গ্র্যাডিয়েন্ট

ভেক্টর ক্যালকুলাসের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ফার্স্ট ইয়ারে ফিজিক্স পড়তে গিয়ে। সে ছিল নিতান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ। কোন মতে হাই দিয়েই অতঃপর বাই দিয়ে বেরিয়ে আসা। ভেবেছিলাম এইতো, আরেকটু বড় হলেই বুঝে যাব। দ্বিতীয় বর্ষে আবারো দ্যাখা হল গ্র্যাডিয়েন্ট, ডাইভার্জেন্স এবং কার্লের সাথে। তখন আমি অন্তর্ভুক্ত হলাম জেনেও-জানিনা প্রজাতিতে। ফটাফট গ্র্যাডিয়েন্ট ক্যাল্কুলেট করে ফেলতে পারি, কিন্তু জিনিসটা কী – তা মাথায় নেই, চোখে নেই, কোথাও নেই। সে সময়ের বহুদিন পর আমাদের তৎকালীন ছোট্টবন্ধু ফাহিম রফিক জানালো, ভেক্টর ক্যালকুলাস নিয়ে লেখা চাই।  তখন লেখা হয়নি। আজ পুরোনো জিনিসপত্র রিভিশন দিতে গিয়ে একটু লিখতে ইচ্ছে করছে। যারা অলরেডি ব্যাপার গুলো বুঝে গেছো, তাদের তেমন উপকার করতে পারছিনা। তবে যারা বোঝনি, বা আমার প্রাক্তন ক্যাটাগরিতে পড়ে আছো, তাদের জন্য খুব সামান্য ইন্ট্রোডাকশন।

 

গ্র্যাডিয়েন্ট কী, সেটা বলার আগেই সাহস করে একটা ফাংশন z=f(x,y) বিবেচনায় নিয়ে আসা যাক। y=f(x) যেমন x-অক্ষ থেকে ইনপুট নিয়ে তার সব ফাংশনভ্যালু’র সমন্বয়ে একটি বক্ররেখা দেয়, তেমনি z=f(x,y) স্বাভাবিক ভাবেই xy-তল থেকে ক্রমজোড় ইনপুট নিয়ে আমাদেরকে একটি বক্রতল দেবে। খটোমটো বাংলায় গিয়ে কাজ নেই, f(x,y)‘কে সার্ফেস নামে ডাকতেই শান্তি। আপাতত আমাদের খুব পছন্দের সার্ফেস গাওসিয়ানকেই বেছে নিচ্ছি। টু-ডাইমেনশনের ডোমেইনে সবচে নিরীহ গাওসিয়ানটির চেহারা হবে হল এরকমঃ

f(x,y)= e^{-(x^2 + y^2)}

 

gaussian

একটা জিনিস ভাল করে লক্ষ্য করা দরকার – (0,0)বিন্দুতে সার্ফেসটির ফাংশনভ্যালু সবচে’ বেশি। তার একটু দুরেই সে তূলনায় অনেক কম, এবং তার আরেকটু দূরে আরো অনেক কম।

 

এবার গ্র্যাডিয়েন্টের গল্পে আসা যাক। সংজ্ঞাটা বেশ বাজখাঁই। আমরা fফাংশনটির গ্র্যাডিয়েন্টকে ডিফাইন করি এ’ভাবেঃ

\nabla f = \frac{\partial f(x,y)}{\partial x}\ \hat{\mathbf{i}} + \frac{\partial f(x,y)}{\partial y}\ \hat{\mathbf{j}}                  (১)

 ওপরের এক্সপ্রেশনের ভেতর \hat{\mathbf{i}} এবং \hat{\mathbf{j}} -এর উপস্থিতিই জানান দিচ্ছে, গ্র্যাডিয়েন্ট জিনিসটা আসলে একটা ভেক্টর ফিল্ড। আমার নিজের ছোটবেলায় এই সব স্কেলার ফিল্ড, ভেক্টর ফিল্ড জিনিস গুলোও বেশ বজঘট লাগত। সোজা সাপ্টা কথায়, একটা সার্ফেসকে যদি আমরা ভেক্টর ফিল্ড নামে ডাকি, তাহলে বুঝে নেব যে, ঐ সার্ফেসের প্রতিটি পয়েন্টে একটা করে ভেক্টর কাজ করছে। সেই ভেকটরগুলোর একেকটার মান একেক রকম হতে পারে, আবার একই রকমও হতে পারে, একেকটার দিক একেক দিকে হতে পারে, আবার একই দিকেও হতে পারে। VectorField2D_sglযেমন, বাঁয়ের ছবিটি একটি ভেক্টর ফিল্ডের ছবি। এই মুহুর্তে গুগলসার্চ করে বের করলাম। কে জানে তার আসল ইকুয়েশন কেমন! তবে এতটুকু নিশ্চিতঃ তার ফর্মটা হল এমনঃ

