ভ্যাম্পায়ার নাম্বার- রক্তচোষার কবলে গণিত

না,  আসলে কোন সত্যিকারের কোন ভ্যাম্পায়ার টুইলাইট সাগা থেকে উদিত হয়ে গণিতকে আক্রমণ করতে আসেনি। আপনাদের চিন্তা করার কোন কারণ নেই। নির্ভয়ে এই লেখাটা পড়তে পারেন, আশ্বাস দিচ্ছি আপনার কম্পিউটার থেকে কোন রক্তচোষা এসে আপনার ঘাড়ে কামড় দিয়ে আপনার রক্ত চুষে খাবে না । তবে কেউ যদি নাম দেখে ভয় পেয়ে না পড়তে চান বা কারো যদি সত্যিই মনে হয় আপনার এই পোস্ট পড়ে আপিনি রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তাহলে লেখক হিসেবে আমি দায়ী থাকব না ।

আসা যাক এখন মূল প্রসঙ্গে, অনেকতো ফালতু কথা বললাম । ইংরেজিতে Vampire শব্দটির সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে তা আমরা সবাই জানি । ভ্যাম্পায়ার অর্থ রূপকথায় বর্ণিত রক্তচোষা ভূত। আবার যে ব্যক্তি মোসাহেবি করে কিংবা ভয় দেখিয়ে ক্রমাগত অন্যের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে, তাকে বলা হয় ভ্যাম্পায়ার। তাছাড়া যে নারী প্রেমের অভিনয় করে পুরুষের কাছ থেকে অর্থ বা সুবিধা আদায় করে তারও পরিচয় ভ্যাম্পায়ার নামে। রক্তচোষা বাদুড় বুঝাতেও ভ্যাম্পায়ার শব্দটির ব্যবহার হয়।

তবে Vampire Number পুরোপুরিই এসব থেকে ভিন্ন কিছু। এটি সংখ্যা ছাড়া কিছুই নয়, তবে সংখ্যাটি বিশেষ ধরণের একটা সংখ্যা।১৯৯৪ সালে Clifford A. Pickover নামক একজন আমেরিকান বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক কলামিস্ট ও গণিতজ্ঞ এই ভ্যাম্পায়ার নাম্বার গণিত বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। যে সংখ্যার রহস্যময় বৈশিষ্টের কারণে একে  Vampire Number বলা হয়ে থাকে ।

আমরা নিচের গুণফলগুলো একটু যদি দেখি,

১২৬০ = ২১ x ৬০,

১৩৯৫ = ১৫ x ৯৩,

১৪৩৫ = ৩৫ x ৪১,

১৫৩০ = ৩০ x ৫১,

১৮২৭ = ২১ x ৮৭,

২১৮৭ = ২৭ x ৮১,

৬৮৮০ = ৮০ x ৮৬

উপরে প্রতিটি সমান চিহ্নের বাম পাশের সংখ্যাগুলো অর্থাৎ ১২৬০, ১৩৯৫, ১৪৩৫, ১৫৩০, ১৮২৭, ২১৮৭ ও ৬৮৮০ এক-একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা। কারণ, এসব সংখ্যাকে সংশ্লিষ্ট সংখ্যার অঙ্কগুলোকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে পাওয়া অঙ্ক দিয়ে তৈরি দুটি সংখ্যার গুণফল আকারে প্রকাশ করা যায়।

লক্ষণীয়, কোনো অঙ্ককে বাদ দেয়া হয়নি, কিংবা কোনো অঙ্ককে দুইবার ব্যবহার করে নতুন সংখ্যা দুটির কোনোটি গঠন করা হয়নি।নতুন গঠিত সংখ্যা দুটিতে সংশ্লিষ্ট সংখ্যার সব অঙ্ক একবার করে থাকলেও সংখ্যাগুলোর স্থানের পরিবর্তন ওলটপালট হতে পারে । দেখুন, ১২৬০ এর বেলাতে ২১ কে ৬০ দিয়ে গুন করা হয়েছে। শুধুমাত্র ১২ কে পাল্টিয়ে ২১ করা হয়েছিল। এইভাবে বাকি সংখ্যাগুলিও করা হয়েছে।

