ভালবাসার মানুষটির জন্য লকেটবিহীন একটি চমৎকার নেকলেস কিনেছেন। আবেগাপ্লুত হয়ে সেটা তার গলায় পরিয়ে দেওয়ার প্রাক্কালে সে হঠাৎ জিগেস করে বসল, “আচ্ছা, নেকলেসটা যে কার্ভ অনুযায়ী বেঁকে আছে, তার ইকুয়েশনটা কী?” এতো মহাবিপদ! ঢোঁক গিলে দ্রুত গুগল দেবতার পুজোয় আছড়ে পড়ে জানা হয়ত গেল যে কার্ভটার নাম ক্যাটেনারী, কিন্তু পরের আবদারটা যদি হয়, “একটু বুঝিয়ে দাও না, কেন ওটা ক্যাটেনারী?”, তাহলেই হয়েছে। সাড়েসর্বনাশ। আগ বাড়িয়ে ডাউন দ্য উইকেট খেলতে গিয়ে প্রেমিকার হাতে করুণ স্টাম্পিং।
তবে সুখবর হল, একটু ক্যালকুলাস অফ ভ্যারিয়েশন্স জানা থাকলে আর ভয় নেই। ঝটপট উত্তর রেডি হয়ে যাবে।
এই ক্যাটেনারী নেকলেসের প্রবলেমটা প্রথমে এ্যাপ্রোচ না করাই ভাল। আগে দুটো বিন্দু নিয়ে ভাবা যাক। এবং বিন্দু দিয়ে যায় এরকম কত গুলো কার্ভ আমরা আঁকতে পারব? মানে P থেকে শুরু করে Q পর্যন্ত কত গুলো রাস্তা আমরা ডিফাইন করতে পারব?
অবশ্যই অসংখ্য। কিন্তু যদি জিগেস করা হয়, এদের মধ্যে সবচে’ ছোট পথ কোনটা হবে? মুহুর্তের উত্তরঃ নীল রঙের সোজা পথটা। P থেকে Q পর্যন্ত একটা সরলরেখা টেনে দিলেই তো হয়ে গেল। যেই সরলপথ পাওয়া যাবে, সেটাই সবগুলো পথের মধ্যে সবচে’ ছোট পথ। এরপরের হাস্যকর প্রশ্নটা হলঃ প্রমাণ কী?
এখান থেকেই গল্পের শুরু। প্রমাণ আছে। এবং প্রমাণটা অপূর্ব। খানিকটা যে কঠিন না, তা নয়। তবে সেই প্রমাণে দাঁত বসানোর জন্য এইচএসসি লেভেলের ক্যালকুলাসই যথেষ্ট। যাদের মনে হচ্ছে, যে জিনিস দেখেই বোঝা যায়, তা প্রমাণ করে লাভটা কী? – তাদের জন্য একটা ছবি।
ওপরের ছবির লাল, সবুজ আর নীল বল গুলো এক সাথে ছেড়ে দিলে কোন বলটা সবার আগে মাটিতে পৌঁছাবে? উত্তর না জানা থাকলে বলাটা কিন্তু খুব সহজ নয়। যারা এখনো মোটিভেটেড হচ্ছেনা, তাদের জন্য আরো একটা ছবি।
সাবানের বুদবুদ নিয়ে খেলেনি এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। কিন্তু ছবিটার মত করে যদি আমরা সাবানের ফিল্ম তৈরি করি, তাহলে সেই সার্ফেস বরাবর যেই কার্ভটা দ্যাখা যাচ্ছে তার ইকুয়েশন বের করাটাও কি খুব কঠিন?
মজার ব্যাপার হল, এই সাবানের বুদবুদ থেকে শুরু করে নেকলেস বিড়ম্বনা পর্যন্ত সব প্রশ্নের উত্তরই বেরিয়ে পড়বে যদি আমরা প্রমাণ করতে পারি যে দুটো বিন্দুর মাঝখানে সবচে’ সংক্ষিপ্ত পথটা হচ্ছে তাদের সংযোজক সরলরেখা। শুধু তাই নয়, ক্লাসিকাল মেক্যানিক্সের লাগ্রাঞ্জিয়ান এবং হ্যামিল্টনিয়ান ফর্মুলেশনের প্রতি যদি হঠাৎ কারো আগ্রহ জন্মে, তাদের শুভযাত্রা শুরুও হবে এই প্রমাণ থেকেই। কোয়ান্টাম ফীল্ড থিওরীর দিকে যেতে চাইলেও।
এই পোস্টটায় আর গণিতের দিকে পা না বাড়াই। বরং ছোটবালুকারকণাবিন্দুবিন্দুজলে একটা সিরিজই তৈরি করে ফেলি। পরের পোস্টগুলোর জন্য খাতা কলম যোগে বিপুল উদ্দীপনা সহকারে হাজির হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
সে পর্যন্ত ভাল থাকবেন।
: -)
.
সাম্প্রতিক মন্তব্য