সত্যসন্ধানী অ্যামফোস এবং একজন বিজ্ঞ ঋষির গল্প

সম্রাটের প্রধান কারিগর ছিল এম-টেপ, অসাধারণ কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি যার হাতে ছিল একজন শিল্পীর ছোঁয়া । দক্ষতা এবং শৈল্পিক ছোয়া দিয়ে তিনি তৈরি করতেন অসাধারণ সব তৈজসপত্র, সোনার অলংকার এবং আরও অনেক কিছু। এক রাতে, এম-টেপ নিজ কুঠুরির গদিতে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কিন্তু দিনভর হারভাঙ্গা খাটুনির পরও, কিছুতেই তার ঘুম আসছিল না। কেমন যেন এক দুর্বোধ্য অনুভূতি তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। আধো ঘুম, আধো জাগরণের খেলার মাঝে কখন যে তার চোখগুলো ঝিমিয়ে পরেছিল, ঠিক নেই।

হটাত করে এম-টেপ এর ঘুম ভেঙ্গে যায়। চারিদিকে আলো, সকাল কি তাহলে হয়ে এল? উহু, তাতো হবার নয়। শরীরের ঘড়ি যদি ঠিক হয়ে থাকে তাহলে এখনও অনেক রাত, ভোর হতে অনেক দেরি।

ধড়মড় করে উঠে দাড়ালেন তিনি। কোথায় জানি, কি একটা গণ্ডগোল আছে। ঘরের উত্তর পাশে সমুদ্রের গর্জন শোনা যাচ্ছে, সেই উত্তরদিক থেকেই ভোরের লালচে আলো জানালা দিয়ে উকি দিচ্ছে। কিন্তু, এরকম তো হবার কথা নয়।

জানালার কাছে এগিয়ে গিয়ে বাইরে দৃষ্টি দিতেই মুহুর্তের জন্য থমকে যেতে হল, সূর্য আগে কখনও উত্তর দিক থেকে উদয় হয়নি। পৃথিবীর আদিমতম সত্য আজ কি তাহলে মিথ্যায় পরিণত হল?
বিমূড়ভাবে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর, এম-টেপ বুঝতে পারলেন উত্তরের এই চোখ জুরিয়ে দেয়া লাল আভা, সূর্যোদয়ের নয়। বরং এটি ছিল সমুদ্রতীর ঘেষে লম্বভাবে স্বর্গলোকের দিক থেকে উঠে আশা দূরবর্তী কোন আলোকরশ্মি।

কিছুক্ষনের মাঝেই, আলোকরশ্মিটি একটি কাল মেঘে ঢাকা পরলে, একটি নতুন আকৃতির অবয়ব দেখা দিল, যেন নরক থেকে বের হয়ে আশা বিশাল কোন ছাতা যার দণ্ডটি লাল আলো এবং মাথার শিরোবস্ত্রটি কাল মেঘের কাপড়ে ঢাকা। ঠিক যেন নরকেরই কোন অপদেবতা তার কাল ছায়া বিস্তারে ব্যস্ত। শেষ রাতের আকাশের নক্ষত্রগুলোকে একে একে অদৃশ্য করে দিচ্ছিল তার অশুভ ছায়ার আবরণে।
আকস্মিক ঘুম থেকে উঠে আশা এম-টেপ ঠিক যেন পাথরের মুর্তির মত রাতের এই বিশ্ময়কর মুহূর্তে আটকে পরে গিয়েছিল। আল-আধারির আপাত অশুভ এই সুন্দর্য কিছুক্ষনের জন্য তাকে একটি ঘোরের মধ্যে নিয়ে গিয়েছিল।

