স্কুল জীবনে সবাই মোটামুটি একটি কমন রচনা ইংরেজীতে লিখেছি আমরা, নাম, “এইম-ইন-লাইফ”, লিখতে গিয়ে আমাদের প্রায় সবারই উত্তর ছিল ডাক্তার হব, গ্রামে গিয়ে জনগণের সেবা করব, বিনা পয়সায় চিকিৎসা করব, অথবা ইন্জিনিয়ার হব, দেশের উন্নয়ন করব। কলেজের পর ভর্তি কোচিংও করেছি সেভাবেই। কিন্তু বিধি বাম বা দূর্ভাগ্য যাই বলিনা কেন, ভর্তি পরীক্ষায় অনিচ্ছাকৃত চান্স, গণিত বিভাগ। হায় কি হবে ভবিষ্যত ?! প্রথম বর্ষেই অনেকেই বিষয় পরিবর্তন করার জন্য ক্লাস বর্জন করে, হতাশায় ভুগে, নানান বিধ চিন্তা করে পুণঃভর্তি হয় সেই প্রথম বর্ষেই, মাঝখান থেকে জীবনের একটি বছর এমনিতেই যায়, আবার অনেকেই একই হতাশা বা অনীহা বয়ে বেড়ায় পুরু অনার্স জুড়ে, ফলে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল আসেনা। অথচ উন্নত দেশগুলোতে গণিত বিষয়টি সবচাইতে মেধাবীদের পছন্দের একটি বিষয় !! কারণটা কি?? সহজ উত্তর, সেসব দেশে ভাল চাকরী পাওয়া যায়, আমাদের দেশে যায়না, আসলে ধারণাটা ভুল !! আসব এই বিষয়ে, মূলত: আজ আমি দেখাব গণিতের ভবিষ্যত, দেশে ও বিদেশে।
প্রথমে দেশের কথায় আসি, গণিত পড়ে দেশেই ভাল কিছু করা যায়। যেমন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, ব্যাংক, করপোরেট অফিসগুলোতেও গণিতবিদ লাগেই। দেশে এখন ইউজিসির হিসাব অনুযায়ী ২৭ টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও ৫৭ টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে গণিতের শিক্ষক লাগবেই, শিক্ষক সংকটের কারণে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হায়ার করে খন্ডকালীন ক্লাসের ব্যবস্থা করতেছে, কারণ কোয়ালিটি সম্পন্ন জ্ঞান দান। কিন্তু এই খন্ডকালীন শিক্ষকের প্রয়োজন হতোনা যদি আমাদের দেশের গণিত নিয়ে পড়ার আগ্রহটা থাকে শুরু থেকেই আমাদের মাঝে, তাহলে রেজাল্ট ভাল হবে, গবেষণা পত্র থাকবে, যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখবে, মাস্টার্স পাশ একজন ছাত্র রেজাল্ট ভাল (সিজিপিএ ৩,৫০ এর উপর), ইন্টারনেশনাল জার্নালে গবেষণাপত্র আছে, তখন লুফে নিবে তাকে। আস্তে আস্তে চাহিদা বাড়বে। এখন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সম্মানীও খারাপ না, লেকচারার পদে ১৮,০০০ টাকা থেকে ৩৫,০০০ টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে, এই সম্মানীও বাড়বে ভবিষ্যতে। সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপকের বেতন ৪০,০০০ টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেয় পর্যায়ক্রমে এখন, এটাও বাড়বে। তাছাড়া গবেষণা উপস্থাপনের জন্য পৃথিবীর আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগতো থাকছেই, তাও বিনা খরচে অথবা স্বল্প খরচে !!! কিন্তু এর জন্য দরকার মান সম্পন্ন গবেষণা, তাও সেটা হবে তখনই যখন প্রথম বর্ষ থেকেই গণিতের খুঁটিনাটি বিষয়ে সিরিয়াস থাকতে হবে।
