসের সাথে টপিক মিলিয়ে দেখা উচিত, তাহলে ভীতিটা কমবে।

এবারে আসি বইটা পড়ার কায়দা নিয়ে। এই বইটা পরতে গিয়ে আমি নিজে অনেক রাতের ঘুম হারাম করেছি। অনেক সময়ই এই বই পাশে রেখে, এমনকি এই বইয়ের উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়েছি। সেটি নিজের বাসায় নিজের খাটে, নিজের পড়ার টেবিলে, সেন্ট্রাল এবং সায়েন্স উভয় লাইব্রেরিতে … এবং মনে নেই এমন অনেক জায়গায়। আমি এ নিয়ে একটা ছবিও অ্যাটাচ করে দিলাম, আশা করি আমার অবস্থা নিয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। তবে সবাইকে এভাবে ঘুমাতে বলছি না, এভাবে ঘুমালে ঘাড় ব্যথা করতে পারে। তবে লাইব্রেরিতে মাথা রেখে ঘুমানোর জন্য এই বইয়ের কোন তুলনা নেই।

পড়ার সময় দুটো জিনিস সর্বদা সাথে রাখতে হবে, খাতা আর কলম। খাতা-কলম (পেন্সিল হলেও হবে) ছাড়া ক্যালকুলাস পড়তে বসা আর বন্দুক ছাড়া যুদ্ধ আমার কাছে সমান অর্থ বহন করে। বরং দ্বিতীয়টাই বেশি সহজ। খাতা কলম আর বই নিয়ে একবার বসতে পারলে পরের কাজটা মোটামুটি সব কোর্সে একইরকম। একটা চ্যাপ্টার খোলা, সিলেবাসে দেখা সেটি আছে নাকি, এর আগেরগুলো (যেগুলো সিলেবাসে আছে) পড়া আছে নাকি সেটি দেখা, তারপরে রিডিং পড়া শুরু করা। একবার পড়া, না বুঝলে যেখান থেকে বোঝা যায়নি সেখান থেকে আবার, না বুঝলে আবার। ঢাবি পরীক্ষায় কিছু একটা হলেও পজিশন যেহেতু পেয়েছি, সবার মাঝেই ন্যূনতম এ যোগ্যতাটা আছে যে একই জিনিস তিনবার মনযোগ দিয়ে পড়ে বুঝতে পারা। পড়া বুঝতে বুঝতেই একদিন বোঝা যায় যে ক্যালকুলাস আসলেই ডাইনী বুড়ি না, সুন্দরী রাজকন্যা 😉 ।

এখন সবার মনেই এই প্রশ্নটা জাগবে যে স্যারের ভূমিকাটা কোথায় থাকলো। আসলে শিক্ষকদের ভরসা নাই (নো অফেন্স)। অনেকে একজন শিক্ষকের কাছে ভালো বুঝে, অন্য অনেকে সেই শিক্ষকের ক্লাসে অ আ বুঝে না। কাজেই ক্যালকুলাসের মত একটা গুরুত্বপূর্ণ কোর্সের ক্ষেত্রে একা একা প্রস্তুতির রাস্তাই বললাম। রাত অনেক হয়েছে তাই এটিও ছোট করলাম, পরেরবার আপনাদের কমেন্ট পেয়ে বৃদ্ধি ঘটাবো আশা রাখি। কমেন্ট না দিলেও ঘটাবো, তবে দেরী হতে পারে তো। :p

সবার ক্রিটিকাল পয়েন্টে সেকেন্ড ডিফারেনশিয়াল নেগেটিভ হোক।

বইয়ের সাথে আমার ঘুম :D

বইয়ের সাথে আমার ঘুম 😀

জুনায়েদ নিবিড়
Author: জুনায়েদ নিবিড়

আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/nibir2738/3350/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

8 comments

Skip to comment form

  1. ভালো 🙂 চালিয়ে যাও । কিন্তু তোমার এই চিৎপটাং ফুডু কে তুলল ? 😀

    1. ছবিটা আমার ভাইয়ের তোলা 😀 ।

  2. সবই বুঝলাম!
    কিন্তু নিজের ফডো দেওয়ার কারনখানা বুঝলাম না !! :p :v

    1. বুঝাতে চাইলাম যে পড়তে পড়তে ঘুমায় যাইতে হয়

  3. “আসলে শিক্ষকদের ভরসা নাই (নো অফেন্স)”
    এইতো বাবা এই প্রথমবার আমার কাছে তোর ক্রিটক্যাল পয়েন্টে সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হইল। তারপরেও জিগাই, কোন ফাংশন নিসিলি? 😀 চিন্তা করতে থাক।

    1. প্যারাবোলা নিছি :p

      1. সবচেয়ে বেসিক প্যারাবোলা কোনটা? 🙂

        1. আমি y=-x^2 নিছি :p

মন্তব্য করুন