ঠিক তখনই, বাতাসের ঝাপটায় সেই ভয়ানক মেঘের ছায়া পুবদিকে সরে যেতে লাগলো। হয়তোবা মুহুরতের জন্য হলেও, এম-টেপ সম্মোহনের রেশ কাটিয়ে উঠতে লাগলেন। ঘোর থেকে একটু বেরিয়ে এসেই এম-টেপের আশেপাশের অন্যান্য ঘটনা বোধগম্য হতে লাগলো।
পৃথিবীর তলদেশ থেকে কেমন জানি একটি মৃদু কাঁপুনির সাথে অলুক্ষুনে গুড় গুড় শব্দ ভেসে আসতে লাগলো।

তিনি অবাক হয়ে চিন্তা করতে লাগলেন, এসব কিছু কি তাহলে স্রষ্টার কোন ক্রোধউন্মাদনা? যদি হয়েই থাকে তাহলে এই ক্রোধের উৎস কি? স্রষ্টার ক্রোধের এই বিশালত্বের সাক্ষী হবার অভিজ্ঞতা একদমই নতুন ছিল এম-টেপ এর কাছে।
তার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, এসব কিছুর জন্য নিজেকে দোষারূপ করা। এসবকিছু কি তার কোন ভুলসর্বস্ব পেয়ালা তৈরি করার কারনে হচ্ছে? নাকি, নাকি কোন স্রষ্টা তার কোন কাজে অসন্তুষ্ট হয়েছেন? অসহিস্নু অযৌতিক তর্ক কিছুক্ষণ মগ্ন করে রাখে তার চিন্তা-ভাবনা ।

কিন্তু, কিছুক্ষনের মাঝেই নিজেই নিজের ভুল ধরতে পারেন তিনি।
যেই বিশাল বিপর্যয় দৃশ্য তিনি এইমাত্র প্রত্যক্ষদর্শন করেছেন তা কখনই এত সাধারন কোন ঘটনার কারনে ঘটতে পারে না, তার মত এতটা সাধারন কোন ব্যাক্তির ভুল বাবদ শাস্তিও কখনো এত ব্যাপক পরিসরে হতে পারে না। সাথে সাথে, এও সত্যি যে নিশ্চয়ই কোন ঘটনার কারনে স্রস্টাদের প্রাসাদে এই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু, কি সেই কারণ?

এই প্রশ্নটুকুর উত্তর পেলেই নিশ্চয়ই সকল ঋষি-মনিষী এক হয়ে স্রস্টাদের সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। হুম, এটাই সঠিক। দেবতাগন কোন কারনে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং এখন তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। প্রয়োজনে, স্রস্টাদের উদ্দেশে পশু বলি দিতে হবে।
তাতেও যদি যথেষ্ট না হয় তাহলে প্রয়োজনে মানুষের বলি দিয়ে হলেও তাদের ক্রোধমুক্তি অর্জন করতে হবে।
খাপছাড়া চিন্তা-ভাবনায় মক্ত এম-টেপ হঠাত এক বিস্ফোরণ এবং দমকা হাওয়ার আঘাতে ছিটকে গিয়ে পিছনের দেয়ালে বাড়ি খেলেন।
প্রচণ্ড শব্দে মুহূর্তের জন্য কানে তালা লেগে গেল। ধীরে ধীরে একটু সৎবিত ফিরে পেতেই বুঝতে পারলেন প্রচণ্ড দমকা হাওয়া পুরো ঘরতিকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। তাকে সাজানো সযত্নে তৈরি করা কারুকাজ সম্বলিত পাত্রগুলোর অধিকাংশই ভেঙ্গে একাধিক টুকরোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হতবাক হয়ে এম-টেপ উঠে দারালেন, আস্তে আস্তে খুব সাবধানতার সাথে পুনরায় জানালের ধারে এগিয়ে গেলেন।
কি হচ্ছে…?
কেন হচ্ছে…?
কি এমন ক্রোধে স্রস্টারা সকলে এই সাগরের ধারে উম্মাদনায় মেতে উঠেছে।