এবার আসি, ব্যাংকগুলোতে, হ্যাঁ এটা ঠিক, ব্যাংকগুলোতে ব্যাবসা বিষয়ে যারা পড়ে তাদের প্রাধান্য থাকে, কিন্তু ভাল ভাল ব্যাংকগুলোতে লাখ টাকার সম্মানীতে চাকরী করতেছে গণিতবিদরা। স্টাডি ট্যুর এর আয়োজন করতে গিয়ে দেখেছি, তাছাড়া শুরুতেই এসপিও বা এমপিও পদের জন্যও প্রচুর গণিতবিদ নিচ্ছে, সম্মানী ২০,০০০ টাকার উপরে। আস্তে আস্তে প্রমোশনতো আছেই। তাছাড়া হাউস লোন, কার লোন, বউ-এর গহনা লোন, স্বাস্থ্য চিকিৎসা লোন সহ অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকেই। আর বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল করপোরেট অফিসগুলোতেও গণিতবিদ লাগেই, তবে তাদের ধীরে ধীরে বুঝাতে হবে, গণিতবিদরা বিজনেস স্টাডিস নিয়ে যারা পড়েছে, তাদের বস !! আর এটা তখনই হবে যখন অনার্স প্রজেক্ট বা মাস্টার্স থিসিস এর সময় ইন্টার্নশীপ ব্যাবস্থা করে দেওয়া হবে সেই অফিস গুলোতে, যেটা বিজনিস ফ্যাকাল্টি করে থাকে, তাদের সাথে প্রতিযোগীতা করে এই যায়গাটি আমাদের পাকাপোক্ত করে নিতে হবে। ডেনমার্কের কোপেনহেগ বিজনেস স্কুল এর এমবিএ আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত, আর সেখানে প্রথম ১ বছর পড়ানো হয়, লিনিয়ার এলজেবরা, মাল্টি ভ্যারিয়েবল ক্যালকুলাস, ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন, ফাংসনাল এনালাইসিস, টপোলজি। আমার এক আত্মীয় পড়ে সেখানে, সে আমাকে এই তথ্য দিয়েছে, আমি নিজে নর্থ সাউথ এ এম,বি,এ করছে এমন স্টুডেন্ট পড়িয়েছি, গণিত-ই সিলেবাস এর ৪ ভাগের ২ ভাগ। সুতরাং করপোরেট অফিসগুলোতে এই বার্তা পৌছাতে হবে, এর উত্তম মাধ্যম জব ফেয়ার করা বা সেমিনার করা।
এবার যেটা বলেছিলাম, বিদেশে গণিত পড়লে ভাল চাকরী পাওয়া যায়, তাই সেখানকার ভাল ভাল মেধাবীরা গণিত পড়তে চায়। কথাটা আংশিক সত্য, পরোপুরি না, মূলত: গণিত মানেই উন্নত দেশগুলোতে যেটা বুঝানো হয়, গবেষণা, আর গবেষণা বাবদ আছে প্রচুর অর্থ, এটাই চাকরী। এছাড়া আর সবই আমাদের দেশের মতই, এখানেও দেখতেছি আই-আর বিষয় নিয়ে পড়েও ব্যাংক এ চাকরী করতেছে। কিন্তু এদের গণিত পড়ার মূল আগ্রহ থাকে নিজেকে একটু আলাদা করে ভাবতে, গণিত পড়তে পারাটা এদের কাছে বিরাট সম্মানের। অনেকটা আমাদের দেশের ইন্জিনিয়ার বা মেডিকেল এ পড়তে পারার মত। কারণ, এরা অর্থের চাইতে সম্মানটা বড়, হয়ত অর্থ প্রচুর আছে তাই এমন ভাবে, কিন্তু এটা সত্যিই যে, গণিত বিষয়টা খুব কম ছেলে-মেয়েই সিলেক্ট করে। যারা করে তারা আলাদা চিন্তাবীদ। সে যাকগে, তাতে আমাগো কি?? আমাগো দেখা দরকার ফিউচার ইন বিদেশ, তাই তো ?? তবে বলি, পৃথিবীর সবচাইতে বেশি স্কলারশীপ এখন গণিতের গবেষণায়। বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডা, জার্মানী, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ন্যাদারল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন সহ বড় বড় ভাল অর্থনীতির সব দেশে। কিছু কিছু স্কলারশীপ আছে শুধু গণিতবিদদের জন্যই, এই বিষয়ে আরেকদিন লিখব, আজ মেলা রাত হয়ে গেছে, শুধু শেষ করছি,
গণিত এমন একটা বিষয়, যেটা পড়লে জীবন অচল হবেনা কোনদিনই, সেটি দেশে হোক, বিদেশে হোক। মান নিয়ে একটু তারতম্য আছে, সেটা থাকতেই পারে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টা খুলে বললে আশা করি হতাশা দূর হবে, প্লাস স্কুল-কলেজ পর্যায়েও এই সব বার্তা পৌঁছে দিতে হবে, অভিবাবকদেরও সচেতন করতে হবে। প্রত্যাশা বর্গমূল ডট কম এই কাজটি করবে, আমরা করব।
—- আতিক।
17 comments
Skip to comment form
এ সব ভাল ছাত্রদের নিয়ে লেখা। কিন্তু যারা নিম্ন বা মাঝারী মানের রেজাল্ট নিয়ে বের হবে তারা ভবিষ্যতে কি করবে?