আরো লক্ষণীয়, যে সংশ্লিষ্ট ভ্যাম্পায়ার সংখ্যাটি নেয়া হয়, তার অঙ্কগুলোকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে পাওয়া দুই ভাগের অঙ্কগুলো দিয়ে তৈরি সংখ্যা দুটির গুণফল এর সমান হতে হয়। অতএব ভ্যাম্পায়ার সংখ্যার অঙ্কসংখ্যা সব সময় জোড় হতে হবে। উপরে দেয়া সব সংখ্যা অর্থাৎ সমান চিহ্নের বামের সংখ্যাগুলোর প্রতিটিই চার অঙ্কের। তাহলে আমরা এভাবে ছয় অঙ্কের, আট অঙ্কের, দশ অঙ্কের কিংবা তার চেয়ে বেশি যেকোনো জোড়সংখ্যক অঙ্কের ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা তৈরি করতে পারি। যেমন, ১২৫৪৬০ একটি ৬ অঙ্কের ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা। কারণ , ১২৫৪৬০ = ২০৪ x ৬১৫ = ২৪৬ x ৫১০। আবার ১১৯৩০১৭০ হচ্ছে ৮ অঙ্কের একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা। কারণ, ১১৯৩০১৭০ = ১৩০১ x ৯১৭০ = ১৩১০ x ৯১০৭।

এভাবে আমরা আরো বেশিসংখ্যক জোড় অঙ্কের ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা খুঁজে পেতে পারি। তবে একথা যেনো কখনো ভুলে না যাই, কখনই কোনো বেজোড় সংখ্যক অঙ্কের সংখ্যাকে আমরা ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা বলব না।

ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা ভাগ করে যেই সকল সংখ্যা পাওয়া যায় যাদের গুনফল ওই প্রদত্ত সংখ্যার সমান হয় তাদের প্রত্যেককে ফ্যাং বলা হয়ে থাকে । উপরে আমরা দেখিয়েছি , ১২৬০ = ২১x ৬০।

এখানে ১২৬০ একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা, আর ২১ ও ৬০ হচ্ছে এর এক একটি ফ্যাং। অর্থাৎ এখানে ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা ১২৬০-এর একজোড়া ফ্যাং রয়েছে। লেখার শুরুর দিকে উল্লিখিত ৪ অঙ্কের প্রতিটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যারই রয়েছে একজোড়া করে ফ্যাং।

এভাবে এক একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যার কমপক্ষে দুইটি থেকে শুরু করে একাধিক জোড়া ফ্যাং থাকতে পারে। এখানে দুই জোড়া ফ্যাংওয়ালা কয়টি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা উল্লেখ করছি।

১২৫৪৬০ = ২০৪ x ৬১৫ = ২৪৬ x ৫১০,

১১৯৩০১৭০ = ১৩০১ x ৯১৭০ = ১৩১০ x ৯১০৭,

১২০৫৪০৬০ = ২০০৪ x ৬০১৫ = ২৪০৬ x ৫০১০।

এবার দেখব ৩ জোড়া ফ্যাংওয়ালা একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা।

১৩০৭৮২৬০ = ১৬২০ x ৮০৭৩ = ১৮৬৩ x ৭০২০ = ২০৭০ x ৬৩১৪

নিচের দুটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যার রয়েছে ৪ জোড়া করে ফ্যাং।

১৬৭৫৮২৪৩২৯০৮৮০ = ১৯৮২৭৩৬ x ৮৪৫২০৮০

= ২১২৩৮৫৬ x ৭৮৯০৪৮২

= ২৭৫১৮৪০ x ৬০৮৯৮৩২

= ২৮১৭৩৬০ x ৫৯৪৮২০৪

এবং,                              ১৮৭৬২৪৫৬৫৩৩০৪০ = ২৫৫৮০৬১ x ৭৩৩৪৬৪০

= ৩২৬১০৬০ x ৫৭৫৩৪৮৪

= ৩৫৮৭১৬৬ x ৫২৩০৪৪০

= ৩৬৩৭২৬০ x ৫১৫৮৪০৪

আবার ৫ জোড়া ফ্যাংবিশিষ্ট প্রথম আবিষ্কৃত  ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা হচ্ছে ২৪৯৫৯০১৭৩৪৮৬৫০।