এলোমেলো চিন্তার মাঝেই দেখা যায়, দিগন্ত রেখা থেকে উৎপন্ন হয়ে আশা এক বিপুল জলরাশির। কাছে আসতে আসতে শেই প্রকান্ড ঢেউ এর আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে, হিংস্র দানবের এসে আঘাত করে তীরে, মুহূর্তেই সবকিছু ডুবে যায় বিপুল জলরাশির তলে, এক পলকেই দানবের হ্রিংস্রতায় তীরে থাকা জাহাজগুলো শুকনো পাটকাঠির মত ভেঙ্গে যায়, ঘরবাড়ি সব ডুবে যায় তলদেশে, উপড়ে যেতে থাকা বিশালাকার সব গাছ। ভেসে থাকা সব অবশিষ্টাংশ ঘূর্ণি খেতে খেতে পাহাড়ের পাদদেশে এসে জমা হয়।

জাদুমন্ত্রে সম্মোহিত ব্যাক্তির মত এম-টেপ প্রকৃতির এই নিষ্ঠুর খেলা দেখতে থাকে। তার ছোট কুঠুরিঘর, পাহাড়ের ওপরে রাজবাড়ীর কাছেই অবস্থিত হবার কারনে বেঁচে যায় এই ভয়ানক জলোচ্ছ্বাস থেকে।
কিন্তু প্রচণ্ড ভয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এম-টেপ, এই ভয় শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নয়। সে বুঝতে পারে, এই দুর্যোগ থেকে মুক্তি পেতে অনেক প্রান বিসর্জন দেয়া হবে, যেখানে সাধারন ক্রীতদাসের প্রান কখনই এ সময় স্রস্টাদের তুষ্টিলাভে যথেষ্ট হবে না। বিসর্জন হতে হবে বিশেষ কিছুর।
প্রধান-কারিগর এর হৃদয় শিওরে উঠে ভয়ে, চিন্তায় চলে আসে নিজের সন্তানদের কথা, তাদের সদ্যজাতপ্রাপ্ত সন্তানের কথা।

এম-টেপ এর ভয় সত্য করে আসলেই বলি দেয়ার উৎসব শুরু হয়। উঁচুবংশের একজন কমবয়সী মেয়ে এবং কিছু যুবকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটস্থ উপাসনালয়ে। তাদের উৎসব শেষ হবার আগেই এই ভয়ানক বিপর্যয় পুনরায় আঘাত হানে। উপাসনালয়ের মধ্যে সুন্দর পোশাক পড়ে বসে থাকা পুরোহিতগন এবং বলি দেবার জন্য ধরে নিয়ে আশা সকলের মৃত্যু ঘটে উপাসনালয়ের ছাদ ধসে পড়ে। অর্ধেক উপাসনা থাকা অবস্থাতেই তারা জীবন্ত কবরের মাঝে হারিয়ে যায় সারে তিন সহস্রাব্দের জন্য।

বিপর্যয়টি ছিল ভয়ানক, দীর্ঘস্থায়ী। দ্বীপটির বিভিন্ন অংশে মানুষজন বেঁচে থাকলেও মুল প্রাসাদটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। ঝড় থেমে যায় একসময়, ধ্বসে পড়া শহরের কঙ্কালের ওপরেই গড়ে উঠতে থাকে নতুন শহর। প্রাসাদটিও মাথা উঁচু করে দাড়াতে থাকে নতুন করে, কিন্তু স্থির হতে পারে না শুধু এম-টেপ। নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে যায়, যেভাবেই হোক এই দ্বীপ ছেড়ে অন্য কথাও পাড়ি জমাতে হবে। তার চিন্তাভাবনার জগত এই এক রাতেই তাড়িত হয়েছে প্রচন্ডভাবে, বদলে গেছে তার চেনা-জগত।