Author
Amar uddessho result sobari valo hobe, r majhari ba nimno result nie onnanno valo subject pore ber holeo kintu future poth ektu bondhur e hoie. Tobe ha, recover kora possible, Bank gulote chance thake, BCS ase, college gulute teaching kora jete pare. But, Math ektu time dilei valo result korajaie.
ভাই অনেক ভালো লিখেছেন। যে কাজটি আমি নিজেও করতে চেয়েছিলাম আসলে গণিত নিয়ে পড়ে কি হবে? আমার জন্য কাজটি অনেক কঠিন হতো । হয়ত সম্ভবও হতো না। এত তথ্যবহুল লেখা… সত্যিই অসাধরণ ।
চালিয়ে যান… 🙂
Author
রফিক, ধন্যবাদ !!
চন্দ্র অন্যান্য ব্লগের মত share in অপশন থাকলে কি ভালো হত না? কোন লেখা ভালো হলে ফেসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার করা যেত । একটু ভেবে দেখ… :/
পড়ে অনেক ভাল লাগলো ……
Author
ধন্যবাদ !!
আতিক ভাইয়া…রেজাল্টই যদি বলে দেয় আমার ভবিষ্যৎ কেমন হবে ( বন্ধুর না শত্রুর ) তাহলে তো আর কোন কিছু শেখার পিছনে সময় ব্যয় না করে বরং ওই সময়টাতে শিক্ষকদেরদের তৈরি লেকচার আর বিগত বছরের প্রশ্নের উত্তরগুলোর সমাধান করাটাই অতিউত্তম কর্ম ( শুধু ঢাবির ম্যাথের শিক্ষার্থীরা এখানে সাবজেক্ট) কি বলেন ভাইয়া ??
Author
Ami apatoto Bangladesh er respect a bolesi. Pore r ekdin details bolbo. Amader desher subject ranking hoie job die, gaan die noi, ami chesta koresi sei dikta tule anar, but, result e sob kisu na.
“গণিত-ই সিলেবাস এর ৪ ভাগের ২ ভাগ”? নাকি ২ ভাগের ১ ভাগ? নাকি ১/২? কোনটা 😛 যাই হোক লেখাটা হতাশ ছাত্রদের আশার আলো দেখাচ্ছে, তবে গণিতে পড়লে যে শুধু শিক্ষক, ব্যাঙ্কার, মাল্টিন্যাশানালের চাকুরীজীবী হতে হবে তা ঠিক নয় . . . ইচ্ছা থাকলে একজন গণিতের ছাত্র তার ক্যারিয়ার যেকোন দিকে নিয়ে যেতে পারেন! সঠিক পরিকল্পনা দরকার!
Author
আসলে লেখতে লেখতে রাত হয়ে গেছিল মেলা, তাই অল্পপরিসরে তুলে আনার চেষ্টা করেছি, শেষে বলেও দিয়েছি, জীবন অচল হয়না, মানের তারতম্য থাকতে পারে, এর মানে এটাই যে, রেজাল্ট খারাপ করলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই !!! আরেকদিন বিস্তারিত আরেকটা লিখব, কিছু স্কলারশিপ এর লিংক সহ !! ধন্যবাদ সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্য !!
গণিত পড়ে অনেক কিছুই হওয়া যায়। আমাদের দেশেও আজকাল গণিতের ছাত্রদের সম্মানের চোখেই দেখা হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পড়ানোর পদ্ধতিতে। একটা বিষয়ের প্রতি ভালোলাগা কিংবা আগ্রহ জন্মানোর মত শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই। নিজে নিজে পড়াশুনা করে কয়জনই বা পারে এগুতে !! …
আমরা অধিকাংশই পড়াশোনা করি একটা ভালো জীবনের নিশ্চয়তার জন্য। সেক্ষেত্রে সবার দৃষ্টি কিভাবে ভালো আয়ে একটা সম্মানজনক পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। শিক্ষার্থীদের এই চাওয়া পুরনের জন্য একটা ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনার কোয়ালিটি এবং ব্রান্ডিং ইমেজ দুটোই ভালো থাকা দরকার। দুর্ভাগ্যবশত এর কোনটিই আমাদের ভালো নেই।
ভাই আমি গণিত নিয়ে জাবিতে পড়ি।কিন্তু কোন ফ্রাইবেট টিউটর না পাওয়ায় আমি কিছু বুঝতে ছিনা।সেক্ষেত্রে আমি কি তরতে পারি।।।জানালে উপকৃত হব।
তারা হোগামারা খাবে।
আমি একজন গণিতের ছাত্র। বর্তমানে এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে জব করছি। আমার রেজাল্ট সেকেন্ড ক্লাস। আমি গবেষণামূলক জব করতে চা। দেশে অথবা বিদেশ। কোন প্রতিষ্ঠানেেে নাম বলবেন? কিভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো? পরামর্শ চাই।
Thanks vaiya