কারণ,                             ২৪৯৫৯০১৭৩৪৮৬৫০ = ২৯৪৭০৫০ x ৮৪৬৯১৫৩

= ২৯৪৯৭০৫ x ৮৪৬১৫৩০

= ৪১২৫৮৭০ x ৬০৪৯৩৯৫

= ৪১২৯৫৮৭ x ৬০৪৩৯৫০

= ৪২৩০৭৬৫ x ৫৮৯৯৪১০

এবার এত কিছুর পর  আমরা আসলে চাচ্ছি  ভ্যাম্পায়ার সংখ্যার একটা সংজ্ঞা দাঁড় করাতে ৷ কারণ এত কিছুর পর যদি আপনাদের মগজ চোষার পড় আপনাদের যদি এই ভ্যাম্পায়ার সংখ্যার সংজ্ঞা না জানাই তা হইলে আপনাদের এই মস্তিষ্ক ক্ষয় বৃথা যাবে। চলুন আমরা ধরি,  V একটি ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা৷ তবে এই সংখ্যা V-এর অঙ্কসংখ্যা সবসময় জোড় সংখ্যা হবে৷ তাহলে ভ্যাম্পায়ার সংখ্যা,  V = X x Y হচ্ছে একটি জোড় অঙ্কবিশিষ্ট সংখ্যা, যার অঙ্কসংখ্যা n হলে, তা n/2 সংখ্যক অঙ্ক নিয়ে গঠিত সংখ্যা দুটির গুণফলের সমান হবে, তবে শর্ত থাকে যে সংখ্যা দুটি গঠিত হতে হবে V-এর অঙ্কগুলোকেই একবার করে নিয়ে৷ এখানে X ও Y এক-একটি ফ্যাং, আর X ও Y মিলে গড়ে তোলে একজোড়া ফ্যাং ৷ তবে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার কোনো ফ্যাংয়ের শুরুতে শূন্য অঙ্কটি বসানো যাবে না৷

বহুত ভ্যাম্পায়ার নিয়ে গবেষণা করা হল। সত্যি বলতে লিখতে গিয়ে নিজের কাছেই মনে হচ্ছিল যে,  কেউ আমার রক্ত চূষে খাচ্ছে । আপনাদের কারও যদি তাই মনে হয়ে হয়ে থাকে তবে সত্যি ক্ষমা চাচ্ছি । ভবিষ্যৎ- এ আশা করি এরকমটি আর করবোনা, আর যদি করিও তবে আশা করি কেউ রক্তশূন্যতায় ভূগবেননা।

জুলফিকার হায়দার জুনিয়র
Author: জুলফিকার হায়দার জুনিয়র

যত কষ্টই হোক চেষ্টা একটাই গণিতকে পড়ার বিষয় না ভেবে তা খেলার সরঞ্জাম হিসেবে ভাব তবেই গণিত মজা লাগবে নাহলে তা ওই চিরতার রসের মতই তিক্ত স্বাদের অখাদ্য বস্তুই মনে হবে

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/junayed/257/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

10 comments

Skip to comment form

  1. ভালা হইছে। ভাবসিলাম কি না কি, আমার ব্লাড গ্রুপ বি+, সস্তা, খাইয়া ফেলব।
    খাইল না, ব্লাড খাইল না, খাইল মগজ, খুব দামি।
    লস হইয়া গেল। ক্ষতিপূরণ দেও।
    মাইনসে ত লেখা শেষে কয় যে এইডা অইডা সমাধান করলে পুরষ্কার দিব।
    তুমি ত কিসুই দেওনের কথা কইলা না!
    তুমি কইরা কইলাম, এইডা নাকি বেটা ভার্সন !! বাইচা গেলাম,
    তয় ক্ষতিপূরন দেওনই লাগব, মগজ ছাড়া আমি পাগলা।

  2. হা হা ভাই মগজ খাওয়ার জন্যিতো এই পোস্ট রক্তের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার নাই

    আর ক্ষতিপূরণ ???????????????

  3. জুলফিকার হায়দার, ব্লাড রেকগনাইজেস দ্যা ব্লাড !

  4. অসাধারণ একটা জ্ঞানগর্ভ লেখা 😛

    1. ধন্যবাদ

      1. ভুতের মুখে রামনাম। এরকম লেখগুলা আজকাল লিখিস না কেনো?
        আর বরাবরের মতনই একটা প্রশ্ন, এটা কি কাজে লাগে? কারো রক্ত চোষার ইচ্ছা নাই, অন্য কোন অ্যাপ্লিকেশান থাকলে বল, ঘেটে দেখব। 😀

  5. “সত্যি বলতে কি লিখতে গিয়ে নিজের কাছেই মনে হচ্ছিল যে কেউ আমার রক্ত চূষে খাচ্ছে।”

    জটিল বিষয়, কিন্তু খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখা। যাই হোক, রক্তশূন্য লেখক এর কাছে আরও লেখার অপেক্ষায় আছি।

    1. asobe vai asobe

  6. পড়তে পড়তে মাথা রক্তশুন্য হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। দারুণ লেখা !!

    1. jak nijeke vampire vampire lagtese 😛 😛

মন্তব্য করুন