তার চেনা জগত ছিল হাজার বছরের সুখ, শান্তি ও প্রবৃদ্ধি নিয়ে গড়ে উঠা, যেখানে রাজত্ব চলত স্থল-দেবীর। শিল্পসাহিত্যে ছিল কাজ করার দুর্বার স্বাধীনতা। পার্শবর্তী শহরগুলোর সাথে বাণিজ্যের সুসম্পর্ক ছিল । সুখী ছিল মানুষজন, যেখানে যুদ্ধ অথবা আত্মরক্ষার গুরুত্ব ছিল সর্বাধিক কম। কিন্তু স্থল-দেবী কে বিতারিত করে নতুন শক্তির আগমন ঘটেছে, নিজ চোখে সবকিছুর সাক্ষী হতে হয়েছে প্রধান কারিগর কে। সবকিছু দেখার পরেও সে কিভাবে থেকে যায় সেই দ্বীপে।

এম-টেপ এর দৃঢ়-সংকল্প তাকে সেখান থেকে বের করে পরিবারসমেত নতুন পথে যাত্রা করতে সাহায্য করে। তার সর্বকনিস্ট সন্তান, যে চিল একজন দক্ষ কাঠমিস্ত্রি এবং অভিজ্ঞ নাবিক, তার হাতে তৈরি একটি জাহাজে করে তারা বেরিয়ে পড়ে নতুন খোঁজে, সময় সুযোগ মত শান্ত সাগরের বুকের ওপর চড়ে তারা পাড়ি জমায়।

এক শান্ত রাতে, এম-টেপ তার পৌপুত্র কে কোলে নিয়ে তাঁরা গণনা শেখানোয় মক্ত ছিলেন, ঠিক তখন একটি অসাধারণ বিষয় তার মনোযোগ কেড়ে নেয়। একজন কারিগর এর তীক্ষ্ণ চোখ এর দৃষ্টিতে তিনি আকাশ দেখতে থাকেন, বিশ্ময়ে আবিস্কার করেন আকাশের প্রতিটি জলজলে তাঁরা ঠিক তাদের আগের অবস্থানেই আছে, পৃথিবী লন্ডভন্ড করে দেয়া মহা প্রলয় তাঁরার জগতে বিন্দুমাত্র আঁচর কাটতে পারেনি।
এম-টেপের চোখে আছে একজন শিল্পীর দক্ষতা, আকাশে তারার নকশা তার খুব ভালো করেই চেনা। কিন্তু, আকাশে তারার কোন পরিবর্তন ধরতে পারলেন না তিনি, ধরতে পারলেন না চাদের গায়ে নতুন কোন ভাজ। প্রলয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া শহরের উপর আকাশে তাহলে কি সেই মহাধংশের চিহ্নমাত্র নেই? তারা এখনও আছে তাদের অবস্থানে, বিশৃঙ্খলতার কোন চিহ্ন তাদের মাঝে নেই।

তার মাথায় চিন্তা খেলা করতে লাগল। উপর সেই স্বর্গলোক থেকে অসীম ক্ষমতার অধিকারী দেব-দেবীদের ইচ্ছার দাস ছোট্ট এই শহরের মানুষেরা। তাদের খেয়াল মতই সব হচ্ছে, তাদের খুশি রাখতেই মানুশগুলো তাড়িত হচ্ছে। তারপরও কেন মাঝে মাঝে তারা ক্ষোভে ফেটে পরে? রাগ-ঘৃণা-বিদ্বেষ সব কিছু নিয়ে আছড়ে পরে এই জনপদের ওপর? তীব্র নিষ্ঠুরতায় সব তছনছ করে দেয়?
এম-টেপ চিন্তা করতে থাকে, কিন্তু কোন উত্তর খুজে পায় না। প্রশ্নগুলো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, সে একি প্রশ্ন ছুরে দেয় নিজের নাতির কাছে, আলোচনা করে, কিন্তু দিনশেষে উত্তরগুলো অজানাই থেকে যায়, অবোধগম্য থেকে যায় স্রস্টাদের আচরন।
শতাব্দী পেরিয়ে যায়, সহস্রাব্দ শেষ হয়ে আসে, কিন্তু তারপরও প্রশ্নগুলো থেকে যায় অনুত্তরিত।