\mathbf{v} = f(x,y) \ \hat{\mathbf{i}} + g(x,y)\ \hat{\mathbf{j}}

আমাদের গ্র্যাডিয়েন্ট এরকমই  একটা ভেক্টর ফিল্ড। আর স্কেলার ফিল্ডের ব্যাপারটা সামান্য আলাদা – ফিল্ডের প্রত্যেকটা পয়েন্টে শুধু মানই থাকবে, দিক থাকবেনা। যেমন আমাদের গাওসিয়ানটাকেই একটা স্কেলার ফিল্ড হিসাবে বিবেচনা করে নেওয়া যেতে পারে। তার এক্সপ্রেশনে কোথাও \ \hat{\mathbf{i}}বা \ \hat{\mathbf{j}}নেই। বিভিন্ন (x,y)ভ্যালু’র জন্য তার শুধুই একটা ফাংশন ভ্যালু আছে। দিক-টিক নেই।

 

 

সময় এসেছে, আমাদের প্রিয় গাওসিয়ানের গ্র্যাডিয়েন্ট বের করার। সমীকরন-১ অনুযায়ী আমাদের ক্ষেত্রে:

\nabla f = - 2xe^{-(x^2 + y^2)} \ \hat{\mathbf{i}} - 2ye^{-(x^2 + y^2)} \ \hat{\mathbf{j}}           (২)

এই বিকটদর্শন গ্র্যাডিয়েন্ট দিয়ে আমাদের কী কল্যাণ হতে পারে? সেটা খানিকটা আন্দাজ করার জন্যই এতখন ধরে বকবক করে যাচ্ছি। এই গ্র্যাডিয়েন্টটি’র ছবি আমাদেরকে অনেক কিছু বলে দেবে। ছবিটা কেভিন মিহলের এই লিঙ্ক থেকে স্কেচ করলাম –

gaussian grad 2

আমি নিশ্চিত, সবাই বুঝে গেছে, গ্র্যাডিয়েন্ট ফিল্ডের ভেক্টর গুলো কিছু একটা বোঝাতে চাচ্ছে। তারা আসলে কী করছে? তারা সবাই (0,0)বিন্দুর দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। মূল বিন্দু থেকে বেশ দূরের ভেক্টরটির তত আগ্রহ নেই। সে শুধু দায়সারা ভাবে মূল বিন্দুর দিকে পয়েন্ট করে আছে। মূলবিন্দুর এক ইউনিট রেডিয়াসের বৃত্তের কাছে ভেক্টর গুলি যেন আরো আরো জোরে পয়েন্ট করছে। এবং মূল বিন্দুর খুব কাছের ভেক্টর গুলো যেন প্রানান্তিক চেষ্টায় পয়েন্ট করছে। তারা আসলে কী বলতে চাইছে সেটা কি আমার পাঠকদের মধ্যে থেকে কেউ ধরতে পারল?

ভেক্টর গুলো আসলে আমাদের দৃষ্টি ঠিক সেই দিকে আকর্ষণ করছে, যেদিকে গাউসিয়ানটির মান সবচে’ বেশি। অর্থাৎ সিম্পলি বলা যায়, f(x,y)এর মান যেদিকে বেশি, \nabla f ভেক্টর ফিল্ডের ভেক্টর গুলো সেদিকে পয়েন্ট করে থাকবে। যেখানে ভেক্টর গুলোর মান যতবেশি হবে, সেখান থেকে বুঝতে পারব, ঐ জায়গা গুলো থেকে ঐ ডিরেকশনে এগিয়ে গেলেf(x,y)-এর মানও তত বেশি পাওয়া যাবে।

