আবারও ছোট্টবন্ধু ফাহিমকে স্মরণ করছি। বর্গমূলের শুরুর দিকে তার সেই ডাইভার্জেন্স থিওরেম এবং স্টোকস থিওরেম নিয়ে জানতে চাওয়াই আমাকে ভেক্টর ক্যালকুলাসের দিকে বার বার নিয়ে আসে। (কথাটা আসলে খুব একটা সত্য না। মূল কারন হল ইলেক্ট্রোডায়নামিক্স :-p )। ফাহিম ব্র্যাকেটের ভেতর ঢোকার আগেই জানিয়ে রাখি, পোস্টটা সেই সব মানুষদের জন্য, যারা আমার মত এই ডাইভার্জেন্স থিওরেম, স্টোকস থিওরেম – ইত্যাদির দিকে করুন চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দীর্ঘ সময় পার করে দিয়েছে।
প্রথমেই থিওরেম গুলোর প্রলয়ঙ্করী মূর্তি উপস্থাপন করে অপ্রীতিকর কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাচ্ছিনা। উইকিপিডিয়াতেই দেওয়া আছে, দু-একটা ক্লিক করলেই বান্দাহাজির হয়ে যাবে। আমি বরং খানিকটা স্মৃতিচারণ করি। একটা জিনিস আমরা নিজ নিজ উঁচু-মাধ্যমিক যুগ থেকেই ব্যবহার করে আসছি। জিনিসটা হলঃ
যেখানে, ।
ছোটবেলায় এটার নাম জানতামনা। ডিপার্টমেন্টে ঢুকে প্রথমবর্ষের মাঝামাঝিতে জানলাম, এটার একটা ভারিক্কি নাম আছে। Fundamental Theorem of Calculus. এই চেনা-পরিচিত ফর্মুলার এত সম্মানিত নাম দেখে মনে মনে খানিক হেসেছিলাম। এটার দৌরাত্ম্য যে কতখানি, তার কিছুটা এখন বুঝতে পারছি, এবং সেদিন যে কিছু না বুঝেই হেসেছিলাম, তা ভেবে আবার খানিক হাসছি। কারন, এই সমীকরণটার আইডিয়ার সাথে লাইন ইন্টিগ্রালের রেজাল্ট, এবং যেমনটা আগেই বললাম, গাউসের ডাইভার্জেন্স থিওরেম, স্টোকস থিওরেম -প্রজাতির ভয়ানক হাইয়ার ডাইমেনশনাল পৈশাচিক ইন্টিগ্রালের সরাসরি যোগসাজশ।
লিঙ্কটা আসলে কোথায়, সেটা বলব একটু পরেই। তার আগে সমীকরণ (১)-এর ইন্টিগ্রালটাকে একটু অন্য ভাবে চিন্তা করা যাক। চিন্তা শুরু করছি থেকে। -কে যদি জিগেস করা হয়, যে সমীকরণ (১)’টা আসলে কী, তাহলে নিশ্চিতভাবে সে জবাব দেবেঃ
“বামপক্ষে আমার ডেরিভেটিভকে থেকে -এর মধ্যে ইন্টিগ্রেট করা হয়েছে। ডানপক্ষে রেজাল্ট যেটা এসেছে, সেটা হল,এবং পয়েন্টে আমার ফাংশনভ্যালুর একটা কম্বিনেশন।”
-এর জবানবন্দির পর আর একটাই কাজ বাকি। এবং পয়েন্ট দুটোকে ফাংশনের বাউন্ডারি হিসেবে চিন্তা করা।
ভাবনাটা মোটেই অমূলক নয়। নিচের ছবির দিকে তাকিয়ে হোক, আর চোখ বুঁজেই হোক – যে কেউ বুঝতে পারবে যে একটা লাইন-এর বাউন্ডারি হল দুটি পয়েন্ট, একটা সার্ফেসের বাউন্ডারি হল একটা লাইন, এবং একটা ভলিউমের বাউন্ডারি হল একটা সার্ফেস।
ছবির সাথে মিল রেখে একই কথা আরেকবার বলি। সবুজ রঙের লাইনের বাউন্ডারি হচ্ছে হলদে-সবুজ রঙের দুটো পয়েন্ট, নীল রঙের সার্ফেসটির বাউন্ডারি হল বেগুনি রঙের লাইন, আর লাল রঙের ভলিউমটির বাউন্ডারি হল মাটি-মাটি রঙের সার্ফেস। খোসাও বলা যেতে পারে চাইলে। পুরোটা আঁকিনি। বাই দ্য ওয়ে, নীল সার্ফেসের বাউন্ডারি বেগুনি লাইনটা কিন্তু অবশ্যই একটা ক্লোজড লাইন, সবুজ লাইনটার মত ওপেন নয়। অর্থাৎ, তার দুই মাথা লাগানো। যেমন চুড়ি, যেমন রাবারব্যান্ড – এসব হল ক্লোজড লাইন বা ক্লোজড লুপ। বা ক্লোজড কনট্যুর। মানুষজন দিয়ে লেখে। অন্যদিকে জুতার ফিতা একটা ওপেন কনট্যুর। এটা কোন লুপই না ।