শতাব্দী পেরিয়ে যায়,

সহস্রাব্দ শেষ হয়ে আসে,

কিন্তু তারপরও প্রশ্নগুলো থেকে যায় অনুত্তরিত।

কারূশিল্পী অ্যামফোস এই শহরেই বসবাস করে, যেখানে থাকতেন তার বাবা। যেখানে থাকতেন তার দাদা এবং তার বাবা। উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত দক্ষতা এবং শৈল্পিক ছোয়া দিয়ে তিনি তৈরি করেন অসাধারণ সব তৈজসপত্র, সোনার অলংকার এবং আরও অনেক কিছু। এই কাজ তার পরিবারের জীবিকার পরিচয় বহন করে, সহস্র বছরেরও অধিক সময় ধরে চলে আসা পারিবারিক রীতি তুলে ধরে। সেই রীতি যা এম-টেপ শুরু করেছিলেন এগারশ বছর আগে এই শহরে বসতি স্থাপন করে। প্রজন্মর পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এই রীতি। কিন্তু সুধু এই দক্ষতাই নয়, এম-টেপকে তাড়া করে ফেরা প্রশ্নগুলোও প্রতিটি প্রজন্মের হাত ধরে বেঁচে আছে। একই চিন্তা তাড়া করে বেড়ায় অ্যামফোস এর বিবককে, জিজ্ঞাসু করে তোলে উত্তর খুজে না পাওয়া প্রতিটা মনকে।

অ্যামফোস গাছ-পালার গঠন লক্ষ্য করে, পোকামাকড় এবং অন্যান্য প্রাণীর উপর মনোনিবেশ করে, নতুন কিছু শেখার চেস্টা চালিয়ে যায়। স্ফটিক-স্বচ্ছ পাথর নিয়ে গবেষনা করে। একজন শিল্পীর তীব্র পর্যবেক্ষন ক্ষমতা তাকে সাহায্য করে শিখতে। কৃষিক্ষেত্রে সে আগ্রহ খুজে পায় এবং মুগ্ধ হয় গমের চারার বিকাশ দেখে, মুগ্ধ হয় শস্য থেকে অন্যান্য সব গাছের বেড়ে ওঠা দেখে। কিন্তু কিছুতেই সেই একই প্রশ্নের উত্তর খুজে পায় না, “কেন?, কিভাবে?” অসন্তুস্ট মন নিয়ে সে চিন্তা চালিয়ে যায়। তার বিশ্বাস, প্রকৃতির এই সব গঠন , এই ছাঁচে গড়া পৃথিবীর সব কিছুর পিছনে জানার মত আরও অনেক কিছু আছে।

একরাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে অ্যামফোস তার চিন্তার বাঁধন খুলে দেয়, আকাশের নক্ষত্ররাজীর এই অসাধারণ নকশা দেখে ভাবতে থাকে এদের উৎস কোথায়?
কিভাবে এই বিশাল ভুমি, সাগর, এই আকাশ টিকে আছে?
এদের এই সুন্দর শৈল্পিক বিস্তৃতির পেছনে কারন কি?
সবকিছুর পিছনে সার্বজনীন কোন নিয়ম কি আছে যা সবকিছুকে এত চমৎকার ভাবে বিন্যস্ত করে রেখেছে?
প্রকৃতি কি তাহলে স্পষ্ট কিছু নিয়ম বেধে দিয়েছে যা কিনা বস্তুত সব কিছুকে করেছে শৃঙ্খল?