মূল গল্প হল, \nabla fআমাদেরকে ফাংশনের এক্সট্রিমা’র কথা বলে। একটা সার্ফেসে যদি কিছু লোকাল মিনিমা এবং কিছু লোকাল ম্যাক্সিমা থাকে, এবং সেই ফাংশনকে ধরে যদি আমরা গ্র্যাডিয়েন্ট অপারেটরের ভেতর ঢুকিয়ে দেই, তাহলে যে ভেক্টর ফিল্ড পাব, সেই ভেক্টর ফিল্ডের ভেক্টর’রা ঝাঁকেঝাঁকে মিনিমাগুলো থেকে “বেরিয়ে” আসবে, এবং ম্যাক্সিমা গুলোর দিকে “জড়” হতে চাবে।

আজ এখানেই থামা যাক।
সবার জন্য শুভ কামনা।
🙂

Galib Hassan
Author: Galib Hassan

Mischief Managed.. 😉

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/kada-mati/3480/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

10 comments

Skip to comment form

  1. যাদের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে তাদের জন্য – ত্রিমাত্রিক জ্যামিতি নিয়ে ঘাটাঘাটি করলেই বুঝতে পারবে স্লোপ জিনিস টা যেটা ছোটকালে শিখেছি, সেটা কলেজ ইউনিভার্সিটি তে এসে গ্র্যাডিয়েন্ট হয়ে যায়। কারণ তখন আমাদের one variable এর জায়গায় multivariable function নিয়ে কাজ করতে হয়। সেহেতু total derivative এর ব্যাপারটাও খাটে না এখানে। এজন্য Partial Derivatives এর সাহায্য নিতেই হয়।

    এখনও না বুঝলে উপরের surface টার দিকে তাকাও। মনে করো তুমি খাড়া ওই পাহাড়ের মতন জিনিসটায় উঠছ। যতই উপরে উঠবে, ততই কষ্ট হবে, কারণ তোমার নড়াচড়া করার জায়গা কমে জাচ্ছে [যারা ধরতে পেরেছো, h is approaching to 0, কেন লিখি এটা নিশ্চয় নতুনভাবে টের পাচ্ছ]। দেখো যে উপরের ভেক্টর ফিল্ডে, যতই ভেক্টরগুলো (০,০) এর দিকে আসছে, প্রতিটা ভেক্টরের নড়াচড়া করার ক্ষমতা চলে যাচ্ছে।

    কি হবে মুখস্থ করে, যদি দুনিয়াতে অঙ্কের মজাটাই না বুঝলাম? 🙂 একটু সর্দারি করলাম বলে ক্ষমা চাচ্ছি গালিব ভাই। আজকালকার মানুষ আপনার, আমার কারো লেখার মর্ম বুঝবে না। খালি কমপ্লেন করে বুঝি না বুঝি না।

    Summary: In 3D geometry, gradient gives us the value of the steepest (greatest) slope.

    Back in school and while doing 2D geometry, we learn the concept of rise over run. In 3D geometry, this concept becomes abstract and we need to deal with partial differentials.

  2. I happily appreciate your shordari, Awnon! 😀 Thanks for the complementary arguments about slopes.

    1. Thank you bhai 🙂

  3. ভাই অসাধারণ লিখেছেন। এরকম সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা সচরাচার পাওয়া যায় না। (Y) 🙂

    1. মন ভালো হয়ে গেল রফিক। 🙂

  4. অনেক ভাল লিখেছেন ভাইয়া !!! ধারণা পরিপূর্ণ হল 🙂

    1. থ্যাঙ্কিউ মারুফ, তবে আনন্দিত হয়োনা। Stay hungry. 🙂

  5. তুমি আবার বর্গমুলে ফিরে আসায় খুশি হলাম গালিব।

    1. এবং এসেই তোমার পাইথন জেম গুলো পড়া শুরু করেছি। একদিনে শেষ করার সময় পাচ্ছিনা। তবে সব পড়ে জানাব। 😀

      1. আরেহ, আমিতো ঐ সিরিজ আর চালিয়ে যাই নি। এমন পাঠক পেলে আবার যে লেখা শুরু করতে হয় . . .

মন্তব্য করুন