এবার সমীকরণ (১)-এ ফেরা যাক। সেখানে বলা আছে, আমরা যদি বামপক্ষে ডেরিভেটিভ প্রজাতির কোন বস্তুর ফাইনাইট ইন্টিগ্রাল নেই, তাহলে ডানপক্ষে যা আবীর্ভুত হবে, সেটা হচ্ছে গিয়ে – যেই বস্তুর ইন্টিগ্রাল নেওয়া হল, সেই বস্তুর বাউন্ডারিতে ফাংশনভ্যালুর ডিফেরেন্স, বা ঐ ধরনের কিছু একটা। মোট কথা, কম্বিনেশন।
আমরা ডেরিভেটিভ প্রজাতির কী কী অপারেটর চিনি? একটা হচ্ছে ছোট বেলার। আরেকটা হল, নাব্লা অপারেটর। মানে । তিনি নিজে একজন ভেক্টর অপারেটর। তাই তাঁর ডান দিকে স্কেলার, ভেক্টর ইত্যাদি বসিয়ে এবং তাঁদের মাঝখানে আবার ডট, ক্রস ইত্যাদি লিখে রঙবেরঙের ডেরিভেটিভ তৈরি করা কঠিন কিছু না। যেমন-
- যদি একটি স্কেলার ফাংশন হয়, তাহলে ভেক্টর ফিল্ডটা হল তার গ্র্যাডিয়েন্ট ।
- যদি একটি ভেক্টর হয়, তাহলে ব্যাপার দুরকম। নাব্লার সাথে একবার ডট দিয়ে আত্মিয়তা, আরেকবার ক্রস দিয়ে আত্মিয়তা।
(১) হল -এর ডাইভার্জেন্স । এটা একটা স্কেলার কোয়ান্টিটি।
(২) আর, হচ্ছে -এর কার্ল । এটা ভেক্টর।
প্রথমে ডাইভার্জেন্সকে গিনিপিগ বানানো যাক। ‘কে একটু ভেঙ্গে লিখি।
চেহারা সুরতে সে পুরদস্তুর ডেরিভেটিভ। সুতরাং আমাদের ফান্ডামেন্টাল থিওরেম অফ ক্যালকুলাসকে এখানে যাচাই করে দ্যাখা যেতে পারে।
সেই থিওরেম অনুযায়ী, ডেরিভেটিভ -এর একটা ইন্টিগ্রাল নেওয়া যাক। এধরণের উপকারী ভেক্টর গুলো সাধারনত 3D কোঅর্ডিনেট সিস্টেমে ডেস্ক্রাইবড হয় ( … ফাহিমকে ক্রমাগত স্মরণ করার মত এই কথাটাও মনে হয় খানিক ভাক্কাবাজি। কারন থিওরি অফ রিলেটিভিটির শুরুই হচ্ছে 4D ভেক্টর দিয়ে। আর আমাদের হিলবার্ট স্পেসের ভেক্টর গুলোতো ইনফাইনাইট ডাইমেনশনাল। তবু, আপাতত ‘কে তিনমাত্রার বাইরে যেতে দিতে চাইনা)। তাই ইন্টিগ্রালটা নাওয়া যাক একটা 3D-রিজিওনে। অর্থাৎ একটা ভলিউম -এর ওপর। তাহলে বামপক্ষ হবে,
আমি পৈশাচিক -এর বদলে ভলিউম ইন্টিগ্রালকে দিয়ে লিখেছি। চোখের শান্তি আরকি।
ডানপক্ষে আসা যাক। ডানপক্ষের গল্প বাউন্ডারি নিয়ে। এখন, একটা ভলিউমের বাউন্ডারি কী? অবশ্যই সার্ফেস। কিন্তু সার্ফেসের তো অনেক গুলো পয়েন্ট। এবং বাউন্ডারির সব পয়েন্টেই তো আমাদের ফাংশনভ্যালু নেওয়ার কথা। উপায় একটাই। সব গুলো ফাংশনভ্যালু নিয়ে যোগ করে দেব। অর্থাৎ, আবারো ইন্টিগ্রেশন। কিন্তু এবার -এর ওপর নয়, বরং তার বাউন্ডারি সার্ফেস এর ওপর। আরেকটা ব্যাপার মনে রাখা জরুরি। বামপক্ষ কিন্তু একটা স্কেলার রাশি। তাই ডানপক্ষকেও স্কেলারই হতে হবে। এখানে ডট গুননটা হবে ইন্টিগ্রালের মেজার ইনফিনিটেসিমাল এরিয়া ইলিমেন্ট এর সাথে, যার ডিরেকশন ঠিক ঐ পিচ্চি এরিয়ার নর্মাল বরাবর। ছবিতে লালচে তীর গুলো -এর দিকে পয়েন্ট করে আছে। তাহলে ডানপক্ষও প্রস্তুত!
এবার দুই পক্ষের হাত মিলিয়ে দিই।
এই তো গাউসের বিখ্যাত ডাইভার্জেন্স থিওরেম! দেখতে কঠিন হলেও, বোঝাটা তেমন কঠিন না আসলে। 😀
স্টোকস’ থিওরেমের ব্যাপারটাও একদমই এক। শুধু এক্ষেত্রে বামদিকের ডেরিভেটিভটা হল একটা কার্ল আর ইন্টিগ্রালটা হল একটা সার্ফেস ইন্টিগ্রাল। স্বভাবতই ডানদিকে সার্ফেসের বাউন্ডারি হিসাবে আমরা একটা ক্লোজড লুপ পাব। সেই লুপের ওপর পয়েন্টের সংখ্যাও যেহেতু অসংখ্য, তাই এবারও ইন্টিগ্রেশন করতে হবে, ইভ্যালুয়েশনটা শুধু হবে ঐ ক্লোজড লুপের ওপর ভিত্তি করে। ফাইনালি স্টোকস’ থিওরেম দাঁড়াবে,
c, r, S এসবের মানে আর বলবনা। ইন্টিগ্রালের মাঝ বরাবর একটা গোল্লা দিয়েছি কেন সেটাও বলবনা।
“কিছু কথা থাক না গুপন..”
.
সাম্প্রতিক মন্তব্য