অ্যামফোস তার চিন্তা চালিয়ে যায়। প্রকৃতির কাছে ভিত্তিস্বরূপ স্পষ্ট কিছু নিয়মের অস্তিত্ব আছে, এই বিশ্বাস তার দৃঢ় হতে থাকে। একমাত্র প্রকৃতির এইসকল বিধির মাঝেই নিহিত আছে সব প্রশ্নের উত্তর।
অ্যামফোস বুঝতে পারে, শুধু চিন্তা করেই সবকিছু জানা যাবে না, সেই সকল নিয়ম-কানুন আবিস্কার করা যাবে না, নিশ্চয়ই কোন নিয়ম আছে আবিস্কারের? নিশ্চয়ই কোন সঠিক পদ্ধতি আছে এই তার কৌতুহল নিরাময় করার? নিশ্চয়ই সঠিক পদ্ধতি আছে চিন্তা করার,গবেষনা করার।

ঘটনাক্রমে, অ্যামফোস পৃথিবীর অপর প্রান্তে বসবাসরত একজন ঋষির সন্ধান পায়, যিনি কিনা অ্যামফোস এর মতই একইরকম চিন্তার বেড়াজালে জর্জরিত। একই প্রশ্নসমূহের উত্তর খুজতে মগ্ন। সেই ঋষির মতে –

“উত্তর খুজতে গিয়ে একজন মানুষের কখনই অতিতের শিক্ষা এবং ঐতিহ্যের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। সুনিশ্চিত হবার জন্য প্রয়োজন যথাযথ সিদ্ধান্ত যা কিনা গঠিত হবে অপরিবর্তনীয় এবং প্রশ্নাতীত যুক্তির উপর দাড়িয়ে, যেখানে প্রতিটি যুক্তির যথার্থতা নির্ধারিত হবে গণিতের সাহায্যে, সংখ্যা ধারণার বাস্তব জ্যামিতিক রুপ যা সমর্থন করবে ”

one could not rely on the teachings and traditions of the past.
To be certain of one’s beliefs, it was necessary to form precise conclusions by the use of unchallengeable reason.
The nature of this precision had to be mathematical—ultimately dependent on the notion of number and its application to geometric forms.

দিনশেষে, পৃথিবীর সবকিছুর গঠন এবং আচরণ, হয় ‘সংখ্যা এবং জ্যামিতি’ নয়ত ‘পুরাণশাস্ত্র এবং অন্ধবিশ্বাস’ দ্বারা চালিত হচ্ছে।

প্রধান কারিগর এম-টেপ সত্যের খোঁজে যা আরও সহস্র বছর আগেই করেছিলেন, অ্যামফোস পুনরায় তাই করে বসলেন। সাগর পথে বেড়িয়ে পরলেন জ্ঞানের সন্ধানে। নিজের পথ খুজে নিলেন ক্রোটন (city of Croton) শহরের দিকে, যেখানে সেই ঋষি তার ৫৭১ জন বিজ্ঞ পুরুষ এবং ২৮ জন বিজ্ঞ নারীর সমন্বয়ে একটি গোষ্ঠী গঠন করেছেন এবং খোঁজ করে চলেছেন সত্যের। কিছুদিন বাদে অ্যামফোস সমমনা সেই গোষ্ঠীর একজন সদস্য হিশেবে সাদরে গৃহীত হন।

সত্যসন্ধানী এই সকল মানুষকে এক করা সেই ঋষির নাম ছিল ‘ পিথাগোরাস ’।

Translation from – The Road to Reality

আরিফিন রহমান

Permanent link to this article: https://www.borgomul.com/arifin/3507/


মন্তব্য করুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে

5 comments

Skip to comment form

  1. দোস্ত ভাল লাগছে লেখাটা।

    1. ধইন্যবাদ ধইন্যবাদ ! 🙂

  2. ভালো লাগলো। carry on……want more like it …

    1. ভাই, পরীক্ষা শুরু হচ্ছে কিছুদিন এর মাঝেই। পরীক্ষা শেষ করে নিয়মিত লিখার ইচ্ছা আছে।
      আর আপনার নতুন লিখা কবে দেখতে পাবো? বর্গাচাষীদের খড়া চলছে কিন্তু , আপনাকে প্রয়োজন 🙂

      1. কী নিয়ে লিখবো বুঝতেছি না। বুঝতে পারলেই আবার লেখা শুরু করব ।

মন্তব্য করুন